আফগান যুদ্ধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে অনেকদিন ধরেই। তার পরও মার্কিন সৈন্যদের বাগরাম বিমানঘাঁটি ত্যাগের বিষয়টি কাবুলের সামরিক কর্মকর্তাদের জন্য অনেকটাই আকস্মিক ছিল। এমনকি ঘাঁটির নবনিযুক্ত আফগান কমান্ডারও বলছেন, বিষয়টি নিয়ে তিনিও কিছু জানতেন না। কাউকে কিছু না জানিয়েই রাতের আঁধারে ঘাঁটি ত্যাগ করেছে মার্কিন সৈন্যরা।
দীর্ঘ দুই দশক ধরে আফগানিস্তানে মার্কিন সমরাভিযানের কেন্দ্রবিন্দু ছিল বাগরাম বিমানঘাঁটি। মার্কিন সেনাদের আকস্মিক ঘাঁটি ত্যাগ মানসিকভাবে দুর্বল করে ফেলেছে কাবুলের অনুগত সামরিক বাহিনীকে। অন্যদিকে প্রবল হয়ে উঠছে তালেবানরা।
বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে একের পর এক জেলা দখল করে নিচ্ছে তালেবানরা। মাত্র দুদিন লড়াই চালানোর পর রণে ভঙ্গ দিয়ে তাজিকিস্তান সীমান্ত হয়ে পালিয়ে গিয়েছে কয়েকশ আফগান সৈন্য। বাদাখশান ও কান্দাহার প্রদেশের বেশকিছু জেলা এরই মধ্যে দখল করে নিয়েছে তালেবানরা। এর আগে গত সপ্তাহে তারা আফগানিস্তানের মধ্যাঞ্চলীয় শহর গজনিতে হামলা করে। শহরটি দখল করতে পারলে কাবুল ও কান্দাহারের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী হাইওয়ের বড় একটি অংশে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হবে তালেবানদের।
আফগান সামরিক কর্মকর্তারা বলছেন, শেষ মার্কিন সৈন্যটি বাগরাম ত্যাগের ২ ঘণ্টারও বেশি সময় পর তারা বিষয়টি জানতে পারেন। রাতের বেলায় ঘাঁটি ত্যাগের আগে তারা সেখানকার বিদ্যুতের সংযোগ ছিন্ন করে দেয়।
বাগরাম ঘাঁটি ছেড়ে যাওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র শুক্রবার প্রথম এ তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়। ঘাঁটির নতুন আফগান কমান্ডার জেনারেল মির আসাদুল্লাহ কোহিস্তানি বার্তা সংস্থা এপিকে এ বিষয়ে বলেন, আমরা গুজব শুনতে পাচ্ছিলাম মার্কিন সৈন্যরা বাগরাম ত্যাগ করেছে। পরদিন সকাল ৭টা নাগাদ আমরা নিশ্চিত হই তারা ঘাঁটি ছেড়ে চলে গিয়েছে।
আফগান সৈন্যরা ঘাঁটির পরিত্যক্ত এয়ারফিল্ডটি এরই মধ্যে দখল নিয়ে নিয়েছে। তাদের তোলা অভিযোগগুলো সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেননি মার্কিন সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল সনি লেগেট। বরং সার্বিক বিষয় নিয়ে পেন্টাগনের আগে প্রকাশিত বিবৃতিরই পুনরাবৃত্তি করেছেন তিনি।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, আফগানিস্তানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোর আনুষ্ঠানিক হস্তান্তর কার্যক্রম এখন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া আফগানিস্তান ত্যাগের বিষয়টি কাবুলের নেতাদের সঙ্গে সমন্বয়ের ভিত্তিতেই সম্পন্ন করা হচ্ছে।
বাগরাম ঘাঁটিতে মার্কিন সৈন্যদের পরিত্যক্ত এয়ারফিল্ড ও অন্যান্য স্থাপনা পরদিন সকালেই দখলে নেয় আফগান বাহিনী। তবে এরই মধ্যে ঘাঁটির খালি ব্যারাকগুলোয় লুটপাট চালায় দুষ্কৃতকারীরা। পরে তাদের সেখান থেকে বের করে কাবুলের সেনাবাহিনী। এ বিষয়ে আফগান সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা প্রথমে ভেবেছিলাম ওরা তালেবান।
তবে তালেবানদের পক্ষে ঘাঁটিটি দখল করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন জেনারেল কোহিস্তানি। তিনি বলেন, তালেবানরা লড়াইয়ে এখন যতটাই সাফল্য অর্জন করুক না কেন, আফগানিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বাহিনী দুর্ভেদ্য ঘাঁটিটি দখলে রাখতে সক্ষম।
যুক্তরাষ্ট্রের মতো মিত্র ন্যাটো জোটভুক্ত দেশগুলোও আফগানিস্তান থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। গত সপ্তাহের মধ্যেই অধিকাংশ ন্যাটো সৈন্য অনেকটা নীরবেই দেশটি ত্যাগ করেছে। তবে কাবুল হামিদ কারজাই আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব হস্তান্তরসংক্রান্ত চুক্তি সই শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত মার্কিন সৈন্যদের আফগানিস্তান থেকে পুরোপুরি সরিয়ে আনা হবে না বলে জানা গিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, তুরস্ক বিমানবন্দরটির নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে।
তালেবানদের সঙ্গে যুদ্ধে ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে আফগান সেনাবাহিনী। যদিও যুদ্ধক্ষেত্রে সরকারি বাহিনীর ক্রমাগত পরাজয়ের বিষয়ে জেনারেল কোহিস্তানির মন্তব্য হলো যুদ্ধে কখনো কখনো এক কদম এগিয়ে যাওয়ার পর কয়েক কদম পিছিয়ে আসতে হয়।
কোহিস্তানির দাবি, আফগান সামরিক বাহিনী এখন তাদের কৌশলে পরিবর্তন আনছে। এক্ষেত্রে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি জেলায়ই সামরিক গুরুত্ব দিচ্ছে তারা। অন্যদিকে যেসব অঞ্চলের দখল হারিয়েছে সরকারি বাহিনী, সেগুলোও অদূরভবিষ্যতে পুনর্দখল করে নেয়া হবে।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়