প্রভাব পড়ছে দেশের ইস্পাত খাতেও

বৈশ্বিক শিল্প ধাতু উৎপাদন ও রফতানিতে চীনের অবস্থান শীর্ষে। কভিড-পরবর্তী পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে দেশটিতে শিল্পোৎপাদন এখন গতি পেয়েছে। চাহিদা বাড়ায় দেশটির বাজারে অ্যালুমিনিয়াম, তামা ও দস্তার মতো শিল্প ধাতুর মূল্য এখন ক্রমেই বেড়ে চলেছে, যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারেও। পণ্যগুলোর জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল না হলেও তা এখন বাড়তি দামে আমদানি করতে হচ্ছে দেশের ইস্পাত খাতসংশ্লিষ্টদের।  

বিশ্বব্যাপী মোট উৎপাদিত ইস্পাতের অর্ধেকেরও বেশি আসে চীন থেকে। পণ্যটি উৎপাদনে ব্যবহূত কাঁচামাল আকরিক লোহার দাম আন্তর্জাতিক বাজারে এরই মধ্যে চলতি বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে এসেছে। দাম বেড়েছে অ্যালুমিনিয়াম, তামা ও দস্তার মতো শিল্প কাঁচামালেরও, যার প্রভাব পড়ছে উৎপাদক ও ভোক্তা পর্যায়ে।

বাংলাদেশে পণ্য আমদানির শীর্ষ উৎস চীন। দেশে মোট পণ্য আমদানির এক-চতুর্থাংশেরও বেশি আসে দেশটি থেকে। তবে ইস্পাত শিল্পের কাঁচামালের জন্য  দেশটির ওপর নির্ভরতা প্রায় নেই বললেই চলে। যদিও দেশটির বাজারে এসব পণ্যের মূল্যের অস্থিতিশীলতার প্রভাব এরই মধ্যে  দেশে দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ) সূত্র বলছে, চীন থেকে ইস্পাত শিল্পের কোনো কাঁচামাল আমদানি হয় না। আমদানি হয় মূলত স্টিলের ফিনিশড গুডস যেমন এইচআর প্লেট। বাংলাদেশে ইস্পাতের কাঁচামালের যে চাহিদা, তার ২০-৩০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে পাওয়া যায়। বাকি চাহিদা মেটানোর জন্য ৭০-৮০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। আর এ আমদানির উৎস ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ। তবে চীনের বাজার অস্থিতিশীলতার ধারাবাহিকতায় এখন এসব দেশ থেকেও বাড়তি দামে পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। 

বিএসএমএ উপদেষ্টা মাসাদুল আলম মাসুদ এ বিষয়ে বণিক বার্তাকে বলেন, চীন হলো সবচেয়ে বড় স্টিল উৎপাদক ও ব্যবহারকারী। তাদের ব্যয় বাড়লে সারা পৃথিবীতেই দাম বেড়ে যায়। বাংলাদেশেও বেড়েছে। ২০০৮ থেকে ২০২০ সালের প্রথম দিক পর্যন্ত চীন দেশের বাইরে থেকে কোনো স্টিল স্ক্র্যাপ আমদানি করেনি। নিজেদের ইস্পাতই ব্যবহার করেছে। ২০২০ সালের শেষের দিক থেকে তারা দেশের বাইরে থেকে স্টিল স্ক্র্যাপ কিনতে শুরু করেছে। ফলে ২০০৮ সালের পর থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে ইস্পাতের কাঁচামালের দাম ছিল ৩০০-৩৫০ ডলারের মধ্যে। একই পণ্যের বর্তমান দাম ৫০০-৫৬০ ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশটি থেকে ১ হাজার ১৪৮ কোটি ৯৯ লাখ ডলারের (৯৭ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা) বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী আমদানি করে বাংলাদেশ, যা মোট আমদানির ২৫ দশমিক ২ শতাংশ। আমদানীকৃত পণ্যের মধ্যে লোহা ও ইস্পাত আমদানি হয়েছে ৩৭ কোটি ২৭ লাখ ডলারের (৩ হাজার ১৫৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা), যা দেশটি থেকে আমদানীকৃত পণ্যের মোট মূল্যের ৩ দশমিক ২ শতাংশ। লোহা ও ইস্পাত থেকে তৈরি পণ্য আমদানি হয়েছে ১৭ কোটি ৮৬ লাখ ডলারের (১ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা)। এছাড়া অ্যালুমিনিয়াম ও অ্যালুমিনিয়াম থেকে উৎপাদিত পণ্য আমদানি হয়েছে ৫ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের (৫০৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা) এবং তামা ও তামাজাতীয় পণ্য আমদানি হয়েছে ৪ কোটি ৭৯ লাখ ডলারের (৪০৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা)।

শিল্প কাঁচামালের বাজার সহনীয় রাখতে কয়েক মাস ধরেই চেষ্টা করে যাচ্ছে চীন। কিন্তু সেটি আদতে কোনো কাজে আসছে না। চীনের ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকসের (্এনবিএস) তথ্য বলছে, গত আগস্টে কারখানা পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি ১৩ বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, এ সময়ে উৎপাদক পর্যায়ে মূল্যসূচক (পিপিআই) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। যেখানে সংস্থাটির প্রাক্কলন ছিল ৯ শতাংশ। পিপিআই বৃদ্ধির এ গতি ২০০৮ সালের আগস্টের পর সর্বোচ্চে।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চীনের শিল্প কাঁচামালের দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে, যা মধ্যম ও নিচের দিকের শিল্প-কারখানাগুলোর ব্যালান্সশিটে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। এর মধ্যে কয়লার দাম এখন সর্বোচ্চে রয়েছে। ইস্পাত তৈরিতে ব্যবহূত জ্বালানিটির দাম গত তিন মাসে ৫০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বৃদ্ধি পায় গত জুলাইয়ে, ৬৫ দশমিক ৩ শতাংশ। যার প্রভাব পড়েছে ইস্পাত শিল্পে। এনবিএসের তথ্য বলছে, আগস্টে কেবল ইস্পাত খাতে পিপিআই বেড়েছে ৩৪ দশমিক ১ শতাংশ। আর জানুয়ারি-আগস্ট সময়ে বেড়েছে ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ।

চীনে ধাতবপণ্যের দাম বৃদ্ধির তালিকায় রয়েছে তামা, অ্যালুমিনিয়াম ও দস্তাও। এর মধ্যে অ্যালুমিনিয়ামের দাম এ মাসের শুরুতে ১০ বছরের সর্বোচ্চে পৌঁছে। চীনের বেঞ্চমার্কে এ সময় ব্যবহারিক ধাতুটির দাম ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে টনপ্রতি ২ হাজার ৭২২ ডলারে ওঠে, যা ২০১১ সালের মে মাসের পর সর্বোচ্চ। এ সময়ে প্রতি টন অ্যালুমিনিয়ামের দাম দাঁড়িয়েছিল ২ হাজার ৭২৬ ডলার ৫০ সেন্ট। বেঞ্চমার্কের পাশাপাশি ফিউচারস মার্কেটেও অ্যালুমিনিয়ামের দাম বড় আকারে বেড়েছে। এর মধ্যে সাংহাই ফিউচারস এক্সচেঞ্জে অক্টোবরে সরবরাহ মূল্য বেড়েছে ১ দশমিক ২ শতাংশ। প্রতি টন অ্যালুমিনিয়ামের দাম ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৩১১ ডলার, যা ২০০৮ সালের আগস্টের পর সর্বোচ্চ। একই সময়ে নিকেলের দাম ৩ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
এই বিভাগের আরও খবর
মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট না বসানোর চেষ্টা চলছে

মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট না বসানোর চেষ্টা চলছে

প্রথমআলো
বাংলাদেশ থেকে সরাসরি তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারে ব্রাজিল

বাংলাদেশ থেকে সরাসরি তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারে ব্রাজিল

বিডি প্রতিদিন
ভারতে স্বর্ণের দামে সর্বকালের রেকর্ড

ভারতে স্বর্ণের দামে সর্বকালের রেকর্ড

বিডি প্রতিদিন
বাংলাদেশে গত এক যুগে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে মধ্যপ্রাচ্যের অবদান সামান্য

বাংলাদেশে গত এক যুগে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে মধ্যপ্রাচ্যের অবদান সামান্য

বণিক বার্তা
ঈদের আগে দুই দফা বাড়তে পারে সয়াবিন তেলের দাম

ঈদের আগে দুই দফা বাড়তে পারে সয়াবিন তেলের দাম

জনকণ্ঠ
৫০%-এর বেশি আমদানি হচ্ছে আফ্রিকা থেকে

৫০%-এর বেশি আমদানি হচ্ছে আফ্রিকা থেকে

বণিক বার্তা
ট্রেন্ডিং
  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া

  • অবিশ্বাস্য কীর্তিতে হাজার রানের ক্লাবে এনামুল বিজয়