চলতি বছর তিনজন পেয়েছেন অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার। বিজয়ীরা হলেন ডেভিড কার্ড, জোশুয়া ডি অ্যাংগ্রিস্ট ও গুইডো ইমবেনস। এদের মধ্যে পুরস্কারের অর্ধেক একাই পাবেন ডেভিড কার্ড। বাকি অর্ধেক ভাগ করে নেবেন জোশুয়া ডি অ্যাংগ্রিস্ট ও গুইডো ইমবেনস। গতকাল রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্স এক সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতায় তাদের নাম ঘোষণা করে।
নোবেল পুরস্কারের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে তাদের সম্পর্কে বলা হয়, শ্রম অর্থনীতিতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ডেভিড কার্ড এবং কার্যকারণ সম্পর্ক বিশ্লেষণে পদ্ধতিগত অবদানের কারণে জোশুয়া ডি অ্যাংগ্রিস্ট ও গুইডো ইমবেনসকে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে।
একাডেমির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই তিনজন শ্রমবাজার এবং অভিজ্ঞতাভিত্তিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে কার্যকারণের উপসংহার সম্পর্কে নতুন পথ দেখিয়েছেন। সামাজিক বিজ্ঞানের অনেক বড় বড় প্রশ্ন কার্যকারণ সম্পর্কিত। কীভাবে অভিবাসীর চাকরির স্তর এবং বেতনের প্রভাব পড়ে, কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষা তার ভবিষ্যৎ আয়ে প্রভাব পড়ে, এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়া কঠিন। এগুলো যাচাই-বাছাই বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুনির্দিষ্ট কোনো মানদণ্ড ছিল না। যদি অভিবাসন কম হয় অথবা কোনো ব্যক্তি পড়ালেখা চালিয়ে না যায়, তাহলে তার প্রভাব কী হবে? এবারের নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদরা দেখিয়েছেন প্রাকৃতিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়েই এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সম্ভব।
অভিজ্ঞতাভিত্তিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ডেভিড কার্ড শ্রমবাজারের কম মজুরির প্রভাব, অভিবাসন ও শিক্ষার প্রভাব বিশ্লেষণ করেছেন। নব্বইয়ের শুরুর দিকে তার গবেষণা প্রচলিত প্রজ্ঞাকে চ্যালেঞ্জ করে, নতুন বিশ্লেষণের পথ দেখায় এবং বাড়তি অন্তর্দৃষ্টি দান করে। ফলে দেখা যায় যে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে সর্বনিম্ন মজুরির বৃদ্ধি হলেই তা কম কর্মসংস্থানে প্রয়োজনীয় প্রভাব ফেলে না।
তাদের নোবেল প্রদানের ব্যাখ্যায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, অভিজ্ঞতালব্ধ তথ্য ব্যাখ্যা করা কঠিন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি নির্দিষ্ট গ্রুপের ছাত্রদের এক বছর বাধ্যতামূলক শিক্ষা দেয়া হলে তা একইভাবে গ্রুপের অন্যদের ওপর প্রভাব ফেলে না। স্কুলে অতিরিক্ত আরো এক বছর পড়লেও সমাজের অন্যদের ওপর তার প্রভাব নিয়ে উপসংহারে পৌঁছা কঠিন। ৯০ দশকের মাঝামাঝিতে জোশুয়া অ্যাংগ্রিস্ট ও গুইডো ইমবেনস পদ্ধতিগত এ সমস্যার সমাধান বের করেন। তারা দেখান, কীভাবে অভিজ্ঞতালব্ধ পরীক্ষার মাধ্যমে কার্যকারণের ব্যাপারে উপসংহারে পৌঁছা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের বার্কলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ৬৫ বছর বয়সী ডেভিড কার্ডের জন্ম ১৯৫৬ সালে কানাডায়। এছাড়া ৬১ বছর বয়সী জোশুয়া ডি অ্যাংগ্রিস্ট ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির (এমআইটি) অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক।
যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যে ১৯৬০ সালে জন্মগ্রহণ করেন এ মার্কিন অর্থনীতিবিদ। আর স্ট্যানফোর্ড গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব বিজনেসের অধ্যাপক গুইডো ইমবেনসের বয়স ৫৮ বছর। তিনি ১৯৬৩ সালে নেদারল্যান্ডসে জন্মগ্রহণ করেন।
পুরস্কারের আর্থিক মূল্য ১ কোটি সুইডিশ ক্রোনার (১১ লাখ ডলার) ভাগাভাগি করে নেবেন তারা। এর মধ্যে ডেভিড একাই অর্ধেক, বাকি অর্থ পাবেন জোশুয়া ডি অ্যাংগ্রিস্ট ও গুইডো ইমবেনস। এছাড়া প্রত্যেকে পাবেন স্বর্ণপদক।
অর্থনীতির এ পুরস্কার অন্যান্য নোবেল পুরস্কারের মতো নয়। এটিকে অনেকে সরাসরি নোবেল পুরস্কার বলতে নারাজ। কেননা ১৮৯৫ সালে আলফ্রেড নোবেলের উইল অনুসারে ১৯০১ সালে প্রবর্তিত নোবেল পুরস্কার তালিকার বিষয় ছিল পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, সাহিত্য ও শান্তি। পরে ১৯৬৯ সাল থেকে অর্থনীতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে আলফ্রেড নোবেল স্মরণে পুরস্কার দেয়া শুরু করে নোবেল কর্তৃপক্ষ। এজন্য রয়েল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সের ঘোষণায় এ পুরস্কারকে সুইডেনের রাষ্ট্রীয় ব্যাংক রিক্স ব্যাংক পুরস্কার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ৪ অক্টোবর সোমবার চিকিৎসাবিজ্ঞান দিয়ে শুরু হয় চলতি বছরের নোবেল ঘোষণা। মানবদেহ কীভাবে তাপমাত্রা ও স্পর্শ অনুভব করে তার রিসেপ্টর আবিষ্কারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ডেভিড জুলিয়াস ও লেবাননের আরডাম পাটাপুটান পান এ বছরের চিকিৎসাবিজ্ঞানের নোবেল। বিবিসি জানায়, এই দুই বিজ্ঞানীর অবদান হলো তারা দেখিয়েছেন কীভাবে মানবদেহ সূর্যের উত্তাপ কিংবা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরা অনুভব করে।
পরদিন মঙ্গলবার পদার্থবিজ্ঞানে নোবেলজয়ী তিনজনের নাম ঘোষণা করে নোবেল কমিটি। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী স্যুকুরো মানাবে ও ক্লাউস হেসেলমান এবং ইতালির বিজ্ঞানী জর্জিও পারিসি জিতেছেন পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল। তাদের অবদান সম্পর্কে বলা হয়, জলবায়ু পরিস্থিতির ফিজিক্যাল বা ভৌত মডেল তৈরি, পরিবর্তনশীলতা পরিমাপ এবং নির্ভরযোগ্যভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতার বিষয়টি অনুমানের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন স্যুকুরো মানাবে ও ক্লাউস হেসেলমান। সংস্থাটির বিবেচনায় পারিসির অবদান হলো পারমাণবিক ও গ্রহীয় পরিসরে ভৌত ব্যবস্থা বা ফিজিক্যাল সিস্টেমের বিশৃঙ্খলা ও ফ্লাকচুয়েশন পরস্পরের ওপর কী প্রভাব ফেলে তা আবিষ্কার।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়