প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় হচ্ছে পাতাল মেট্রোরেল

গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণ ও প্রতিবেশগত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে দেশের ১৩টি এলাকাকে ‘প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরের জলাভূমি ‘‌গুলশান-বারিধারা লেককে’ ২০০১ সালে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আর ঢাকা মহানগরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত তুরাগ নদ প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন হিসেবে ঘোষণা করা হয় ২০০৯ সালে। প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় ‘ভূমি এবং পানির প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য নষ্ট/পরিবর্তন করতে পারে’—এমন ধরনের কাজসহ নয় ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ। যদিও গুলশান-বারিধারা লেক ও তুরাগ নদের নিচ দিয়ে পাতাল মেট্রোরেল তৈরি করতে যাচ্ছে সরকার। এ দুই প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় পড়েছে হেমায়েতপুর-ভাটারার মধ্যে নির্মিতব্য এমআরটি লাইন-৫, নর্দান রুটের গতিপথ। 

নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, পাতাল মেট্রোরেল চলাচলের কারণে যে কম্পন এবং শব্দ উৎপন্ন হবে তা গুলশান-বারিধারা লেক ও তুরাগ নদের মতো প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকার জীববৈচিত্র্য এবং জলজ বাস্তুতন্ত্রে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। অন্যদিকে পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গুলশান-বনানী লেকের পাশে মেট্রোর পাতাল স্টেশন হলে তার পরোক্ষ প্রভাব পড়তে পারে লেকের পরিবেশে।

তবে মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) কর্মকর্তারা বলছেন, মাটির ৫৬ থেকে ১৫৩ ফুট গভীরতায় পাতাল মেট্রোর টানেল তৈরি করা হবে। গভীরতা বেশি হওয়ায় এর কোনো বিরূপ প্রভাব প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় পড়বে না। একই ধরনের কথা বলা হয়েছে প্রকল্পটির জন্য করা প্রতিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন (ইআইএ) প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়েছে, এমআরটি লাইন-৫-এর গতিপথে দুটি প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা পড়েছে। এ দুই এলাকাসহ মেট্রোর পাতালপথটি তৈরিতে ব্যবহার করা হবে টানেল বোরিং মেশিন। যে পদ্ধতিতে টানেল খনন করা হবে, তাতে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় প্রভাব হতে পারে ‘নগণ্য’। পরিচালনা পর্যায়েও তা পরিবেশের কোনো ক্ষতি করবে না।

২০২৮ সালের মধ্যে ‘‌এমআরটি লাইন-৫, নর্দান রুট’ নামের মেট্রোলাইনটি চালু করতে চায় সরকার। এরই মধ্যে মেট্রোলাইনটির ডিপোর ভূমি উন্নয়নে ঠিকাদারও নিয়োগ করা হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বর নাগাদ কাজ শুরুর আশা করছেন ডিএমটিসিএলের কর্মকর্তারা। এটি হতে যাচ্ছে ঢাকার পূর্ব-পশ্চিমমুখী প্রথম মেট্রো।

প্রকল্প কার্যালয়ের তথ্য বলছে, হেমায়েতপুর থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত মেট্রোটি তৈরি হবে উড়ালপথে, বিদ্যমান সড়কের ওপর পিলার দিয়ে। আর গাবতলী থেকে নতুনবাজার পর্যন্ত মূল সড়ক বরাবর মাটির ৫৬ থেকে ১৫৩ ফুট গভীরতায় নির্মাণ করা হবে পাতালপথ। নতুনবাজার থেকে ভাটারা পর্যন্ত অংশটি উড়ালপথে তৈরি হবে। 

পাতালপথটির একটি অংশ পড়েছে তুরাগ নদে। আরেকটি অংশ পড়েছে গুলশান-বনানী লেকে। পাতাল রেলের মতো প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকাগুলো আরো সংকটে পড়বে বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহম্মদ খান। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ঢাকার বাস্তবতা খুব কঠিন। বিশ্বের সবচেয়ে  ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। এমন একটি জায়গায় আমরা যখন পাতাল রেলের মতো অবকাঠামো করতে যাব, তখন কিন্তু আমাদের মাটির নিচের এবং মাটির ওপরের যত ধরনের বৈশিষ্ট্য আছে, সবই প্রভাবিত হতে পারে। গুলশান-বারিধারা লেকের নিচ দিয়ে যখন পাতাল রেল চলবে, তখন যে কম্পন হবে এবং শব্দ উৎপন্ন হবে তা এ লেকের জীববৈচিত্র্য ও জলজ বাস্তুতন্ত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। তুরাগ নদের ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য।’

তিনি আরো বলেন, ‘পাতাল রেল আমাদের অনেকটা আত্মঘাতী প্রকল্প হতে পারে। পাতাল রেল করার জন্য অর্থনৈতিক এবং প্রতিবেশগতভাবে জাস্টিফায়েড করার মতো বিশদ কোনো সমীক্ষা আমরা দেখি না। শুধু সিদ্ধান্ত ও বাস্তবায়ন দেখছি।’

নকশা অনুযায়ী, গুলশান ও বনানী লেকের ঠিক মাঝখানে তৈরি করা হবে পাতাল রেলের গুলশান-২ স্টেশন। গোলচত্বরের নিচে তিন তলাবিশিষ্ট স্টেশনটির দুই প্রান্ত লেক দুটির কাছাকাছি চলে যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে ‘‌এমআরটি লাইন-৫, নর্দান রুট’ প্রকল্পের জন্য করা প্রতিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন প্রতিবেদনে।

এমআরটি লাইন-৫-এর এ পাতাল স্টেশনটি পরোক্ষভাবে গুলশান-বনানী লেকের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে মনে করেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ঢাকার একমাত্র মডেল জংশন যেমন গুলশান-২, তেমনি গুলশান লেকও ঢাকার মডেল লেকগুলোর একটি। আবার ঢাকার ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকাগুলোর অন্যতম গুলশান-২। এখানে একটি মেট্রো স্টেশন দেয়া হলে সেখানে যাত্রীদের ব্যাপক চাহিদা শুরু হবে। এটিকে ঘিরে নানা ধরনের কর্মকাণ্ড শুরু হবে। গুলশান-বনানীর লেক দুটি এ গোলচত্বর লাগোয়া। মেট্রো স্টেশনটি চালুর পর বাড়তি মানুষের চাপ এবং বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ড লেকের ওপর অবশ্যই কিছুটা প্রভাব ফেলবে।’ 

তবে যেহেতু স্টেশনটি এখনো তৈরি হয়নি, তাই এর প্রভাব কমিয়ে আনার সুযোগ এখনো রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

অন্যদিকে মেট্রোরেলের মতো প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে প্রকল্প এলাকায় যথাযথ ট্রান্সপোর্ট ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট বা টিআইএ করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন নগরবিদ ও স্থপতি ইকবাল হাবিব। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ‘গুলশান লেক নিজেই খুব বিপৎসংকুল অবস্থায় আছে, তার অন্যতম কারণ ওয়াটার চ্যানেলটাকে আমরা এখন প্রবাহিত হতে দেখি না। ওয়াটার চ্যানেলটা খণ্ডিত বা এক ধরনের আবদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়েছে।’
এই বিভাগের আরও খবর
সাত বিভাগে বৃষ্টির আভাস, সহসাই কমছে না তাপপ্রবাহ

সাত বিভাগে বৃষ্টির আভাস, সহসাই কমছে না তাপপ্রবাহ

বণিক বার্তা
কেএনএফের আরো ৩ সদস্যসহ ৪ জন আটক

কেএনএফের আরো ৩ সদস্যসহ ৪ জন আটক

জনকণ্ঠ
ঈদের দিন আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানাল অধিদপ্তর

ঈদের দিন আবহাওয়ার পূর্বাভাস জানাল অধিদপ্তর

ভোরের কাগজ
দালালের ফাঁদে যুবকরা নিঃস্ব

দালালের ফাঁদে যুবকরা নিঃস্ব

যুগান্তর
চার বিভাগে তাপপ্রবাহ শনিবার পর্যন্ত, ঘাম ঝরবে বেশি, বাড়বে অস্বস্তি

চার বিভাগে তাপপ্রবাহ শনিবার পর্যন্ত, ঘাম ঝরবে বেশি, বাড়বে অস্বস্তি

দৈনিক ইত্তেফাক
কেএনএফের সঙ্গে শান্তি আলোচনা স্থগিত

কেএনএফের সঙ্গে শান্তি আলোচনা স্থগিত

বিডি প্রতিদিন
ট্রেন্ডিং
  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া

  • অবিশ্বাস্য কীর্তিতে হাজার রানের ক্লাবে এনামুল বিজয়