রোমাঞ্চকর এক রাত উপভোগ করলো ফুটবল দুনিয়া। কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম দুটি ম্যাচই শেষ হয়েছে টাইব্রেকার ভাগ্যে দারুণ নাটকীয়তায়। প্রথম ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরেছে ব্রাজিল। আর দ্বিতীয় ম্যাচে হল্যান্ডকে হারিয়ে দীর্ঘ ৩৬ বছরের শিরোপা-খরা কাটিয়ে স্বপ্নের বিশ্বকাপ জয়ের পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেল মেসি-মার্টিনেজরা। কোয়ার্টার ফাইনালের বাধা অতিক্রম করে যে কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে আর্জেন্টিনা। শুক্রবার শেষ আটের লড়াইয়ে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত ২-২ ব্যবধানে সমতায় থাকায় টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হল্যান্ডকে হারিয়ে টুর্নামেন্টের শেষ চারের টিকিট নিশ্চিত করে। আলবিসেলেস্তেরা সেমিফাইনালের টিকিট কাটার দিনে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিয়েছে তাদের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল। শেষ আটের লড়াইয়ে ক্রোয়েশিয়ার কাছে অতিরিক্ত সময়ে ১-১ গোলে সমতায় থাকার পর টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে হেরে কাতার বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
২০০২ সালে সর্বশেষ বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছিল ব্রাজিল। এরপর বিশ্বকাপ আসলেই ফেভারিটের ট্যাগ গায়ে মাখিয়ে মিশন শুরু করে সেলেসাওরা। তার ব্যতিক্রম ছিল না কাতার বিশ্বকাপেও। কিন্তু দুর্ভাগ্য নেইমার-সিলভাদের! হেক্সা মিশনে আরও একবার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল পেলে-রোনাল্ডোর উত্তরসূরীদের। কাতার বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিল তিতের দল। শুক্রবার পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের টাইব্রেকারে হারিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। কোয়ার্টারেও ক্রোয়াটদের জয়ের নায়ক গোলরক্ষক সেই ডোমিনিক লিভাকোভিচ। যিনি ম্যাচের শুরু থেকেই নেইমার-রিচার্লিসনদের একের পর এক আক্রমণ ঠেকিয়ে দেন। বলা চলে তার অসাধারণ নৈপুণ্যেই ব্রাজিল-ক্রোয়েশিয়া ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষ হয় গোলশূন্য সমতায়।
ফলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ের ১০৫+১ মিনিটে নেইমার জাদুতে প্রথম গোলের দেখা পায় ব্রাজিল। কিন্তু এগিয়ে যাওয়ার এই উচ্ছ্বাস বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি তিতের দল। বরং ১১৭ মিনিটে ব্রুনো পেটকোভিচের দর্শনীয় গোলে ম্যাচে ফিরে ক্রোয়েশিয়া। ফলাফল দাঁড়ায় ১-১। যে কারণে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। সেখানেও দেয়াল হয়ে দাঁড়ান ক্রোয়াটদের গোলরক্ষক। ব্রাজিলের প্রথম শট নিতে আসা রড্রিগোর শট দারুণভাবে রুখে দেন লিভাকোভিচ। এরপর মারকুইনোসের শট গিয়ে লাগে সাইড বারে। ফলে ৪-২ গোলে জিতে সেমিফাইনালে উঠে জøাতকো দালিচের দল। অন্যদিকে আরও একবার বিশ্বকাপ থেকে অশ্রুসিক্ত বিদায় নেয় সেলেসাওরা।
শুক্রবার এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে কাতার বিশ্বকাপের প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হয় ব্রাজিল। একদিকে পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আরেকদিকে রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট; শুরু থেকেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে দুই দল। তবে ছন্দ খুঁজে পাচ্ছিল না যেন কোন দলই। বল দখলে কিছুটা এগিয়ে ছিল তিতের দল। পক্ষান্তরে ক্রোয়েশিয়াও লড়াই চালিয়ে যায় সমানে সমান। ম্যাচ শুরুর ৫ মিনিটে গোলের জন্য প্রথম শট নেয় সেলেসাওরা। ভিনিসিয়াস জুনিয়রের শট ঠেকিয়ে দেন ক্রোয়াট গোলরক্ষক। ৮ মিনিট পর প্রথম গোলের সুযোগ পায় ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেনি তা। ৪২ মিনিটে বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রি কিক পায় ব্রাজিল। কিন্তু সরাসরি গোলরক্ষকের হাতে বল পাঠান নেইমার। ফলে গোলশূন্য সমতায় থেকেই বিরতিতে যায় দুই দল।
বিরতির পর মাঠে নেমেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে খেলে তিতের শিষ্যরা। কিন্তু পরপর দুটি আক্রমণ নিলেও সফল হাতে পারেননি নেইমার-ভিনিসিয়াসরা। পাল্টা আক্রমণে যায় ক্রোয়েশিয়াও। কিন্তু প্রতিপক্ষের জাল খুঁজে পেতে ব্যর্থ হয় জøাতকো দালিচের শিষ্যরা। দ্বিতীয়ার্ধের ৫৪ মিনিটে দারুণ সুযোগ পায় ব্রাজিল। কিন্তু নেইমার প্রতিপক্ষের গোলরক্ষককে একা পেয়েও বল জালে জড়াতে পারেননি। পরের মিনিটে রিচার্লিসনের শটও প্রতিহত করে দেয় ক্রোয়েশিয়ার শক্তিশালী রক্ষণভাগ। ৬৩ মিনিটে ভিনিসিয়াসের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন রড্রিগো। আক্রমণ চালিয়ে যায় সেলেসাওরা। ৬৬ মিনিটে পাকেতার এবং ৭৫ মিনিটে নেইমারেরর শটও বা পায়ে রুখে দেন ক্রোয়াট গোলরক্ষক ডোমিনিক লিভাকোভিচ। ৭৯ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান স্ট্রাইকারদের সম্মিলিত আক্রমণও প্রতিহত করে দেন তিনি। দ্বিতীয়ার্ধের ৮৩ রিচার্লিসনকে তুলে পেদ্রোকে মাঠে নামান তিতে। এই সময়ে গোলের জন্য মরিয়া হয়েই খেলতে থাকে তার শিষ্যরা। কিন্তু একের পর এক আক্রমণে ক্রোয়েশিয়াকে দিশেহারা করলেও প্রতিপক্ষের জাল খুঁজে পায়নি পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ফলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। আর অতিরিক্ত সময়ের ১০৫+১ মিনিটেই আসে ব্রাজিলিয়ান ভক্তদের বহুল কাক্সিক্ষত মুহূর্ত।
ক্রোয়েশিয়ার কয়েকজন ডিফেন্ডারকে কাটিয়েই দারুণ কৌশলগত দক্ষতায় গোলরক্ষক ডোমিনিক লিভাকোভিচকেও পরাস্থ করেন ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার। সেইসঙ্গে ব্রাজিলের জাতীয় দলের জার্সিতে করা স্বদেশী কিংবদন্তি পেলের ৭৭ গোলের রেকর্ডে ভাগ বসান তিনি। নেইমারের গোলের সৌজন্যে সেমিফাইনালেরও স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছিল ব্রাজিলিয়ান ভক্তরা। কিন্তু ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ের ১১৭ মিনিটে ব্রুনো পেটকোভিচ অসাধারণ শটে দর্শনীয় এক গোল করে সমতায় ফেরান ক্রোয়েশিয়াকে। ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের স্তব্ধ করে গ্যালারিতে তখন উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসে ক্রোয়াটরা।
এরপর ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। টাইব্রেকারে প্রথমে শট নিয়েই ক্রোয়েশিয়াকে ১-০ গোলে এগিয়ে দেন নিকোলা ভøাসিচ। কিন্তু প্রথম শট নিতে এসেই মিস করে বসেন ব্রাজিলিয়ান তারকা রড্রিগো। এরপর ক্রোয়েশিয়ার মাজের লক্ষ্যভেদ করলে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে সেলেসাওরা। ক্যাসেমিরো ঠিকই প্রতিপক্ষের জাল খুঁজে পেলে ব্যবধান দাঁড়ায় ২-১। পরে ক্রোয়েশিয়ার লুকা মড্রিচ এবং ওরসিচ আর ব্রাজিলের পেদ্রো গোল করলে ব্যবধান দাঁড়ায় ক্রোয়েশিয়া ৪-২ ব্রাজিল। এমন পরিস্থিতিতে মারকুইনোস এসে বল মারেন সাইড বারে। আর তাতেই ৪-২ গোলের জয় নিশ্চিত হয়ে যায় রাশিয়া বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট ক্রোয়েশিয়ার। যে কারণে আক্ষেপ থাকলো নেইমারের। বাকি থাকা শটটা যে আর নিতে পারলেন না ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার। টুর্নামেন্টের হট ফেভারিট ব্রাজিলের বিদায়ে গোটা দুনিয়ার ভক্ত-অনুরাগীদের মতো বাংলাদেশের লাখো ফুটবলপ্রেমীর হৃদয়ও ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেছে।
তবে বাংলাদেশের আর্জেন্টিনার সমর্থকদের উৎসব আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন লিওনেল স্কালোনির শিষ্যরা। দিনের দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে লুসাইল স্টেডিয়ামে হল্যান্ডের মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে দারুণভাবেই খেলতে থাকে লুইস ভ্যান গালের দল। ম্যাচের ২২ মিনিটে গোলের সুযোগ আসে আর্জেন্টিনার। কিন্তু লিওলেন মেসি গোলবারের ওপর দিয়ে শট নেন। তার দুই মিনিট পর ডাচ তারকা মেম্ফিস ডিপাইও শট নেন গোলবারের বাইরে দিয়ে। অবশেষে ৩৫ মিনিটে লিওনেল মেসির সুপার এ্যাসিস্ট থেকে গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন নাহুয়েল মোলিনা। এরপর আর কোন গোল না হলে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় ১৯৮৬ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা।
পিছিয়ে পড়েও ম্যাচে ফেরার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালায় লুইস ভ্যান গালের দল। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি মেম্ফিস-গ্যাপকোরা। এই সময়ে একের পর এক আক্রমণ চালায় স্কালোনির দলও। কিন্তু সফল হতে পারেনি তারাও। দ্বিতীয়ার্ধের ৭১ মিনিটে মার্কোস আকুনাকে বক্সের মধ্যে ফাউল করে বসেন ডাচ তারকা ডেঞ্জেল ডামপ্রিজ। ফলে পেনাল্টি দেন ম্যাচ রেফারি। পেনাল্টিতে খুব সহজেই গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন আর্জেন্টিনার প্রাণভোমরা লিওনেল মেসি।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়