চীনের বিদ্যুৎ সংকটে লাভবান রাশিয়া-ইন্দোনেশিয়া

২০৬০ সালের মধ্যে চীনে কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। তার এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে দেশটির প্রাদেশিক সরকারগুলো এখন রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে কার্বন ডাই-অক্সাইড ও গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নিয়েছে।  ব্যাপক মাত্রায় নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হচ্ছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে। যদিও দেশটির বিদ্যুৎ উৎপাদন এখনো প্রধানত কয়লানির্ভর। অনেকটা অপ্রস্তুত অবস্থায় এ নিয়ন্ত্রণ আরোপের কারণে বিপাকে পড়েছে দেশটির বিদ্যুৎ উৎপাদন খাত। শিল্প, বিদ্যুৎ ও গৃহস্থালি খাতে বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে রেশনিংয়ের ভিত্তিতে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটিতে চলমান এ বিদ্যুৎ সংকটে চাপে বৈশ্বিক সরবরাহ চেইন। যদিও এ সংকটেই লাভবান হচ্ছে রাশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার মতো জ্বালানি রফতানিকারক দেশগুলো।

বিশেষ করে চীনের প্রতিবেশী দেশ রাশিয়া এ সংকট থেকে লাভবান হতে যাচ্ছে সবচেয়ে বেশি। রুশ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য ব্যবসার অভূতপূর্ব সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে চলমান এ সংকট। গত মাসের শেষ দিকে রুশ বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইন্টার আরএওকে চীনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে চীনা কর্তৃপক্ষ। 

বর্তমানে চীনে রাশিয়ার রফতানি বাণিজ্যে ৬০ শতাংশেরও বেশি অবদান রাখছে প্রাকৃতিক গ্যাস ও জ্বালানি তেল। কয়লানির্ভরতা থেকে সরে আসার পরিকল্পনা নেয়ায় সামনের দিনগুলোয় দেশটির শিল্প ও বিদ্যুৎ খাতে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বাড়ার ব্যাপক সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। কয়লার তুলনায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কার্বন ও গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের হার প্রায় অর্ধেক। সে হিসেবে ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনে গ্যাসের চাহিদা বেড়ে বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা প্রতিষ্ঠান ম্যাকেঞ্জি। 

ম্যাকেঞ্জির এ ভবিষ্যদ্বাণী এরই মধ্যে ফলতে শুরু করেছে। বর্তমানে চীনে সবচেয়ে সস্তায় গ্যাস সরবরাহ আসছে রাশিয়া থেকে। ২০১৯ সালে চালু হওয়া পাওয়ার অব সাইবেরিয়া পাইপলাইন দিয়ে রাশিয়ার খনিগুলো থেকে এ গ্যাস পরিবাহিত হচ্ছে। এরই মধ্যে পাওয়ার অব সাইবেরিয়া ২ পাইপলাইন চালুরও ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। খোদ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এখন এ পাইপলাইন নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

২০১৯ সালেই চীনে এলএনজি রফতানি শুরু করে রাশিয়া। বর্তমানে রুশ এলএনজির বৃহৎ গন্তব্য হিসেবে চীনের অবস্থান ষষ্ঠ। চীনা বিনিয়োগ, ঋণ এমনকি সরঞ্জামকে কাজে লাগিয়ে রুশ আর্কটিকে এখন ইয়ামাল এলএনজি ও আর্কটিক এলএনজির মতো বড় বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এক দশকের মধ্যে বিশ্বে গ্যাসের বৃহত্তম বাজারে রূপ নিতে যাচ্ছে চীন। বর্তমান পরিস্থিতিতে রুশ রফতানিকারকদের জন্য বৃহৎ এ বাজার দখলের প্রত্যাশা খুব একটা অন্যায্য হবে না।

বেইজিংয়ের কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণের পথে বিতর্কিত এক পদক্ষেপ তথাকথিত গ্রিন কোলের ব্যবহার। উন্নতমানের এ কয়লা তুলনামূলক কম পরিমাণে ব্যবহার করে বাড়তি পরিমাণে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব। জ্বালানি খাতের রূপান্তরের অন্তর্বর্তী পর্যায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে এ ধরনের কয়লা ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে বেইজিংয়ের। 

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, যতদিন চীন এ ধরনের কয়লার ব্যবহার চালিয়ে যাবে, রাশিয়ার জন্য ততদিন বড় ধরনের সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে রুশ কয়লার সবচেয়ে বড় আমদানিকারক চীন। গত বছরও রাশিয়ার মোট কয়লা রফতানির ১৫ শতাংশই গিয়েছে চীনে। তবে রাশিয়ার দূরপ্রাচ্য অঞ্চল থেকে চীনে কয়লা পরিবহনের বড় অসুবিধা হলো অনুন্নত পরিবহন ব্যবস্থা। এ সমস্যা সমাধানের জন্য রুশ রেলওয়ে সংস্থা চলতি বছর বৈকাল-আমুর ও ট্রান্স-সাইবেরিয়ান রেলপথ উন্নত করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। তিন বছরের মধ্যে ১ হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থ ব্যয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

এর মধ্যে বৈকাল-আমুর রেলপথটি সম্প্রসারণ করে নিয়ে যাওয়া হবে ইয়াকুতিয়া অঞ্চলের এলগা কয়লা খনি পর্যন্ত। সেখানে উত্তোলিত কয়লা চীনের তথাকথিত ‘গ্রিন কোলের’ সব শর্তই পূরণ করে। গত বছর খনি পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান এলগা কোল চীনা কোম্পানি জিএইচ-শিপিংয়ের সঙ্গে এক যৌথ উদ্যোগের ভিত্তিতে চীনে কয়লা সরবরাহ শুরু করেছে। চলতি বছর খনিটি থেকে চীনে দেড় কোটি থেকে ১ কোটি ৮০ লাখ টন কয়লা সরবরাহের কথা রয়েছে। ২০২৩ সালের মধ্যে এ সরবরাহের পরিমাণ দাঁড়াবে তিন কোটি টনে।

তবে রাশিয়া এখনো চীনের বৃহত্তম কয়লা সরবরাহকারী হয়ে উঠতে পারেনি। অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকেও কয়লা আমদানি করে দেশটি। এর মধ্যে ভূরাজনৈতিক কারণে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে চীনের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ভাটা পড়েছে। উন্নতমানের কয়লা সরবরাহ বাড়ানোর মাধ্যমে এ সুযোগকে এখন ভালোভাবেই কাজে লাগাচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়া।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ইন্দোনেশিয়া এখন চীনে সবচেয়ে বড় কয়লা সরবরাহকারী দেশ। এখানকার কয়লাও চীনের তথাকথিত ‘গ্রিন কোলের’ যাবতীয় শর্ত পূরণে সক্ষম। গত মাসে দেশটি থেকে রেকর্ড ২ কোটি ১০ লাখ টন কয়লা আমদানি করেছে চীন। এর আগে আগস্টে আমদানির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৭০ লাখ টন। 
এই বিভাগের আরও খবর
নেতানিয়াহুকে গ্রেফতারের ঘোষণা যুক্তরাজ্যের

নেতানিয়াহুকে গ্রেফতারের ঘোষণা যুক্তরাজ্যের

নয়া দিগন্ত
সৌদি আরবে ফ্যাশন শো, ইসলামী পণ্ডিতদের ক্ষোভ তুঙ্গে

সৌদি আরবে ফ্যাশন শো, ইসলামী পণ্ডিতদের ক্ষোভ তুঙ্গে

দৈনিক ইত্তেফাক
ঢাকায় আসছে মার্কিন প্রতিনিধি দল

ঢাকায় আসছে মার্কিন প্রতিনিধি দল

বণিক বার্তা
ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা গোনসালেসকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিল যুক্তরাষ্ট্র

ভেনেজুয়েলার বিরোধী নেতা গোনসালেসকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিল যুক্তরাষ্ট্র

প্রথমআলো
২৪ নভেম্বর সর্বাত্মক বিক্ষোভের ডাক ইমরানের, ২ মাসের জন্য ইসলামাবাদে জারি ১৪৪ ধারা

২৪ নভেম্বর সর্বাত্মক বিক্ষোভের ডাক ইমরানের, ২ মাসের জন্য ইসলামাবাদে জারি ১৪৪ ধারা

মানবজমিন
মণিপুর সঙ্কটের জন্য অমিত শাহের পদত্যাগের দাবি কংগ্রেসের

মণিপুর সঙ্কটের জন্য অমিত শাহের পদত্যাগের দাবি কংগ্রেসের

নয়া দিগন্ত
ট্রেন্ডিং
  • সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে 'বস্তায় বস্তায় ঘুষ' নেওয়ার অভিযোগ: দুদকের অনুসন্ধান শুরু

  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া