করোনাকালে এক বছরে সারাদেশে ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেছে। পারিবারিক জটিলতা, সম্পর্কের অবনতি, পড়াশোনা নিয়ে হতাশা, আর্থিক সঙ্কট এসব আত্মহত্যার ঘটনার মূল কারণ। তাছাড়া আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে নারীর সংখ্যা বেশি।
শনিবার ‘করোনাকালীন পরিস্থিতিতে বেড়েছে আত্মহত্যার হার : মানসিক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে?’ শিরোনামে তরুণদের সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশন এক ওয়েবিনারে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান ও কারণ তুলে ধরে।
নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী রয়েছেন ৪৯ শতাংশ, ৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী ৩৫ শতাংশ, ৩৬ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ১১ শতাংশ। সবচেয়ে কম আত্মহননকারী হচ্ছেন ৪৬ থেকে ৮০ বছর বয়সীরা, ৫ শতাংশ।
২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩টি জাতীয় পত্রিকা, ১৯টি স্থানীয় পত্রিকা, হাসপাতাল ও থানা থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। পর্যবেক্ষণের জন্য ৩২২টি আত্মহত্যার ঘটনাকে বেছে নেয়া হয়।
আঁচল ফাউন্ডেশনের দাবি, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে আত্মহত্যা ৪৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়েছে। তারা তুলনা করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর গত বছরের এ সংক্রান্ত নিহতের সংখ্যার সাথে। সংগঠনটির হিসাবে, এক বছরে আত্মহত্যা করার সংখ্যা ১৪ হাজারের বেশি। আর বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে, ২০১৯ সালে সারা দেশে আত্মহত্যা করেছে ১০ হাজারের বেশি মানুষ।
ওয়েবিনারে আত্মহত্যার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন সংগঠনটির জরিপ টিমের প্রধান এ এস এম শাহরিয়ার সিদ্দিকী।
দেশে করোনাভাইরাসে প্রথম শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। গত এক বছরের একটা দীর্ঘ সময় মানুষ গৃহবন্দী থেকেছে। এ সময় মানুষের মধ্যে নানা কারণে হতাশা, বিষণ্ণতা বেড়েছে। যার নানামুখী প্রভাব পড়েছে মানসিক স্বাস্থ্যে। এসব কারণে কেউ কেউ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন।
এছাড়াও এ প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা উদ্বেগজনকহারে বেড়েছে বলে জানানো হয়েছে। করোনাকালে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতার ঘটনা বেশি দেখা গেছে উল্লেখ করে আঁচল ফাউন্ডশনের প্রতিষ্ঠাতা তানসেন রোজ বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর আরও গুরুত্ব দিয়ে নাগরিকের বেঁচে থাকার পরিবেশ তৈরি রাষ্ট্র ও পরিবারের দায়িত্ব। তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্ম বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে হারে আত্মহত্যা বাড়ছে, সে হারে সচেতনতা বাড়ছে না।
বিভিন্ন ধরনের পারিবারিক সমস্যার কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৩৫ শতাংশ নারী-পুরুষ। এর বাইরে ২৪ শতাংশ সম্পর্কে টানাপোড়েনের কারণে এবং অজানা কারণে ৩২ শতাংশ মানুষ আত্মহত্যা করেছেন। আর্থিক ও লেখাপড়ার কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৪ ও ১ শতাংশ।
মানসিক রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোসহ ১১টি সুপারিশ তুলে ধরা হয় ওই প্রতিবেদনে। এর মধ্যে অন্যতম হলো আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিকে একা না রাখা, ক্রাইসিস সেন্টার ও হটলাইন চালু করা, সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউন্সিলর নিয়োগ করা ইত্যাদি।
বয়স অনুযায়ী আত্মহত্যার পরিসংখ্যান
জরিপে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যা করেছেন ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সীরা, যা কি না মোট আত্মহত্যাকারীর ৪৯ শতাংশ। এরপরেই সবথেকে বেশি আত্মহত্যা করেছেন পাঁচ থেকে ১৯ বছর বয়সী মানুষেরা, ৩৫ শতাংশ। ৩৬ থেকে ৪৫ বছর বয়সী আত্মহত্যাকারী ১১ শতাংশ এবং ৪৬ থেকে ৮০ বছর বয়সী ৫ শতাংশ।
অন্যান্য দেশে যেখানে পুরুষ আত্মহত্যাকারীর সংখ্যা বেশি, সেখানে বাংলাদেশে ঠিক তার বিপরীত। বাংলাদেশে নারী আত্মহত্যাকারী ৫৭ শতাংশ, পুরুষ আত্মহত্যাকারী ৪৩ শতাংশ।
যে কারণে আত্মহত্যা
আত্মহত্যার কারণগুলোর মধ্যেও রয়েছে বৈচিত্র্য। পারিবারিক, সম্পর্কজনিত, আর্থিক, পড়াশোনা এবং অন্যান্য বিভিন্ন কারণে মানুষ আত্মহত্যা করেছে। সর্বাপেক্ষা বেশি ৩৫ শতাংশ আত্মহত্যা করেছে বিভিন্ন পারিবারিক কারণে, এরপরেই ২৪ শতাংশ আত্মহত্যা করেছেন সম্পর্কজনিত কারণে, আর্থিক ও লেখাপড়াজনিত কারণে আত্মহত্যার পরিমাণ যথাক্রমে ৪ ও ১ শতাংশ এবং সর্বশেষ অজানা বিভিন্ন কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৩২ শতাংশ।
এই বিভাগের আরও খবর
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়