আফগান বিপর্যয়ে মধ্যপ্রাচ্যেও বড় পরীক্ষার সম্মুখীন যুক্তরাষ্ট্র

দুই দশকের নিষ্ফল যুদ্ধ চালানোর পর আফগানিস্তান থেকে নিজ সৈন্যদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি পেরিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের অশান্ত ভূরাজনীতিতেও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব দেখতে পাচ্ছেন আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতির পর্যবেক্ষকরা। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে নানা হিসাবনিকাশও শুরু হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, পেন্টাগনের আফগান ব্যর্থতা এখন মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার প্রতিটি দেশের জন্যই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।

দুই দশক ধরে লাখ কোটি ডলার ব্যয়ের পরেও আফগানিস্তান থেকে এক প্রকার খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রকে। দেশটির আফগান বিপর্যয়কে দেখা হচ্ছে ওয়াশিংটনের ৪৬ বছর আগেকার ভিয়েতনাম দুঃস্বপ্নের পুনরাবৃত্তি হিসেবে। ওই সময়ে উত্তর ভিয়েতনামিদের হাতে সায়গনের পতনের পর গোটা ইন্দো-চায়না অঞ্চল (লাওস, কম্বোডিয়া, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার ও ভিয়েতনাম) অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে সে সময় বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল ওয়াশিংটনকে। বর্তমানে সে একই পরিস্থিতি দেখা দেয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে অশান্ত অঞ্চলটিতে ইন্দো-চায়না অঞ্চলের চেয়েও বড় পরীক্ষা দিতে হতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ওয়াশিংটনের অঙ্গীকার পূরণের সক্ষমতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে আফগানিস্তানের ঘটনাবলি। মধ্যপ্রাচ্যেও এখন মার্কিন উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি বাড়ার যথেষ্ট সুযোগ তৈরি হয়েছে। ওয়াশিংটন খুব সহজেই ইন্দো-চায়না অঞ্চলের পরিস্থিতি সামাল দিতে পেরেছিল। চীনের উত্থানের আগ পর্যন্ত ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি ও প্রভাব—দুই-ই ছিল প্রশ্নাতীত। এমনকি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নও এ অঞ্চলে (ভিয়েতনাম ছাড়া) যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রভাবশালী ছিল না। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত। সেখানকার ভূরাজনীতিতে ওয়াশিংটনের আধিপত্যে এরই মধ্যে ভাগ বসিয়েছে চীন ও রাশিয়া। এছাড়া এ অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় সক্রিয় হয়ে উঠছে তুরস্ক ও ইরানও।

ক্ষমতায় আসার আগেই আফগানিস্তানের প্রতিবেশী ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি পুনর্বহালের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তবে তার সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নকে কঠিন করে তুলেছে ইরানের সাম্প্রতিক নির্বাচনে কট্টরপন্থী ইব্রাহিম রাইসির জয়লাভ। ওয়াশিংটনের জন্য পরিস্থিতিকে আরো বড় সমস্যাসংকুল করে তুলেছে তালেবানদের কাবুল বিজয়। ফলে ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দরকষাকষির সক্ষমতাও অনেকটাই কমেছে বলে মনে করা হচ্ছে। আফগানিস্তান বিপর্যয়ের কারণে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র এখন অনেকটাই ব্যাকফুটে। অন্যদিকে এখন এ অঞ্চলের ভূরাজনীতিতে আরো প্রবল হয়ে উঠেছে ইরানের দুই মিত্র দেশ চীন ও রাশিয়া। সব মিলিয়ে পারমাণবিক চুক্তি পুনর্বহাল ইস্যুতে ইরানের জন্য পরিস্থিতি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি অনুকূলে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ধারণা করা হচ্ছে, কট্টরপন্থী রাইসি প্রশাসন ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে আরো গতিশীল করে তুলতে পারে। এছাড়া আলোচনায় ইরানের অনুকূলে নতুন কিছু শর্তও যোগ করা হতে পারে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় খোদ বাইডেন প্রশাসনের কূটনীতিকরাই এখন পারমাণবিক চুক্তি পুনর্বহালের বিষয়ে খুব একটা আশাবাদ প্রকাশ করতে পারছেন না।

সেক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনকে গোটা মধ্যপ্রাচ্য নিয়েই নতুন করে ভাবতে হতে পারে বলে বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে। বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন কূটনৈতিক তত্পরতার মূল ভিত্তি হলো বারাক ওবামার আমলে গৃহীত জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ)। এ পরিকল্পনার বড় একটি অংশজুড়ে রয়েছে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি পুনর্বহাল। এর মধ্য দিয়েই ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে পরিত্যক্ত এ নীতিমালাকে পুনর্বহাল করতে চাইছে বাইডেন প্রশাসন।

তালেবানদের বিজয় ইরানকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে গেলেও উভয় পক্ষের মধ্যে এখনই মিত্রতার সম্পর্ক গড়ে ওঠার সম্ভাবনা কম বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তাদের ভাষ্যমতে, গোঁড়া সুন্নি তালেবান শাসনে আফগান শিয়াদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বরাবরই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তেহরান। শিয়া অধ্যুষিত ইরানের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের সঙ্গে তালেবানদের সম্পর্ক কখনই খুব একটা ঘনিষ্ঠ ছিল না। বরং আফগানিস্তানের শিয়াদের সঙ্গে আচরণ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধও রয়েছে।


আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, মিসর ও জর্ডানের মতো মধ্যপ্রাচ্যের তুলনামূলক উদার আরব দেশগুলো এখন নিজ ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা হলেও শঙ্কিত। উভয় দেশেই এখন কট্টরপন্থী সশস্ত্র সংগঠনের উপস্থিতি রয়েছে। আফগানিস্তানে তালেবানদের বিজয়ের ধারাবাহিকতায় এসব সংগঠন মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছে কায়রো ও আম্মান। সেক্ষেত্রে সামনের দিনগুলোয় মার্কিনঘনিষ্ঠ দেশ দুটিকে বড় ধরনের অভ্যন্তরীণ সমস্যা মোকাবেলা করতে হতে পারে।

মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে সংঘাতপূর্ণ দুই দেশ ইরাক ও সিরিয়ায়ও আফগানিস্তানের ঘটনাবলির স্পষ্ট প্রভাব দেখতে পাচ্ছেন পর্যবেক্ষকরা। দুই দেশে এখনো যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি রয়েছে। এর মধ্যে ইরাকে কোনো ধরনের সংঘাতে না জড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ওয়াশিংটন। গত মাসেই ইরাকি প্রধানমন্ত্রী মুস্তফা আল কাজিমির সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা দিয়েছিলেন, ইরাকে আর কোনো সামরিক তত্পরতা চালাবে না পেন্টাগন। তবে দেশটির সামরিক বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য মার্কিন সৈন্যদের সেখানে রেখে দেয়া হচ্ছে। যদিও সিরিয়ায় চলমান সামরিক তত্পরতা চালিয়ে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে ওয়াশিংটন। আফগানিস্তানের বিপর্যয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এ দুই দেশেও সামরিক উপস্থিতি বজায় রাখার বিষয়ে জোরালো প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।

গত কয়েক মাসে তালেবানকেন্দ্রিক কূটনৈতিক তত্পরতার অন্যতম বড় খেলোয়াড় হয়ে উঠেছিল পারস্য উপসাগরীয় দেশ কাতার। আশরাফ গনি সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে কাবুল প্রশাসনের সঙ্গে তালেবানদের কয়েক দফা আলোচনাও আয়োজন করেছে দেশটি। বিশ্লেষকদের অনেকেরই মত, এসব আলোচনার মূল উদ্দেশ্য ছিল তালেবানদের এককভাবে ক্ষমতা দখলকে প্রতিহত করা।
এই বিভাগের আরও খবর
নেতানিয়াহুকে গ্রেফতারের ঘোষণা যুক্তরাজ্যের

নেতানিয়াহুকে গ্রেফতারের ঘোষণা যুক্তরাজ্যের

নয়া দিগন্ত
সৌদি আরবে ফ্যাশন শো, ইসলামী পণ্ডিতদের ক্ষোভ তুঙ্গে

সৌদি আরবে ফ্যাশন শো, ইসলামী পণ্ডিতদের ক্ষোভ তুঙ্গে

দৈনিক ইত্তেফাক
ঢাকায় আসছে মার্কিন প্রতিনিধি দল

ঢাকায় আসছে মার্কিন প্রতিনিধি দল

বণিক বার্তা
ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা গোনসালেসকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিল যুক্তরাষ্ট্র

ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা গোনসালেসকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিল যুক্তরাষ্ট্র

প্রথমআলো
২৪ নভেম্বর সর্বাত্মক বিক্ষোভের ডাক ইমরানের, ২ মাসের জন্য ইসলামাবাদে জারি ১৪৪ ধারা

২৪ নভেম্বর সর্বাত্মক বিক্ষোভের ডাক ইমরানের, ২ মাসের জন্য ইসলামাবাদে জারি ১৪৪ ধারা

মানবজমিন
মণিপুর সঙ্কটের জন্য অমিত শাহের পদত্যাগের দাবি কংগ্রেসের

মণিপুর সঙ্কটের জন্য অমিত শাহের পদত্যাগের দাবি কংগ্রেসের

নয়া দিগন্ত
ট্রেন্ডিং
  • সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে 'বস্তায় বস্তায় ঘুষ' নেওয়ার অভিযোগ: দুদকের অনুসন্ধান শুরু

  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া