শিশুরা শিখছে আনন্দে, হতে পারে রোল মডেল

বাড়ি গিয়ে নয় আনন্দ আয়োজনে পড়ালেখা চলছে বিদ্যালয়ের ভেতরেই। বিভিন্ন উপকরণের মাধ্যমে উজ্জীবিত করে শেখানো হয় শিক্ষার্থীদের। বেশ কিছু উদ্যোগের কারণে ব্যতিক্রমী হয়ে ওঠেছে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার জিলবুনিয়া কামলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিশুদের আকর্ষণ করতে সেখানে রয়েছে— দোলনা, প্রাণি জাদুঘর, দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা, অ্যাকুরিয়াম, বাগানসহ বিভিন্ন খেলার সামগ্রী। রয়েছে শহীদ মিনার, বিভিন্ন মানচিত্র, সুসজ্জিত শ্রেণিকক্ষ, মহানুভবতার দেয়াল। পাশাপাশি বিদ্যালয়জুড়ে শোভা পাচ্ছে বিভিন্ন মনিষীর ছবি আর শিক্ষণীয় বাণী।

নৈতিকতা, পড়াশোনা, শিক্ষাদান, উপস্থিতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বিদ্যালয়টি। শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, এইভাবে সারাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হলে প্রাথমিক শিক্ষার মান বদলে যাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার জিলবুনিয়া কামলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়টির শিক্ষা পদ্ধতি ও নিয়মনীতিতে রয়েছে কিছুটা ভিন্নতা। এর আগে উপজেলার ভিতর ফলাফল বিপর্যয়ে শীর্ষে থাকা বিদ্যালয়টিতে ২ বছর বন্ধ থাকে শিক্ষকদের বেতনবৃদ্ধি। ২০০৯ সালে এই বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন মো. মনিরুজ্জামান। এরপর থেকেই বদলে যেতে থাকে বিদ্যালয়ের পরিবেশ, ফলাফল ও নিয়মনীতি। শিক্ষার্থীদের জন্য নেওয়া বেশ কিছু ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।

সরেজমিনে বিদ্যালয়টিতে গিয়ে দেখা গেছে, সরকারি সহায়তার পাশাপাশি স্থানীয়দের সহযোগিতায় পাল্টে গেছে শিক্ষার পরিবেশ। সিসি ক্যামেরায় নিয়ন্ত্রিত বিদ্যালয়টিতে শিশুদের আকর্ষণ করতে রয়েছে— দোলনা, সরাৎ, ঢেকিকল, প্রাণি জাদুঘর, ফুলের ও সবজি বাগান, দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারাসহ বিভিন্ন খেলার সামগ্রী। রয়েছে বিদ্যালয়ের নামাঙ্কিত পাথরের ফলক, শহীদ মিনার, বিভিন্ন মানচিত্র, সুসজ্জিত শ্রেণিকক্ষ, মহানুভবতার দেয়াল, শিক্ষামূলক বিভিন্ন চার্ট, বিভিন্ন মনিষীর ছবি আর দেয়ালজুড়ে শোভা পাচ্ছে শিক্ষণীয় বাণী। আছে শেখ রাসেল স্মৃতি ডিজিটাল কম্পিউটার ল্যাব, ছাদে আকর্ষণীয় ফলদ গাছের সমাহার, বিভিন্ন প্রজাতির মাছের অ্যাকুরিয়াম। স্কুল শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন পরিষ্কার করে তাদের ক্যাম্পাস ও বাগান।

বিদ্যালয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন ও শপথ বাক্য পাঠের পর ‘প্রতিদিন কিছু শিখি’ নামের বোর্ডের কাছে চলে যাবে শিক্ষার্থীরা। একটি শিক্ষণীয় বাক্য লেখা থাকে সেখানে। প্রত্যেকে বাক্যটি পড়ে শ্রেণিকক্ষে যাবে। শ্রেণিকক্ষের সামনে রয়েছে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ছবিসহ নাম, বাবা-মা’র নাম ও মোবাইল নাম্বার। কেউ অনুপস্থিত থাকলে শ্রেণিশিক্ষকের ফোন চলে যাবে অভিভাবকের কাছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান তার কক্ষে বসেই স্কুলের বিভিন্ন স্থানে বসানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখতে পান।

শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার মিতু বলেন, বিদ্যালয়ে পড়ালেখার পাশাপাশি অনেক খেলার সামগ্রী আছে। তাছাড়া শিক্ষকরা আদর করে মা বলে ডেকে তাদের লেখাপড়া করান। তাই প্রতিদিনই সে বিদ্যালয়ে আসে।

শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন মিরাজ জানায়, বিদ্যালয়টি কত ভালো তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। প্রতিদিন বিদ্যালয়ে না আসলে ভালো লাগে না। বিভিন্ন শিক্ষা সামগ্রীর মাধ্যমে এখানে পড়ালেখা করানো হয়।

ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী জান্নাতি খাতুন জানায়, সে আগে ঢাকার একটি বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতো। বাবা-মা তাকে গ্রামে এনে স্কুলে ভর্তি করবে, শুনে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। শহরের পরিবেশ আর গ্রামের লেখাপড়া কী এক হবে— এই ভাবনা ছিল। কিন্তু এই বিদ্যালয়ে এসে সেই ধারনা পাল্টে যায়। গ্রামেই শহরের চেয়ে ভালো পরিবেশে সে লেখাপড়া করছে।

শুধু খাদিজা বা মিরাজ নয়, বিদ্যালয়ের শিশু থেকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পছন্দের স্কুল জিলবুনিয়া কামলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সহকারী শিক্ষক উম্মে কুলছুম জানান, আমি বিভিন্ন বিদ্যালয়ে আগে শিক্ষাকতা করেছি। তাছাড়া অনেক বিদ্যালয় দেখেছি। কিন্তু জিলবুনিয়া কামলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো এমন সুন্দর পরিবেশ আমি আগে দেখিনি। স্কুলের ভেতরের-বাইরের পরিবেশ, শিক্ষা উপকরণ, প্রধান শিক্ষকের স্কুল পরিচালনার কৌশল সম্পূর্ন ব্যতিক্রম।

অভিভাবক বিপ্লব শিকদার বলেন, শুধু বিদ্যালয় না, এটি যেন খেলার মাঠ। ছেলে এখন বাড়িতেই থাকতে চায় না, এমন কি শুক্র-শনিবারও স্কুলে আসতে চায়। প্রতিদিন নীতিবাক্য পড়ার মাধ্যমে তাদের মধ্যে ভালো বোধ তৈরি হচ্ছে।

মোরেলগঞ্জ উপজেলার রামচন্দ্রপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আলিম হাওলাদার বলেন, প্রত্যন্ত গ্রামে অবস্থিত এই বিদ্যালয়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে। বিদ্যালয়টি আমার ইউনিয়নে অবস্থিত— তাই অনেক ভাল লাগে। বিদ্যালয়টিকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেন এই জনপ্রতিনিধি।

জিলবুনিয়া কামলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এলাকাবাসীকে সম্পৃক্ত করে ব্যতিক্রমী কিছু করার চেষ্টা করা হয়েছে। ভালো কোনও কিছু করলে এলাকার মানুষ অবশ্যই সহায়তা করেন। শিক্ষার্থীদের সন্তানের মতো শিক্ষা দেওয়া হয়।
এই বিভাগের আরও খবর
টাঙ্গাইলে বিদ্যালয়ে ক্লাস নিলেন উপদেষ্টা

টাঙ্গাইলে বিদ্যালয়ে ক্লাস নিলেন উপদেষ্টা

বাংলা ট্রিবিউন
পেছালো ঢাবির একটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ

পেছালো ঢাবির একটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ

দৈনিক ইত্তেফাক
লক্ষ্মীপুরে সেতু ধসে যাতায়াত বন্ধ চার দিন, বাতিল হলো একটি কলেজের পরীক্ষা

লক্ষ্মীপুরে সেতু ধসে যাতায়াত বন্ধ চার দিন, বাতিল হলো একটি কলেজের পরীক্ষা

প্রথমআলো
হলগুলোতে ছাত্রদলের পোস্টার, মধ্যরাতে ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের মিছিল

হলগুলোতে ছাত্রদলের পোস্টার, মধ্যরাতে ঢাবিতে শিক্ষার্থীদের মিছিল

সমকাল
ঢাবিতে মুক্তিযুদ্ধের নাতি-নাতনির কোটা বাতিল

ঢাবিতে মুক্তিযুদ্ধের নাতি-নাতনির কোটা বাতিল

ভোরের কাগজ
এনটিআরসিএর ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি আসছে, নিয়োগ হবে এক লাখ শিক্ষক

এনটিআরসিএর ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি আসছে, নিয়োগ হবে এক লাখ শিক্ষক

দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস
ট্রেন্ডিং
  • সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে 'বস্তায় বস্তায় ঘুষ' নেওয়ার অভিযোগ: দুদকের অনুসন্ধান শুরু

  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া