করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। প্রাণঘাতী ভাইরাসটির নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়েও চিন্তার শেষ নেই। পরিস্থিতি যাই হোক আপাতত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কোনো পরিকল্পনা নেই সরকারের। বর্তমানের মতোই চলবে সীমিত পরিসরে ক্লাস। আর শিক্ষার্থীদের টিকার বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যেই ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা হবে। টিকা গ্রহণ ছাড়া ক্লাসে উপস্থিত হতে পারবেন না শিক্ষার্থীরা।
রোববার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বৈঠকে বসেছিল করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকারের গঠিত কারিগরি কমিটির সঙ্গে।
বৈঠকের সিদ্ধান্তসমূহ জানাতে সোমবার সংবাদ সম্মেলন ডাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি করোনা থেকে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ রাখতে সরকারের পরিকল্পনা তুলে ধরেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এখনই বন্ধ হচ্ছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। যখন আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলাম তখন সংক্রমণের হার ৭-এর মতো ছিল। এখনো তাই আছে। কিন্তু এখন শিক্ষার্থীরা বেশি নিরাপদ। এখন শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা হচ্ছে। টিকা প্রদান আরও জোরদার করা হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এখন থেকে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে ভাবতে হবে না। শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র বা রেজিস্ট্রেশন কার্ড দেখালেই টিকা পাবেন। আবার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক তালিকা তৈরি করে শিক্ষার্থীদের টিকা দিতে নিয়ে যাচ্ছেন সেক্ষেত্রে সমস্যার মুখে পরছেন না শিক্ষার্থীরা। ১২ থেকে ১৮ বছরের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটি ১৬ লাখ ২৩ হাজার ৩২২। প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৪৪ লাখ। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৪ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৪ জন। মোট টিকা পেয়েছেন ৪৮ লাখ ১৯ হাজার ৫৫৪ জন। প্রথম ডোজ পাননি ৭৫ লাখ ৫৪ হাজার ৬০৬ শিক্ষার্থী।
ডা. দীপু মনি বলেন, আমরা পরিকল্পনা করেছি ৩৯৭টি উপজেলায় ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে টিকাদান শেষ করবো। আর সব স্থানে প্রথম ডোজ টিকা কার্যক্রম শেষ হবে ৩১শে জানুয়ারির মধ্যে।
মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ১২ থেকে ১৮ বছরের ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী টিকার আওতায় আসেনি। সর্বোচ্চ ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থী টিকা পেয়েছেন বাগেরহাটের শিক্ষার্থীরা, সর্বনিম্ন ৪ শতাংশ করে টিকা পেয়েছেন নরসিংদী ও লালমনিরহাটের শিক্ষার্থীরা।
ডা. দীপু মনি বলেন, যাদের ঝুঁকি বেশি বা টিকা নিতে পারবেন না তাদের ক্লাসে না এসে অনলাইনে ক্লাস করতে পারবেন। টিভিতে যে ক্লাস হয় সেগুলো দেখুন। এসাইনমেন্টগুলোও স্বাস্থ্যবিধি মেনে জমা দিন। ঝুঁকিপূর্ণ শিক্ষার্থী বলতে আমরা ক্যান্সার, কিডনি ও অ্যাজমার সমস্যা যাদের আছে তাদের বলছি। শুধু শিক্ষার্থী না শিক্ষকদের কারও কারও এমন সমস্যা থাকতে পারে।
ওমিক্রন নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ওমিক্রনে কেউ আক্রান্ত হলে পুরো পরিবার আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্তের পরিবারে শিক্ষার্থী থাকলে তাদেরও আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আমাদের সবদিক দেখতে হবে। গত দেড়-দুই বছরের ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করতে হবে। নতুন করে যাতে ঘাটতি তৈরি না হয় সচেষ্ট থাকতে হবে। আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যতক্ষণ থাকবে শিক্ষার্থীরা ততক্ষণ তাদের সুরক্ষিত রাখার ব্যবস্থা করতে পারি।
কওমি মাদ্রাসায় মনিটরিংয়ের ঘাটতি রয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, কওমি মাদ্রাসাগুলো যেহেতু আমাদের নিবন্ধিত না তাদের সরাসরি মনিটরিং করা শক্ত। আশা করছি, স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে মনিটরিং করতে পারবো। এ বিষয়ে দুই একদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আমরা এখনো যতটা খবর পাচ্ছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার কাজ চলছে। তবে মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং আরও জোরদার করা হবে। আগে স্কুলে মনিটরিং ছিল। এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও করবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকারি, বেসরকারি, জাতীয়, উন্মুক্ত ও আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী আছে ৪৪ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫১ জন। এদের মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ২৩ লাখ ২৮ হাজার ৪৬৮ জন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১৭ লাখ ১৩ হাজার ৩০২ জন। আর নিবন্ধন করেছেন ২৭ লাখ ৩১ হাজার ২৮৭ জন। তার মধ্যে ২৯ লাখ আছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। জাতীয়, উন্মুক্ত ও ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের একটা বড় সংখ্যা আছে। পাবলিক এবং প্রাইভেটে ৯৫ ভাগ টিকা দেয়া সম্পন্ন হয়েছে। এই তিনটা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আগামীকাল (আজ) আমরা বসবো। কীভাবে তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে টিকা দেয়া যায় সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো। পরামর্শক কমিটির সঙ্গে ফের পরের সপ্তাহে বৈঠক হবে বলেও জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে চলতি বছরের এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আপনারা গুজবে কান দেবেন না। পরীক্ষা নেবে কে? পরীক্ষা নেবে শিক্ষাবোর্ড। ২০২২ সালে আমরা পরীক্ষা নিতে চাই। আমরা সময়মতো পরীক্ষা নিতে পারবো না। কারণ তারা সেভাবে ক্লাস করতে পারেনি। আমরা একটা আভাস দিয়েছি বছরের মাঝামাঝি সময়ে নেব। এখনো চিন্তা তাই। পরীক্ষা হবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। তবে সুনির্দিষ্ট তারিখ দেয়া এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। আশা করি, ২/৩ মাস আগে বলতে পারবো কখন পরীক্ষা হবে। পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে বছরের মাঝামাঝি সময়ে নেয়ার ইচ্ছা আছে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের দাবিতে আন্দোলন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যখন সভা করছিল তখন শিক্ষার্থীরা বাইরে থেকে গেট আটকে দেয়। এরই প্রতিবাদে শিক্ষকরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করছেন। এই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গতকাল (গত রোববার) কথা হয়েছে। তারা তাদের অবরোধ তুলে নিয়েছেন। খুব শিগগিরই অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে আসবে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক সবাই ভ্যাকসিনেটেড সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। শিক্ষার্থীদের চাওয়াকে আমি সমীহ করি। কিন্তু চাওয়া তো যৌক্তিক হতে হবে।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়