আফগানিস্তানে দীর্ঘ মার্কিন উপস্থিতির নেপথ্যের দুই সঞ্চালক

আফগান বিপর্যয়কে ধরা হচ্ছে অর্ধশতকের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় ভূরাজনৈতিক পরাজয় হিসেবে। তালেবানদের উত্খাতে যুদ্ধ শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত সেই তালেবানদের হাতেই আফগানিস্তানের ক্ষমতা ছেড়ে আসতে হচ্ছে ওয়াশিংটনে। যদিও ওয়াশিংটনের পক্ষে এ বিপর্যয় খুব সহজেই এড়ানো সম্ভব ছিল বলে অভিমত পর্যবেক্ষকদের। তারা বলছেন, অতীতে পরিস্থিতি অনুকূল থাকাকালেই কাবুল থেকে বিজয়ীর বেশে ফেরার সুযোগ ছিল। কিন্তু আফগানিস্তানে অবস্থান দীর্ঘায়িত করতে গিয়ে স্থানীয়দের কাছে তারা পরিণত হয়েছে দখলদারে। কাবুলের সরকার হয়ে পড়েছে জনবিচ্ছিন্ন। এর বিপরীতে পায়ের তলায় মাটি ফিরে পেয়েছে তালেবানরা। সুযোগ পেয়েছে প্রবল হয়ে ওঠার।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের দীর্ঘস্থায়ী দখলদারিত্বের কারণেই সেখানে বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে ওয়াশিংটন। অন্যদিকে এ দখল দীর্ঘায়িত হওয়ার জন্য মূলত দায়ী করা হচ্ছে সাবেক সিআইএ প্রধান লিওন প্যানেটা ও সাবেক মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা লে. জেনারেল এইচআর ম্যাকমাস্টারসহ হোয়াইট হাউজ ও পেন্টাগনের সাবেক কয়েক শীর্ষ কর্মকর্তাকে।

বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত বিভিন্ন নথিতে দেখা যাচ্ছে, আফগানিস্তানের প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে হোয়াইট হাউজের সবসময়ই পূর্ণ ধারণা ছিল। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে মার্কিন শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা ভালোভাবেই জানতেন, মার্কিন সৈন্যদের উপস্থিতি আফগানিস্তানের গোটা প্রশাসন যন্ত্রকে পরমুখাপেক্ষী করে তুলেছিল। এর ধারাবাহিকতায় সরকারের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছিল দুর্নীতি। এ দুর্নীতির মাত্রা বাড়তে বাড়তে কাবুল সরকারের প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার পুরোটাকেই ধসিয়ে দিয়েছিল। একই সঙ্গে এ দুর্নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার কারণে নির্বল হয়ে পড়েছিল আফগান সেনাবাহিনীও। এর পরও তারা আফগানিস্তানে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পথকেই বেছে নিয়েছে।

মার্কিন সেনা প্রত্যাহার কার্যক্রম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আফগানিস্তানের রূঢ় এ বাস্তবতা প্রত্যক্ষ হয়ে ওঠে। মার্কিন ও ন্যাটো সৈন্যদের সমর্থন হারানোর পর তালেবানদের হামলার মুখে দাঁড়াতেই পারেনি আফগান সেনাবাহিনী। তালেবানদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে যান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি। এর সবই ঘটেছে মার্কিন ও ন্যাটো সৈন্যদের উপস্থিতিতে। বিষয়টি হতাশ করে তুলেছে মার্কিন নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের। আফগানিস্তানে মার্কিন বিপর্যয়ের জন্য লিওন প্যানেটা ও এইচআর ম্যাকমাস্টারের মতো হোয়াইট হাউজ ও পেন্টাগনের শীর্ষ কর্তাদের দায়ী করছেন তারা।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা লে. কর্নেল (অব.) ড্যানিয়েল এল ড্যাভিস এ দুজনকে বর্ণনা করেছেন ‘যুদ্ধে আসক্ত’ হিসেবে। বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানে তিনি লিখেছেন, ২০১৬ সালে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসার পর পরই ডোনাল্ড ট্রাম্পের একমাত্র লক্ষ্য ছিল আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে আনা। ওই সময় ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তানে ভিয়েতনামের পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছিলেন। এছাড়া আফগান যুদ্ধের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার কোনো সম্পর্কও খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি। সে সময় ট্রাম্পের নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে প্রেসিডেন্টের এ আকাঙ্ক্ষা পূরণের দায়িত্ব ছিল এইচআর ম্যাকমাস্টারের। যদিও এ নিয়ে ম্যাকমাস্টারের উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন।

ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত এক নিবন্ধে দেখা যাচ্ছে, ওই সময় ম্যাকমাস্টার প্রেসিডেন্টের ওপর প্রভাব খাটিয়ে গোটা বিষয়টিকেই উল্টে দেন। তার ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেমস ম্যাটিসের পরামর্শ ও চাপে ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের বদলে সেখানে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি আরো জোরালো করে তোলেন। ২০১৭ সালের আগস্টে আফগানিস্তানে নতুন করে আরো তিন হাজার সৈন্য পাঠান ট্রাম্প। এ বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও পরবর্তী সময়ে জানিয়েছেন, তার প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল সৈন্য প্রত্যাহার করে আনা।

বর্তমানে জো বাইডেনের সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের কট্টর সমালোচকদের একজন এইচআর ম্যাকমাস্টার। বিভিন্ন মাধ্যমে এখনো এ নিয়ে বক্তব্য দিয়ে চলেছেন তিনি।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ওই সময় সৈন্য প্রত্যাহার করে নিলে যুক্তরাষ্ট্রকে বর্তমান বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হতো না। ওই সময় তালেবানদের হাতে আফগানিস্তানের মাত্র ৬ শতাংশ এলাকার দখল ছিল। তাদের হামলার মুখে আফগান সরকার ও সামরিক বাহিনীর দ্রুত ভেঙে পড়ার আশঙ্কাও ছিল কম। সেক্ষেত্রে বর্তমানের বিপর্যয়কর সৈন্য প্রত্যাহারের বদলে আফগানিস্তান থেকে সসম্মানেই বেরিয়ে আসতে পারত ওয়াশিংটন।

এইচআর ম্যাকমাস্টারের মতো বাইডেনের সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের আরেক কট্টর সমালোচক লিওন প্যানেটা। তার ভাষ্যমতে, আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের কাজ এখনো শেষ হয়নি। আল-কায়েদার পুনরুত্থানের পর ওয়াশিংটনকে হয়তো আফগানিস্তানে ফিরে যেতে হতে পারে।
এই বিভাগের আরও খবর
যে কারণে পাকিস্তানকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের

যে কারণে পাকিস্তানকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের

জনকণ্ঠ
ইউক্রেনের ৫০ ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি রাশিয়ার

ইউক্রেনের ৫০ ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি রাশিয়ার

ভোরের কাগজ
আন্তর্জাতিক নির্দেশিকাকে লঙ্ঘন করে শিশুখাদ্যে চিনি মেশাচ্ছে নেসলে

আন্তর্জাতিক নির্দেশিকাকে লঙ্ঘন করে শিশুখাদ্যে চিনি মেশাচ্ছে নেসলে

মানবজমিন
ইরানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো

ইরানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো

কালের কণ্ঠ
রেকর্ড বৃষ্টিপাতে বিপর্যস্ত আমিরাত, ওমানে ভারি বর্ষণে নিহত ১৮

রেকর্ড বৃষ্টিপাতে বিপর্যস্ত আমিরাত, ওমানে ভারি বর্ষণে নিহত ১৮

যুগান্তর
ইসরাইলে হামলার পর ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ'র নতুন নিষেধাজ্ঞা, কী বলছে রাশিয়া

ইসরাইলে হামলার পর ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ'র নতুন নিষেধাজ্ঞা, কী বলছে রাশিয়া

নয়া দিগন্ত
ট্রেন্ডিং
  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া

  • অবিশ্বাস্য কীর্তিতে হাজার রানের ক্লাবে এনামুল বিজয়