মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই রাশিয়ার সঙ্গে স্যাটেলাইট নির্মাণে চুক্তি

বাংলাদেশের দ্বিতীয় কৃত্রিম উপগ্রহ নির্মাণের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ (বিএস-২) নামে এ স্যাটেলাইট নির্মাণ ও উৎক্ষেপণের জন্য রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান রসকসমসের সাবসিডিয়ারি গ্লাভকসমসের সঙ্গে চুক্তি সই করা হয়েছে। গতকাল বিকালে রাশিয়ার এ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সই করে বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল)। এমন সময়ে এ চুক্তি সই হলো যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের একটি বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অন্যদিকে ইউক্রেন নিয়ে রীতিমতো যুদ্ধংদেহী অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র।

এ স্যাটেলাইট নির্মাণের ঘোষণা দেয়ার পর যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহ প্রকাশ করেছিল, তার মধ্যে গ্লাভকসমসের পাশাপাশি ছিল চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান গ্রেটওয়াল ইন্ডাস্ট্রি করপোরেশন এবং ফ্রান্সের থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস ও এয়ারবাস। তবে শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়ার সঙ্গেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ নির্মাণ ও উৎক্ষেপণের চুক্তি সই হলো।

গতকাল এ চুক্তিতে সই করেন বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানির চেয়ারম্যান ও সিইও শাহজাহান মাহমুদ এবং গ্লাভকসমসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) দিমিত্রি লসকুতেভ। এ সময় ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ফাইভজি যুগে প্রবেশ করেছে। তৃতীয় সাবমেরিন কেবল সংযোগ স্থাপনে কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে। তৃতীয় অঙ্গীকার ছিল বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ নির্মাণ করা। এ সমঝোতা স্মারক সইয়ের মধ্য দিয়ে তার অভিযাত্রা আলোর মুখ দেখল।

কবে নাগাদ এ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হতে পারে তা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, পুরো বিষয়টাই কারিগরি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর সময় সব প্রস্তুতি থাকার পরও শেষ মুহূর্তে ঘোষিত সময় অনুযায়ী উৎক্ষেপণ করা যায়নি। এবারো ২০২৩ সালের মধ্যে উৎক্ষেপণের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের সাড়ে তিন বছরের মাথায় দ্বিতীয় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়টিকে দেশের জন্য নতুন মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন তথ্য ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী।

বিএস-২ স্যাটেলাইটে থাকবে অপটিক্যাল ভিএইচআর-সার (সিনথেটিক অ্যাপারচার রাডার)। যার মূল কাজ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের ভূমি ও সমুদ্র এলাকার ছবি তোলা।

গ্লাভকসমস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাশিয়ার মহাকাশ ইন্ডাস্ট্রি থেকে বিএস-২ তৈরি, উৎক্ষেপণ ও আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ একমত হয়েছে। এ সমঝোতার মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।

অন্যদিকে, এখন পর্যন্ত রাশিয়ার এ প্রতিষ্ঠানের ওপর দুই দফা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন ‘মিসাইল স্যাংশন ল’-এর আওতায় মিসাইল টেকনোলজি কন্ট্রোল রেজিম (এমটিসিআর) নীতিমালার সঙ্গে কার্যক্রম অসংগতিপূর্ণ হওয়ায় ১৯৯২ সালে প্রথম নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এক নির্বাহী আদেশে গ্লাভকসমসের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। যার মেয়াদ শেষ হয় ১৯৯৪ সালে। পরে ১৯৯৮ সালে আবারো নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। সেই সময় প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা থাকা অবস্থায় কোনো দেশ গ্লাভকসমসের সঙ্গে চুক্তি করলে সে দেশের প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে বলে উল্লেখ করা হয়। পরে ২০১০ সালে এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।

তবে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হলেও গ্লাভকসমস সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুনজরে আসেনি। কারণ ২০১৪ সালে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে একটি জিওসিঙ্ক্রোনাস স্যাটেলাইট প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। কিন্তু সেই সময় প্রকল্পটি নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় তাদের। ভারত নিজস্ব ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিন ব্যবহারের মাধ্যমে সেখান থেকে বেরিয়ে আসে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিষ্ঠানটির ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ইতিহাস রয়েছে। আর স্যাটেলাইটটির মূল কাজই হবে বিভিন্ন ধরনের ছবি তোলা। ফলে নিষেধাজ্ঞার কারণে ছবি তোলার ক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়তে পারে বিএস-২। আবার যুক্তরাষ্ট্রের কাউন্টারিং অ্যামেরিকাস অ্যাডভারসারিস থ্রু স্যাংশনস অ্যাক্ট (কাটসা) সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণেও রাশিয়ার তৈরি স্যাটেলাইট ব্যবহার করে ইউরোপ বা আমেরিকার দেশগুলো নিজেদের সীমানার ভেতরে ছবি তোলার অনুমতি নাও দিতে পারে।

সেক্ষেত্রে যে উদ্দেশ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ তৈরি করা হচ্ছে, তার বড় অংশই ব্যাহত হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে দফায় দফায় নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধের পরও র্যাবের বিষয়ে নেয়া সিদ্ধান্ত থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার সরে আসেনি। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের পরিধির বিস্তার ঘটাতে চায় বাংলাদেশ। আর সেজন্যই রাশিয়ার সঙ্গে এ চুক্তির মাধ্যমে সম্পর্ক আরো জোরদারের কথা ভাবা হচ্ছে।
এই বিভাগের আরও খবর
বিটিসিএল ডোমেইন সার্ভারে ত্রুটি, অনেক ওয়েবসাইট বন্ধ!

বিটিসিএল ডোমেইন সার্ভারে ত্রুটি, অনেক ওয়েবসাইট বন্ধ!

ভোরের কাগজ
ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট কোন কোন যন্ত্রে লগইন করা আছে বুঝবেন যেভাবে

ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট কোন কোন যন্ত্রে লগইন করা আছে বুঝবেন যেভাবে

প্রথমআলো
সাধ এবং সাধ্যের অপূর্ব সমন্বয় ‘সিম্ফনি জেড৭০’

সাধ এবং সাধ্যের অপূর্ব সমন্বয় ‘সিম্ফনি জেড৭০’

ভোরের কাগজ
ইলন মাস্ক বাদ, কে হলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী?

ইলন মাস্ক বাদ, কে হলেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী?

জনকণ্ঠ
এই চশমায় আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

এই চশমায় আছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

প্রথমআলো
আজ সারাদেশে বিঘ্নিত হবে ইন্টারনেট সেবা

আজ সারাদেশে বিঘ্নিত হবে ইন্টারনেট সেবা

ভোরের কাগজ
ট্রেন্ডিং
  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া

  • অবিশ্বাস্য কীর্তিতে হাজার রানের ক্লাবে এনামুল বিজয়