সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটছে। ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ফুটবল বিশ্বকাপের পর্দা উঠছে আজ। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই কাতারে শুরু হবে ৩২ দলকে নিয়ে ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। উদ্বোধনী দিনে স্বাগতিক কাতার খেলবে ইকুয়েডরের বিপক্ষে। ৯২ বছরের বিশ্বকাপ যাত্রায় অনেক নতুনের জন্ম হয়েছে, কাতার বিশ্বকাপ যেন নতুনের মেলা।
বিপুল অর্থ ব্যয়
বিপুল অর্থ ব্যয়ে বিশ্বকাপের ইতিহাসে কাতার ছাড়িয়ে গেছে আগের সব বিশ্বকাপকে। বিশ্বকাপ আয়োজনে কাতার খরচ করেছে ২২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত রাশিয়া বিশ্বকাপ খরচ হয়েছিল মাত্র ১১৬ কোটি ডলার! সম্পদশালী এই দেশ সাতটি স্টেডিয়ামই নতুন করে তৈরি করেছে। এমনকি বিশ্বকাপ উপলক্ষে মেট্রোরেলের একটি রুটও তৈরি করে ফেলেছে তারা।
প্রথমবার শীত মৌসুমে ফুটবল বিশ্বকাপ
প্রতি চার বছর পরপর বিশ্বকাপ ফুটবল অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে সাধারণত জুন-জুলাই মাসে। এবার সেটি শুরু হচ্ছে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। বিশ্বকাপ ইতিহাসে এবারই প্রথম শীত মৌসুমে খেলা হবে। মূলত বছরের মাঝামাঝি ওই সময়টায় আয়োজক কাতারের অনেক জায়গার তাপমাত্রা থাকে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই প্রচণ্ড গরমের কথা বিবেচনা করেই আসর নিয়ে আসা হয়েছে শীতকালে।
এশিয়ায় একক আয়োজক ও ক্ষুদ্রতম রাষ্ট্র
এশিয়ার মাঝে কাতার এককভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে যাচ্ছে। এর আগে ২০০২ সালে যৌথভাবে এশিয়ার দুই জায়ান্ট জাপান ও কোরিয়া আয়োজকের ভূমিকায় ছিল। শুধু একক আয়োজকই নয়, বিশ্বকাপের ইতিহাসে আয়তনের দিক থেকে সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম দেশ হিসেবে রেকর্ড করেছে কাতার। কাতারের আয়তন মাত্র ১১ লাখ বর্গ কিলোমিটার, যা বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় ১৩ গুণ ক্ষুদ্র। এত ক্ষুদ্র দেশ বিশ্বকাপের স্বাগতিক হওয়ায় প্রভাব পড়েছে টুর্নামেন্ট আয়োজনের বিভিন্ন প্রস্তুতিতে। ১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে বিশ্বকাপের সব খেলা হয়েছিল একটি শহরে। ৯২ বছর পর এবার দেখা যাবে এই দৃশ্য। নামে আলাদা শহর হলেও দোহার আশেপাশেই বিশ্বকাপের সব ভেন্যু। সর্বোচ্চ ৩৫ মাইল থেকে সর্বনিম্ন ৪ মাইলের ব্যবধানে দাঁড়িয়ে সব ভেন্যু। চাইলে দর্শকরা একই দিনে একাধিক ম্যাচ উপভোগ করতে পারবেন।
‘অল গ্রিন’ যানবাহন ব্যবস্থা
কাতারের সুপ্রিম কমিটি ফর ডেলিভারি অ্যান্ড লিগ্যাসি জানিয়েছিল, তারা কার্বন-নিরপেক্ষ বিশ্বকাপ আয়োজন করবে। সেই লক্ষ্যেই পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রিক বাসের ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। ইলেকট্রিক বাসগুলো ৪৪টি মেট্রোলিংক এবং ৪৮টি পাবলিক ট্রান্সপোর্ট রুটে চালানো হবে।
প্রথম নারী রেফারি
ফুটবল মানেই পুরুষ রেফারি। যদিও বিভিন্ন লীগ ও আন্তর্জাতিক ম্যাচে এর আগে নারী রেফারিদের ম্যাচ পরিচালনা করতে দেখা গেছে। তবে ৯২ বছরের ফুটবল বিশ্বকাপ ইতিহাসে এবারই প্রথমবারের মতো দেখা যাবে নারী রেফারিদের। ৩৬ জন মূল রেফারির তালিকায় তিনজন নারী রেফারিও আছেন। তারা হলেন, জাপানের ইমোশিতা ইওশিমি, রুয়ান্ডার সালিমা মুকাসাঙ্গা ও ফ্রান্সের স্টেফানি ফ্যাপোর্ট।
ফুটবলারদের জন্য ডেটা অ্যাপ
৩২টি দলের প্রতিটি ফুটবলার ম্যাচের পর নিজের খেলা সম্পর্কিত তথ্যগুলো দেখতে ডেটা অ্যাপ বানানো হয়েছে। ডেটা অ্যাপে থাকবে গুরুত্বপূর্ণ কোনও মুহূর্তে তিনি কেমন খেলেছেন, তার চেষ্টা কেমন ছিল? কোথাও সমস্যায় পড়েছিলেন কিনা? এইসব নিজেরা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারবেন। মোট কথা, ফুটবলারদের পারফরম্যান্সের আরও বিশ্লেষণী ও নিখুঁত তথ্য পেতে এটি ভূমিকা রাখবে।
চূড়ান্ত স্কোয়াডের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি
২০০২ বিশ্বকাপ থেকে অংশগ্রহণকারী দলগুলো সর্বোচ্চ ২৩ জন খেলোয়াড় নিয়ে চূড়ান্ত দল ঘোষণা করে আসছিল। এর আগের আসরগুলোয় দলগুলো সর্বোচ্চ ২২ জন খেলোয়াড় সর্বশেষ স্কোয়াডে রাখতে পারতো। তবে কাতারে বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলগুলো নিজেদের স্কোয়াডে ২৬ জন খেলোয়াড় রাখতে পেরেছে। মূলত কাতারের তাপমাত্রার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া এবং ইউরোপীয় ফুটবলের মৌসুমের মাঝপথে বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট আয়োজনের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে ফিফাকে।
বাড়তি বদলি খেলোয়াড়
শুধুমাত্র চূড়ান্ত স্কোয়াডের সদস্য সংখ্যাই না, ম্যাচে বদলি খেলোয়াড়ের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ তিন জন খেলোয়াড় পরিবর্তনের সুযোগ পেতো দলগুলো। আর নকআউট পর্বে কোনও ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে গড়ালে আরও একজন খেলোয়াড় বদলি হিসেবে নামাতে পারতো দলগুলো। এবার নির্ধারিত ৯০ মিনিটেই ৫ জন ফুটবলার বদল করতে পারবে। আর নকআউট পর্বের ম্যাচগুলো অতিরিক্ত সময়ে গড়ালে আরও একজন খেলোয়াড় পরিবর্তনের সুযোগ মিলবে। মূলত করোনাভাইরাসের পরবর্তী সময়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ফিফা। সেটাই কাতার বিশ্বকাপে বহাল আছে।
অটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তি
ক্রিকেটে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সুবিধার জন্য। এবার ফুটবলেও তা দেখা যাবে। অবশ্য ফুটবলে আগে থেকেই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে আসছে। রাশিয়া বিশ্বকাপে ভিএআর ব্যবহার করা হয়েছে। এবার গোললাইন প্রযুক্তি আর ভিএআর তো থাকছেই, আসন্ন কাতার বিশ্বকাপে থাকবে সেমি অটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তি। অপটিক্যাল ট্র্যাকিং পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে সেমি অটোমেটেড প্রযুক্তিতে অফসাইডের বাঁশি বাজাবেন রেফারিরা। ইনফ্রারেড মার্কারের মাধ্যমে মাঠের বিশেষ ক্যামেরাগুলো দিয়ে এ প্রযুক্তিতে ফুটবলার এবং বলের সঠিক অবস্থান জানা যাবে। মাঠে অবস্থানকারী প্রতিটি ফুটবলারের শরীরে ২৯টি জায়গা চিহ্নিত করে খেলোয়াড়েদের ত্রিমাত্রিক অবয়ব তৈরি করে রেফারিদের কাছে সেকেন্ডের মধ্যে সুনির্দিষ্ট তথ্য সরবরাহ করবে সেমি অটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তি।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়