আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম এখন রেকর্ড সর্বোচ্চে। এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে চলমান বাণিজ্য বিরোধকে। চীনকেন্দ্রিক বৈশ্বিক ভূরাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দ্রুতই জ্বালানি পণ্যটির দাম কমার সম্ভাবনাও খুব কম।
অস্ট্রেলিয়াকে বৈশ্বিক কয়লা রফতানিতে শীর্ষস্থানে নিয়ে এসেছিল চীনা বাজারের ক্রমবর্ধমান চাহিদা। কূটনৈতিক উত্তেজনার কারণে বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য একপ্রকার বন্ধ। অন্যদিকে পণ্যটির দামও এখন ক্রমেই বাড়ছে। পরিবর্তন আসছে বৈশ্বিক কয়লা বাণিজ্যের সরবরাহ চেইনেও।
বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতির বিপরীতে কয়লার দর বৃদ্ধিকে কিছুটা অসামঞ্জস্যপূর্ণ হিসেবে দেখছেন অনেকে। বিশ্বের অনেক দেশই এখন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং শিল্পোৎপাদন খাতে কয়লার ব্যবহার সীমিত করে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ ও বৈশ্বিক উষ্ণায়ন মোকাবেলার তাগিদে জ্বালানি পণ্যটির ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধের দাবি জনপ্রিয়তা পেয়েছে গোটা বিশ্বেই। এর মধ্যেও দাম বাড়ছে পণ্যটির।
আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম সম্প্রতি টনপ্রতি ১২১ ডলার ছাড়িয়ে যায়। এর কারণ হিসেবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এ মুহূর্তে বৈশ্বিক কয়লার বাজারে সবচেয়ে বড় প্রভাবক চীন। জ্বালানি পণ্যটির চাহিদাও সেখানেই সবচেয়ে বেশি। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি পণ্যটির মোট চাহিদার অর্ধেকেই প্রয়োজন পড়ে দেশটির। এতদিন পর্যন্ত দেশটিতে ব্যবহূত কয়লার বড় একটি উৎস ছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে কভিড-১৯-এর উৎস নিয়ে বিতর্কের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চীন। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীনে রফতানি বাড়ার সম্ভাবনা দেখতে পেয়ে জ্বালানি পণ্যটির দাম বাড়িয়ে দিয়েছে অন্য রফতানিকারকরা।
অস্ট্রেলীয় সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, বেইজিংয়ের এ পদক্ষেপ দেশটির কয়লা বাণিজ্যের ওপর মারাত্মক আঘাত হয়ে দেখা দিয়েছে। কুইন্সল্যান্ডসহ অস্ট্রেলিয়ার কয়লা উত্তোলনকারী বিভিন্ন অঞ্চলের অর্থনীতিতে এর প্রভাবও পড়েছে।
এ পদক্ষেপে অস্ট্রেলিয়ার কয়লা রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও লাভবান হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়া। দেশটির কয়লা শিল্পসংশ্লিষ্টরাও বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন। চলতি সপ্তাহেই ইন্দোনেশিয়ান কোল মাইনিং অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চীনে কয়লার অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ব্যাহত হয়েছে। পাশাপাশি দেশটিও এখন রাজনৈতিক কারণে জ্বালানি পণ্যটির উৎসে বৈচিত্র্য বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি ইন্দোনেশিয়া লাভবান হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক হেন্দ্রা সিনাদিয়া সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ান ফাইন্যান্সিয়াল রিভিউকে (এএফআর) বলেন, ইন্দোনেশিয়া থেকে চীনের কয়লা আমদানি বেড়েছে। কারণ দেশটিতে অভ্যন্তরীণভাবে সংগৃহীত কয়লাও এখন বেশ ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে খারাপ আবহাওয়ায় সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি একাংশে দায়ী। আরো কিছু বিষয়ও এখানে অনেকটাই দায়ী, যার কারণে অস্ট্রেলিয়া থেকে চীনের কয়লা আমদানিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে বর্তমান সম্পর্কের কারণে কয়লার দাম বাড়ছে। তবে আমরা জানি না, এ পরিস্থিতি কতদিন স্থায়ী হবে।
চীনের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে এখন কয়লার চাহিদা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। দেশটির শিল্পোৎপাদন খাতও এখন কভিডের আঘাত কাটিয়ে উঠে পুরোদমে সচল হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে দেশটির বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতেও এখন চাহিদা বেড়েছে পণ্যটির। শুধু অভ্যন্তরীণ সরবরাহ দিয়ে এ চাহিদা মেটানো সম্ভব নয়। ফলে দেশটিকে এখন কয়লার জন্য ইন্দোনেশিয়াসহ রফতানিকারক দেশগুলোর ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে বেশি।
চীন-অস্ট্রেলিয়ার বিরোধ বর্তমানে এশিয়ায় কয়লার সরবরাহ চেইনেই বড় পরিবর্তন এনে দিয়েছে। ফিচ রেটিংসের বিশ্লেষক শুভা শেঠির বরাত দিয়ে এএফআর জানাচ্ছে, কয়লা সংগ্রহে চীন এখন অস্ট্রেলিয়ার পরিবর্তে ইন্দোনেশিয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে এতদিন ইন্দোনেশিয়ার কয়লার বড় গন্তব্য ছিল ভারত। জাকার্তা বর্তমানে চীনে রফতানিতে মনোযোগ দিয়েছে। এর বিপরীতে ভারতের কয়লা আমদানির বড় উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়া।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, গত ফেব্রুয়ারিতে চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সম্পর্কের অবনতির বিষয়টি লক্ষ করে ইন্দোনেশিয়ার সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশটিও কয়লার রফতানি মূল্য বাড়িয়ে তোলে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে দেশটি থেকে কয়লার গড় রফতানি মূল্য ছিল গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৪৫ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) সাধারণত কয়লার দাম একটু নিম্নমুখী হলেও ইন্দোনেশিয়া এ সময়েও পণ্যটির দাম কমায়নি।
এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক পলিসি সোসাইটির বরাত দিয়ে খনিজ ও জ্বালানিবিষয়ক সংবাদমাধ্যম মাইনিং টেকনোলজি জানাচ্ছে, ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী কয়লা উত্তোলন হয়েছিল প্রায় ৮০০ কোটি টন। এর মধ্যে এক-ষষ্ঠাংশ রফতানি করেছে উত্তোলক দেশগুলো। ওই বছর বিশ্বব্যাপী রফতানীকৃত মোট কয়লার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এসেছিল অস্ট্রেলিয়া থেকে। এর মধ্যে ২০ শতাংশেরই গন্তব্য ছিল চীন।
চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সম্পর্ক অনেক দিন ধরেই বেশ খারাপ। বর্তমানে তা রূপ নিয়েছে বাণিজ্য যুদ্ধে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, দুই দেশের মধ্যে বিবাদের সূচনা ২০১২ সালে। ওই সময়ে চীনা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের ওপর অস্ট্রেলিয়ায় ফাইভজি নেটওয়ার্ক তৈরিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ক্যানবেরা। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের আরেক দফা অবনতি হয় ২০১৬ সালে। জাতিসংঘে দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে অস্ট্রেলিয়া। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে বেইজিং।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়