গত ১৫ ও ১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হওয়ার পর পেরিয়েছে পুরো এক মাস। এখনো নির্বাচনের ফল ঘোষণা হয়নি। মূলত সম্পাদকের পদ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এ অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। আইনজীবীদের এ নির্বাচনের জন্য গঠিত নির্বাচন পরিচালনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামান পদত্যাগ করায় এ নিয়ে জটিলতা আরও ঘনিভূত হয়। এখন প্রশ্ন উঠেছে, সম্পাদক পদের ভোট ফের গণনা করা হবে নাকি ভোট গণনা ছাড়াই ফল ঘোষণা করা হবে। এ নিয়ে এক পক্ষ বলছে ভোট আবার গণনা করতে হবে। আবার অন্য পক্ষ বলছে ভোট পুনর্গণনা বা রি-কাউন্টিংয়ের কোনো নিয়মই নেই।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ অচলাবস্থা কাটাতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সম্পাদকরা বৈঠকে বসেছিলেন। পরে তাদের পক্ষ থেকে কয়েকজন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধানের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। এই দুই বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে তা পুরোপুরি জানা না গেলেও এখনো কোনো দৃশ্যমান সমাধান আসেনি।
এদিকে গত ৩১ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট বারের কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এর পরে কোনোভাবেই কমিটির মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ নেই। আবার এর মধ্যে নতুন কমিটিও আসেনি। ফলে সুপ্রিম কোর্ট বার এখন কার্যত কমিটিশূন্য।
গত ১৫ ও ১৬ মার্চ দুই দিনে এ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ হয়। ১৭ মার্চ (বৃহস্পতিবার) বিকেলে ভোট গণনা শুরু হয়, চলে রাত পর্যন্ত। রাত ১টার দিকে বিভিন্ন টেবিল থেকে আসা প্রার্থীদের ভোট একত্র করে যখন যোগ করার কাজ চলছিল তখন ফলাফল ঘোষণার আগেই বিএনপি-সমর্থিত নীল প্যানেলের প্রার্থী মো. রুহুল কুদ্দুস (বর্তমান সম্পাদক) এগিয়ে ছিলেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী বেশ কয়েকজন আইনজীবী জানান।
তারা আরও বলেন, এ অবস্থায় অনিয়মের অভিযোগ তুলে সেদিন (বৃহস্পতিবার) রাত ১টার দিকে সম্পাদক পদে পুনরায় ভোট গণনা চেয়ে আবেদন করেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থী অ্যাডভোকট আবদুন নূর দুলাল। তার আবেদনের ভিত্তিতে সম্পাদক পদে পুনরায় ভোট গণনার দাবি তোলেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সাদা প্যানেলের সমর্থকরা। অন্যদিকে ফলাফল ঘোষণার দাবি তোলেন বিএনপি-সমর্থিত নীল প্যানেলের সমর্থকরাও। এ নিয়ে সেদিন মধ্যরাতের পরেও পক্ষে-বিপক্ষে চলে হইচই ও হট্টগোল। অনেকে আহ্বায়কের পদত্যাগের দাবিও তোলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীরা বলেন, এ সময় সমিতির দক্ষিণ হলে অনেকটা অবরুদ্ধ অবস্থায় পড়েন নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত উপ-কমিটির আহ্বায়ক এ ওয়াই মসিউজ্জামানসহ অন্যরা। রাত সাড়ে তিনটার দিকে এ ওয়াই মসিউজ্জামান দক্ষিণ হল থেকে বেরিয়ে যান।
বেরিয়ে যাওয়ার আগে তিনি জানান, সম্পাদক পদে পুনরায় ভোট গণনা চেয়ে করা আবেদন দুই পক্ষের উপস্থিতিতে পরের দিন বিকেলে অর্থাৎ শুক্রবার (১৮ মার্চ) বিকেল তিনটায় নিষ্পত্তি করা হবে।
প্রকাশ্যে এ ঘোষণা দিলেও স্বাস্থ্যগত কারণ উল্লেখ করে এর আগেই (বৃহস্পতিবার রাতে) তিনি সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে যান।
ঘোষণা অনুযায়ী শুক্রবার বিকেলে প্রার্থী আবদুন নূর ও মো. রুহুল কুদ্দুস উপস্থিত হন। কিন্তু কমিটির প্রধান এ ওয়াই মসিউজ্জামান উপস্থিত হননি। এর মধ্যে খবর আসে সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক পদত্যাগ করেছেন। এর পর থেকে বিষয়টি সেভাবেই ঝুলে আছে।
এ নিয়ে সাদা প্যানেলের প্রার্থী অ্যাডভোকেট আব্দুন নুর দুলাল জাগো নিউজকে বলেন, ভোট গণনার সময় টেবিলের নিচে ব্যালটের একটি বান্ডেল পড়েছিল। সেটি উঠানোর পরে দেখা গেলো একশ ভোট ছিল সেখানে। এছাড়া ভোটের কাউন্টিং যখন শুরু হবে তখন আমাকে জানানো হয়নি কয়টি টেবিলে কয়জন কাউন্টিংয়ে বসবেন। আবার অ্যানেক্স হলের দক্ষিণ পাশের যে টেবিলে ৬টি বান্ডেল থাকার কথা সেখানে দেখি সাতটি বান্ডেল। এ নিয়ে প্রশ্ন করলে তারা জানান, পাশের টেবিল থেকে দিয়েছে, তারা গণনা করতে পারছে না। এ নিয়ে যখন আমি আপত্তি তুলেছি তখন তারা সেই বান্ডেল ওই টেবিলে ফেরত দিয়ে আসছে।
আব্দুন নুর দুলাল বলেন, আমার ধারণা ওই টেবিলেই একটা বড়ো ধরনের মিসইউজ হয়ে গেছে। এরকম বিভিন্ন টেবিলে যখন এই অবস্থা শুরু হয়ে গেছে তখন আর আমি হাল ধরে রাখতে পারিনি। এর মধ্যে সব টেবিলে ঘুরে ঘুরে গণনা দেখা আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। সাতশর মতো ভোট গণনা তখনো বাদ ছিল। এ পর্যায়ে আমি আবেদন জমা দেই সম্পাদক পদের ভোট পুনর্গণনার জন্য।
এ নিয়ে নীল প্যানেলের সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল জাগো নিউজকে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের গঠনতন্ত্রে নির্বাচনের ভোট রি-কাউন্টিংয়ের কোনো বিধান নেই। যে কাজ সংবিধানে নাই সে রকম কোনো কাজ নির্বাচন কমিশন করবেন না। এ রকম কোনো কাজ তারা করবেন না, এটা হলো আমার প্রত্যাশা। ভোট গণনার এটা কোনো আবদার না। ভোট গণনা যেহেতু সাংবিধানিক, সংবিধানের বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত উনারা নেবেন না এটা আমার বিশ্বাস।
পরিস্থিতি সমাধানে সিনিয়র আইনজীবীরা
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের এ অচলাবস্থা নিয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি, অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচন পরবর্তী উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আমি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে কোনো মন্তব্য করবো না বা করতে চাই না।
পরিস্থিতির বিষয়ে সাবেক মন্ত্রী, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ও সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা জাগো নিউজকে বলেন, আমরা বসেছিলাম, কথা হয়েছে। যেভাবেই হোক এটার একটা সমাধান হওয়া উচিত। এটা হচ্ছে রেসপনিসিবিলিটি অফ দ্য ইলেকশন কমিশনার। যিনি সাব-কমিটির চেয়ারম্যান। তিনি রাগ, অভিমান করে রয়েছেন। আমরা বললাম চেষ্টা করা হোক রাগ ভাঙানোর। উনি ভালো লোক। এর আগেও তিনি বারের নির্বাচন ভালোভাবে করেছেন।
সম্পাদক পদের ভোট গণনার দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ যদি কোনো ডিসপিউট নিয়ে দাবি তুলেন তাহলে কমিটির প্রধানের দায়িত্ব হলো এটি সমাধান করা। এটা নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধানের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। একজনের দাবি থাকলে ভোট রিকাউন্ট করে এটাকে শেষ করা উচিত। রিকাউন্ট করে তাড়াতাড়ি রেজাল্ট ঘোষণা করা উচিত।
এ বিষয়ে নির্বাচনে সাদা প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির এবং নীল প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সম্পাদকরা বসেছিলেন। এখনো কোনো সমাধান হয়নি।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়