অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীরাও বুঝে উঠতে পারছেন না বাজারের গতিপ্রকৃতি

আমদানিনির্ভর হওয়ায় দেশের ভোগ্যপণ্যের বাজারে দেখা যায় উত্থান-পতন। কভিড-পরবর্তী সময়ে পণ্যমূল্যের উল্লম্ফন হলেও সাম্প্রতিক আমদানি সংকট বাজারকে করেছে অস্থিতিশীল। বাজারের লাগাম টেনে ধরতে নেয়া হয় সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ। এর পরও ভোগ্যপণ্যের দামের ওঠানামার খেলায় পুঁজি হারাচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগী অর্থাৎ পাইকারি ব্যবসায়ীরা। ভোজ্যতেল, চিনি ও গমের বতর্মান বৈশ্বিক বাজার বুঝে উঠতে পারছেন না অভিজ্ঞ ব্যবসায়ীরাও, যা দেশের বাজারকে আরো বেশি সংকটে ফেলছে।

দেশে ভোগ্যপণ্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ। সেখানে এক মাস ধরে টানা বেড়েছে চিনির দাম। কেজিপ্রতি ৭০-৭৫ থেকে তা গিয়ে ঠেকে ১১০ টাকায়। এরপর সরকারি নানা উদ্যোগ—প্রশাসনের নজরদারি, বাজার মনিটরিং, মিল পর্যায়ে অভিযানের পর দাম কমে ১০ টাকা পর্যন্ত। জেল-জরিমানার ভয়ে তখন বাধ্য হয়েই বাড়তি দামে কেনা চিনি কমে বিক্রি করেন অনেক পাইকারি ব্যবসায়ী, ট্রেডিং প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্রোকার ব্যবসায়ী। তবে হঠাৎ করেই আবারো বাড়তে শুরু করেছে পণ্যটির দাম। একদিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে চিনির দাম বেড়েছে কেজিতে অন্তত ৫ টাকা। ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও প্রশাসনের নজরদারিতে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে এখন আর চিনি মজুদ নেই। দামের এ উত্থান-পতনের খেলায় চিনিতে বিনিয়োগ নিয়ে লোকসানের শঙ্কায় আছেন ব্যবসায়ীরা। 

পাইকারি বাজারে কয়েকদিন আগেও মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চিনি বিক্রি হয় সাড়ে ৩ হাজার টাকায়। এর আগে পণ্যটির পাইকারি দাম মণপ্রতি রেকর্ড ৩ হাজার ৭০০ টাকায় উঠেছিল। এরপর কিছুটা কমলেও কয়েক দিনের ব্যবধানেই রেকর্ড ভেঙে দাম উঠেছে ৩ হাজার ৮০০ টাকায়। সম্প্রতি সরকারিভাবে চিনির মূল্যবৃদ্ধির কারণেই বাজার ফের অস্থিতিশীল হয়েছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) কারখানায় উৎপাদিত চিনির দাম কেজিতে ১৪ টাকা বাড়িয়ে ৯৯ টাকা করা হয়েছে। এর আগে আমদানীকৃত প্যাকেটজাত চিনির দাম ৬ টাকা বাড়িয়ে ৯৫ টাকায় বেঁধে দিয়েছিল সরকার।

এর আগে ঊর্ধ্বমুখী ডলারের মূল্যে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়া, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন ইস্যুর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে গত ৬ অক্টোবর চিনির দাম বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সরকার। এক মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় খোলা চিনির দাম বেড়ে হয় ৯০ টাকা কেজি এবং প্যাকেটজাত ৯৫ টাকা। দেশে গত সাত মাসে আমদানি করা চিনি দেশীয় চাহিদার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হলেও মিল পর্যায়ে পরিশোধন করে বাজারজাত কমে গিয়েছে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের কারণেই মূলত মিল পর্যায়ে উৎপাদন কমে যাওয়ায় বেড়েছে চিনির দাম। তাই জ্বালানি সংকট কমে গেলে দেশের বাজারে চিনির দাম কমে যাবে বলে মনে করছেন আমদানিকারকরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বণিক বার্তাকে বলেন, দেশে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ চিনি আমদানি হয়েছে তা চাহিদার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট হওয়ায় মিলগুলোর উৎপাদন অর্ধেকেরও কম হচ্ছে। বর্তমান পরিশোধনের চিনি দিয়ে দৈনিক চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া ডলারের ঊর্ধ্বমুখী দাম ও সংকট, জ্বালানি সংকটের কারণে প্রায় শতভাগ আমদানিনির্ভর এ নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে বেশ শঙ্কিত মিল মালিকরা। এক্ষেত্রে মিলগুলো ন্যায্যমূল্যে চিনি বিক্রি করলেও সরবরাহ চেইনের ভাঙন খোলাবাজারকে অস্থিতিশীল করছে।

একই অবস্থা ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রেও। দেশের ইতিহাসে রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধির পর তেলের দাম বিশ্ববাজারের পাশাপাশি দেশেও স্থিতিশীল হয়ে উঠছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ফের বাড়তে শুরু করেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে মণপ্রতি ১৫০-২০০ টাকা পর্যন্ত। বর্তমানে প্রস্তুত পাম অয়েল (খোলা) পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার টাকায়। যদিও দুই সপ্তাহ আগে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় নেমে এসেছিল। এছাড়া সুপার পাম অয়েলের দাম মণপ্রতি বেড়ে সাড়ে ৫ হাজার ও সয়াবিন ৭ হাজার টাকায় লেনদেন হচ্ছে।

কভিড-পরবর্তী সময়ে দেশে ভারতীয় ও রাশিয়ান গমের দাম ছিল মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ৯০০-৯৮০ টাকা। একপর্যায়ে দাম বাড়তে বাড়তে দেড় হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। সাম্প্রতিক সময়ের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট গমের দাম আরো বেড়ে ১ হাজার ৯১০ থেকে ১ হাজার ৯২০ টাকায় উঠে গিয়েছে। এর মধ্যে এক সপ্তাহের ব্যবধানে একই মানের গমের দাম বেড়েছে মণে ১৫০ টাকা। এছাড়া কানাডা থেকে আমদানি করা গমের দাম এক বছর আগেও মণপ্রতি ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় লেনদেন হতো। বর্তমানে তা ২ হাজার ৪০০ টাকায় গিয়ে উঠেছে। কানাডিয়ান গমের দেশীয় বাজারও এক সপ্তাহের ব্যবধানে মণপ্রতি ২০০-২৫০ টাকা বেড়েছে।

বিষয়টিকে চাহিদা অনুযায়ী আমদানি সংকট ও সরবরাহ ব্যবস্থার ঘাটতি হিসেবে দেখছেন দ্য চিটাগং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ভোগ্যপণ্যের বর্তমান বাজার অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় চ্যালেঞ্জিং। পণ্য কিনতে ব্যবসায়ীদের আগের তুলনায় মূলধনের পরিমাণ বেড়েছে। সেই সঙ্গে ব্যাংকঋণের সুবিধা কমে যাওয়া, বিশ্ববাজারের উত্থান-পতন পাইকারি ব্যবসায়ীদেরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রশাসনের কড়া নজরদারি থাকায় বাড়তি পণ্য লেনদেনে আগ্রহী নন ব্যবসায়ীরা, যা বাজারের সরবরাহ চেইনের ভারসাম্য নষ্ট করছে। অন্যদিকে হঠাৎ উত্থান-পতনের কারণে কেউ কেউ লাভবান হলেও লোকসানের ঝুঁকি বেড়েছে বলে মনে করছেন এ ব্যবসায়ী নেতা।
এই বিভাগের আরও খবর
রোজায় বাজার সহনশীল রাখার চেষ্টা করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

রোজায় বাজার সহনশীল রাখার চেষ্টা করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

যুগান্তর
এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

প্রথমআলো
ব্যাংকের ওপর আস্থা কমায় টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনছে মানুষ

ব্যাংকের ওপর আস্থা কমায় টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনছে মানুষ

কালের কণ্ঠ
বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সাথে হওয়া চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সাথে হওয়া চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

নয়া দিগন্ত
প্রাইম ব্যাংক ও সেবা ডট এক্সওয়াইজেডের মধ্যে চুক্তি সই

প্রাইম ব্যাংক ও সেবা ডট এক্সওয়াইজেডের মধ্যে চুক্তি সই

বাংলা ট্রিবিউন
ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু

ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু

বাংলা ট্রিবিউন
ট্রেন্ডিং
  • সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে 'বস্তায় বস্তায় ঘুষ' নেওয়ার অভিযোগ: দুদকের অনুসন্ধান শুরু

  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া