কূটনীতিক শূন্যতায় যুক্তরাষ্ট্র

ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে কূটনৈতিক পরিমণ্ডলে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। তার আমলে বৈরী দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধ আরো ঘনীভূত হয়েছে। মিত্রদেশগুলো থেকেও অনেকটাই দূরে সরে গিয়েছিল ওয়াশিংটন। নির্বাচিত হওয়ার আগেই এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের ঘোষণা দিয়েছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কূটনৈতিক অঙ্গনের শূন্যতা কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনবেন বলে নিজ দেশবাসীকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। তবে সে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রকে এখনো পুরনো অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে পারেননি তিনি। এমনকি এখনো অনেক দেশেই মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিতে পারেনি ওয়াশিংটন।

অনেক দেশেই যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক উপস্থিতি প্রায় শূন্যের কোঠায়। সেসব দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো রাষ্ট্রদূতকে এখনো নিয়োগ দেয়নি হোয়াইট হাউজ। এ তালিকায় ট্রাম্পের আমলে দূরত্ব তৈরি হওয়া দেশগুলো যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে চীনের মতো বৈরী দেশগুলোও।

চলতি মাসেই জো বাইডেন ইউরোপের তিনটি দেশ সফর করে এসেছেন। হোয়াইট হাউজের কর্তৃত্ব হাতে তুলে নেয়ার পর এটিই ছিল তার প্রথম সফর। তিন দেশের কোথাও স্থানীয় মার্কিন রাষ্ট্রদূত তাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য উপস্থিত ছিলেন না। প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাজ্য, বেলজিয়াম ও সুইজারল্যান্ড—এ তিন দেশের কোনোটিতেই এখনো কাউকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেননি জো বাইডেন। জেনেভায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে তার এ সফর শেষ হয়। স্থানীয়ভাবে নিয়োজিত শীর্ষ কূটনীতিকদের উপস্থিতি ছাড়াই ঐতিহ্যগতভাবে বৈরী দেশের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বাইডেনের এ বৈঠক আন্তর্জাতিক মহলে বেশ বিস্ময়ের সঞ্চার করেছে।

জি৭ জোটভুক্ত কয়েকটি মিত্রদেশেও কোনো শীর্ষ কূটনীতিক নেই যুক্তরাষ্ট্রের। এ তালিকায় নাম রয়েছে জাপান, জার্মানি ও কানাডার। অথচ রাশিয়া ও চীনকে মোকাবেলায় জি৭ জোটভুক্ত দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস চালাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

এশিয়া প্যাসিফিকে চীনকে মোকাবেলার জন্য সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে প্রায় বিস্মৃত জোট কোয়াড্রিলেটারাল ইনিশিয়েটিভকে (কোয়াড) পুনরুজ্জীবিত করে তোলা হয়েছে। এ অঞ্চলের ন্যাটো হিসেবে অভিহিত জোটের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার জাপান। সেখানেও এখন পর্যন্ত কোনো শীর্ষ কূটনীতিককে নিয়োগ দেননি জো বাইডেন। জোটের আরেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ভারত। বর্তমানে সেখানেও যুক্তরাষ্ট্রের আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োজিত কোনো রাষ্ট্রদূত নেই। এ নিয়ে মার্কিনঘেঁষা বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, বিষয়টি কোয়াডের কার্যক্রম পরিচালনার পথে বড় ধরনের ব্যাঘাত হয়ে দেখা দিতে পারে।

ইউরোপ সফর চলাকালে ইইউ নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন বাইডেন। সে বৈঠকের ফলোআপ রাখার জন্য ইইউতে বর্তমানে কোনো রাষ্ট্রদূত নেই যুক্তরাষ্ট্রের। বেইজিং, কাবুল, কিয়েভ, ম্যানিলা, রিয়াদ, সিউল, ওয়ারশসহ অনেক রাজধানী শহরেই কোনো শীর্ষ কূটনীতিক নেই যুক্তরাষ্ট্রের। অথচ এসব শহরের সঙ্গেই সবচেয়ে বেশি কূটনৈতিক আলোচনা-দেনদরবার-দরকষাকষি চালাতে হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বিশ্লেষকরা বলছেন, বাইডেনের ঘোষণা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র হয়তো তার পুরনো পথে ফিরে এসেছে। কিন্তু তাতে রাষ্ট্রদূতদের ভূমিকা ও অংশগ্রহণ দুটোই কমে এসেছে।

রাশিয়ায় বর্তমানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন জন সুলিভান। ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে তাকে মস্কোয় নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। দি ইকোনমিস্ট জানাচ্ছে, ন্যাটোয় মার্কিন দূত হিসেবে এরই মধ্যে জুলিয়ানা স্মিথকে পছন্দ করে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। জো বাইডেন ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালে জুলিয়ানা স্মিথ ছিলেন তার ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার। তবে তার নিয়োগ এখনো সিনেটের অনুমোদন পায়নি। ন্যাটোয় মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে কয়েকদিন আগেই তার নাম প্রস্তাব করেছেন জো বাইডেন। সেক্ষেত্রে তার দপ্তর গ্রহণে আরো সময় লাগতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের মতে, কোনো দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের অনুপস্থিতির প্রভাব স্পষ্টভাবে নিরূপণ করা মুশকিল। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত একজন অভিজ্ঞ পররাষ্ট্র কর্মকর্তা চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে থাকেন। অন্যদিকে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে অন্যের সঙ্গে সরাসরিই কথা বলেন। মহামারীকালে ভার্চুয়াল কূটনীতি কিছু সম্ভাবনা তৈরি করেছে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে মার্কিন অভিজ্ঞ পররাষ্ট্র কর্মকর্তাদের বদলে অন্যদের নিয়োগ দেয়ার কারণে ওয়াশিংটনকে কূটনৈতিকভাবে কিছুটা পিছিয়েও পড়তে হয়েছে।

ট্রাম্পের আমলে বার্লিনে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন রির্চার্ড গ্রেনেল। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস তাকে বর্ণনা করেছে ‘জার্মানির জন্য ক্রমাগত বিরক্তি উদ্রেককারী’ হিসেবে। তবে তার সম্পর্কে ইকোনমিস্টের মূল্যায়ন, রিচার্ড গ্রেনেলকে সেখানে পাঠানো হয়েছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। তিনি সেখানে স্রেফ সে দায়িত্বই পালন করে গিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক কূটনীতির অভিজ্ঞ বিশ্লেষকদের মতে, একজন রাষ্ট্রদূতের কাজ হলো কর্মস্থলের সরকারের সঙ্গে নিজ দেশের বিশ্বাস ও আস্থার জায়গা তৈরি করা। এজন্য কর্মস্থলের সরকারি মহলের মূল প্রভাবক ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার কাজটিও তাকে সুচারুভাবে করতে হয়। প্রেসিডেন্টের বাছাইকৃত ব্যক্তি হিসেবে মার্কিন রাষ্ট্রদূতদের ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে দায়িত্ব নিয়ে কথা বলারও সুযোগ থাকে। এক্ষেত্রে নিজ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অনেকটা স্বাধীনভাবেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে থাকেন তারা।

জো বাইডেনের ক্ষমতা গ্রহণের পর এ পর্যন্ত সময় পেরিয়েছে পাঁচ মাস। পার্টনারশিপ ফর পাবলিক সার্ভিস নামে একটি সংস্থার বরাত দিয়ে ইকোনমিস্ট জানাচ্ছে, এ সময়ের মধ্যে এখন পর্যন্ত রাজনৈতিকভাবে ৬৭ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। এ সময়ের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিয়োগ দিয়েছিলেন ৪১ জনকে। অন্যদিকে তারও আগে বারাক ওবামা প্রথম পাঁচ মাসে নিয়োগ দিয়েছিলেন ১৪৯ জনকে।
এই বিভাগের আরও খবর
যে কারণে পাকিস্তানকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের

যে কারণে পাকিস্তানকে নিষেধাজ্ঞার হুমকি যুক্তরাষ্ট্রের

জনকণ্ঠ
ইউক্রেনের ৫০ ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি রাশিয়ার

ইউক্রেনের ৫০ ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি রাশিয়ার

ভোরের কাগজ
আন্তর্জাতিক নির্দেশিকাকে লঙ্ঘন করে শিশুখাদ্যে চিনি মেশাচ্ছে নেসলে

আন্তর্জাতিক নির্দেশিকাকে লঙ্ঘন করে শিশুখাদ্যে চিনি মেশাচ্ছে নেসলে

মানবজমিন
ইরানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো

ইরানের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো

কালের কণ্ঠ
রেকর্ড বৃষ্টিপাতে বিপর্যস্ত আমিরাত, ওমানে ভারি বর্ষণে নিহত ১৮

রেকর্ড বৃষ্টিপাতে বিপর্যস্ত আমিরাত, ওমানে ভারি বর্ষণে নিহত ১৮

যুগান্তর
ইসরাইলে হামলার পর ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ'র নতুন নিষেধাজ্ঞা, কী বলছে রাশিয়া

ইসরাইলে হামলার পর ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্র-ইইউ'র নতুন নিষেধাজ্ঞা, কী বলছে রাশিয়া

নয়া দিগন্ত
ট্রেন্ডিং
  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া

  • অবিশ্বাস্য কীর্তিতে হাজার রানের ক্লাবে এনামুল বিজয়