টানা ১৭ মাস বন্ধের পর আজ খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ অচলাবস্থা শেষে দেশজুড়ে সব প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসায় শুরু হবে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান। এ নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় চলছে উৎসবের আমেজ। শিক্ষক ও কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের বরণ করে নিতে প্রস্তুত। তবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস থাকলেও অভিভাবকদের মধ্যে এখনো কিছুটা আতঙ্কও রয়ে গিয়েছে।
করোনা মহামারীর কারণে দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাবে শিক্ষার্থীরা। যারা নতুন শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছে, তাদের জন্য আজই হবে ক্লাসের প্রথম দিন। এজন্য অনেক স্কুলের প্রধান ফটক সাজানো হয়েছে। এছাড়া কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের বরণ করতে বিশেষ আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে। ক্লাস শুরু করতে মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর আলাদা সতর্কতা ও সচেতনতামূলক নির্দেশনা জারি করেছে। আপাতত এসব নির্দেশনা ও নিয়মের আলোকে চলবে শিক্ষা কার্যক্রম।
আজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও সব শিক্ষার্থী একসঙ্গে বিদ্যালয়ে যাবে না। যেতে হবে পর্যায়ক্রমে। সপ্তাহে একদিন করে। তবে ক্লাস শুরুর দিন থেকে সপ্তাহে ছয়দিন ২০২১ ও ২০২২ সালের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থী এবং পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারবে। সঙ্গে থাকবে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেকোনো একটি শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা। নির্দেশনার আলোকে প্রতিদিন দুটি করে ক্লাস ধরে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রুটিন তৈরি করেছে।
প্রতিষ্ঠান খোলার প্রথম দিনে শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন পরিবেশে শ্রেণী কার্যক্রমে স্বাগত জানানোর জন্য স্কুল ও কলেজগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে শিক্ষা বিভাগের পক্ষ থেকে। সে আলোকেই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। স্কুল খুললেও কোনো ধরনের জমায়েত বা অ্যাসেম্বলি হবে না। পড়াশোনায় কোনো চাপও থাকবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার দুই মাসের মধ্যে কোনো ধরনের মূল্যায়ন ও আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা না নেয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে। কভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে বা কোনো ধরনের উপসর্গের কারণে যদি শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত হতে না পারে, তাহলে (যথাযথ প্রমাণ সাপেক্ষে) তাদের অনুপস্থিত হিসেবে গণ্য করা হবে না। সবার মাস্ক পরিধান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আবার মাস্ক পরার কারণে কোনো শিশু শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে কিনা, সে বিষয়ে শিক্ষকদের দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে।
নিয়ম অনুযায়ী, বেঞ্চের দৈর্ঘ্য ৫ ফুটের কম হলে প্রতিটি বেঞ্চে একজন করে বসবে। কমপক্ষে একটি বেঞ্চ অন্তর অন্তর তিন ফুট দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে। যদি বেঞ্চগুলো সরিয়ে ফেলার পর্যাপ্ত জায়গা না থাকে, সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় ও চতুর্থ বেঞ্চে ক্রস চিহ্ন দিতে হবে, যাতে সেখানে কোনো শিক্ষার্থী বসতে না পারে। যদি বেঞ্চের দৈর্ঘ্য ৫ ফুট বা তার বেশি হয়, তবে প্রতিটি বেঞ্চে দুজন করে বসতে পারবে।
করোনা মহামারীর এ পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গভর্নিং বডি, ম্যানেজিং কমিটি, অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, প্রতিষ্ঠানপ্রধান, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, আঞ্চলিক উপপরিচালক, আঞ্চলিক পরিচালকদের ৬৩টি নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)।
প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো কীভাবে চলবে এ-সংক্রান্ত ১৬ দফা নির্দেশনা রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। নির্দেশনায় দৈনিক সমাবেশ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে নিজেদের আসনে বসে হালকা শারীরিক কসরত (পিটি) করবে। কেউ চাইলে পিটি করা থেকে বিরত থাকতে পারবে।
শিক্ষার্থীদের জিগজ্যাগ বা ইংরেজি জেড অক্ষরের মতো বিন্যাসে বসতে হবে। প্রতি বেঞ্চে একজনের বেশি বসা যাবে না। একই দিনে একই সময়ে সর্বোচ্চ দুটি শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসার ব্যবস্থা রেখে টিফিন বিরতি ছাড়াই শ্রেণী কার্যক্রম চালাতে হবে। নির্দেশনায় সর্বোচ্চ ৩ ঘণ্টার মধ্যে শ্রেণী কার্যক্রম শেষ করতে বলা হয়েছে। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু করে এ কার্যক্রম শেষ করতে হবে দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে। শ্রেণীকক্ষ ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় রেখে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে একাধিক শিফট কিংবা সপ্তাহের একেক দিন একেক শ্রেণীর বা সর্বোচ্চ দুটি শ্রেণীর পাঠদানের ব্যবস্থা রেখে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে হালনাগাদ পাঠ্যসূচি অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।
শ্রেণী কার্যক্রমে গ্রুপ ওয়ার্ক ও পেয়ার ওয়ার্কের মতো সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টিকারী শিখন কাজ আপাতত বাদ রাখতে হবে। শিক্ষকরা মাস্ক পরে ক্লাস নেবেন। তিনি শিক্ষার্থীদেরও মাস্ক পরা নিশ্চিত করবেন। ক্লাস শেষে সামাজিক দূরত্ব মেনে সারিবদ্ধভাবে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় ত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে। সব শিক্ষার্থীকে একত্রে শ্রেণীকক্ষ ত্যাগ করতে দেয়া যাবে না। শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে একের পর এক শিক্ষার্থী বিদ্যালয় ত্যাগ করবে। একাধিক শিফটে ক্লাস চললে, আগের শিফট ও পরের শিফটের ক্লাস শুরুর মাঝে অন্তত ৩০ মিনিটের বিরতি রাখতে হবে। শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ পানির বোতল নিয়ে বিদ্যালয়ে আসবে। এ সূচি আপাতত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়