ইউরোপ বড় বাজার, সামনে দুশ্চিন্তা

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলো বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বড় বাজার। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৪৫ শতাংশ আসে ইইউ থেকে। বছর বছর এই রপ্তানি আয় বেড়েছে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেয়ে।

স্বল্পোন্নত দেশে থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটলে এই শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যাবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। তখনকার জন্য প্রযোজ্য ‘জিএসপি (অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য–সুবিধা) প্লাস’ পেতে হলে বাংলাদেশকে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, শ্রম অধিকার ও পরিবেশগত বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে হবে। বাংলাদেশ সেই সব শর্ত পূরণে সক্ষম হবে কি না, সরকার শর্ত পূরণে পদক্ষেপ নিচ্ছে কি না, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশের কূটনীতিকেরা বিভিন্ন সময় বলেছেন, জিএসপি প্লাস পেতে হলে বাংলাদেশকে দুই ডজনের বেশি আন্তর্জাতিক সনদ মেনে চলতে হবে। তার মধ্যে অন্যতম নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারবিষয়ক আন্তর্জাতিক সনদ (আইসিসিপিআর), সেখানে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক অধিকারচর্চার বিষয়গুলো রয়েছে। 

কূটনীতিকেরা আরও বলেছেন, আগামী নির্বাচন যদি সুষ্ঠু ও অবাধ হয়, তাহলে তা বাংলাদেশেকে জিএসপি প্লাস অর্জনের ক্ষেত্রে এগিয়ে দেবে। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের পাশাপাশি আরও অনেক শর্ত রয়েছে।

বাংলাদেশ সেসব শর্তের ক্ষেত্রে যে ভালো অবস্থায় নেই, তা বোঝা যায় ইইউর অবস্থান দেখে। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতিতে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে গত সেপ্টেম্বরে একটি প্রস্তাব কণ্ঠভোটে গৃহীত হয়। প্রস্তাবটিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারচর্চার বিষয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তি মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়। 

জিএসপি প্লাস সুবিধা না পেলে দেশের শীর্ষ রপ্তানি পণ্য পোশাকের ওপর কী প্রভাব পড়বে, তা জানতে চাইলে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোস্তাফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘জিএসপি সুবিধা না থাকলে ইইউর বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ধস নামবে। কারণ, বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বাজারে দাম ১-২ শতাংশ কমবেশির কারণে আমরা ক্রয়াদেশ হারাই। সেখানে জিএসপি সুবিধা না থাকলে শুল্কের কারণে তৈরি পোশাকের দাম ১০-১২ শতাংশ বেড়ে যাবে। এই বাড়তি দাম কেন দিতে চাইবে ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান।’ 

রপ্তানি বেশি, আমদানি কম
বিশ্বের কিছু দেশ ও অঞ্চলে বাংলাদেশের রপ্তানি বেশি, কিন্তু আমদানি কম। মানে হলো ওই সব দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ভারসাম্য বাংলাদেশের অনুকূলে। এ তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইইউ। চীন ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বেশি। রপ্তানি কম, আমদানি। 

ইউরোপের ২৭টি দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক জোট ইইউতে বাংলাদেশ ২৫ বিলিয়ন বা আড়াই হাজার কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। বিপরীতে আমদানির পরিমাণ ৪০০ কোটি ডলারের কম।

একক দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি সবচেয়ে বেশি। আর জোটগতভাবে সবচেয়ে বড় বাজার ইইউ।

ইইউ থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৯৩ শতাংশই আসে তৈরি পোশাক থেকে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ইইউতে বাংলাদেশ ২ হাজার ৩৫৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা দেশের মোট পোশাক রপ্তানির ৫০ শতাংশ। শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়ায় গত দুই দশকে ইউরোপে পোশাক রপ্তানি শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। 

তৈরি পোশাক ছাড়াও ইইউতে হোম টেক্সটাইল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, জুতা, বাইসাইকেল ইত্যাদি পণ্য রপ্তানি হয়। বাংলাদেশ অস্ত্র ছাড়া সব পণ্যই বিনা শুল্কে রপ্তানি করতে পারে।

ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানি। দেশটিতে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৭০৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এরপর রয়েছে স্পেন (৩৬৮ কোটি ডলার), ফ্রান্স (৩২৯ কোটি), ইতালি (২৩৯ কোটি), নেদারল্যান্ডস (২০৯ কোটি) এবং পোল্যান্ড (১৮৫ কোটি ডলার)।

ইইউ থেকে বাংলাদেশের আমদানি তুলনামূলক কম। ইউরোপীয় কমিশনের তথ্যানুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশ ইইউ থেকে আমদানি করে ৩৬০ কোটি ইউরোর পণ্য। ফলে বাংলাদেশের অনুকূলে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২০ কোটি ইউরো। 

ইইউ থেকে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণও উল্লেখযোগ্য। ২০২২ সালে বাংলাদেশে ইইউভুক্ত দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে ৬৩ কোটি ডলারের বিনিয়োগ এসেছে, যা মোট বিনিয়োগের প্রায় ১৭ শতাংশ। বিনিয়োগ বেশি এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে, তৃতীয় ইইউ।

জিএসপি প্লাস কি পাবে বাংলাদেশ
সবকিছু ঠিক থাকলে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা (এলডিসি) থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটবে ২০২৬ সালে। এরপর আরও তিন বছর ইইউর বাজারে জিএসপি সুবিধা থাকবে। অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত বাজারটিতে পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যাবে। অবশ্য এরপর শুল্কমুক্ত সুবিধা পেতে চাইলে বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাস ব্যবস্থার জন্য যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।

ইইউর বাজারে এখন শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, উজবেকিস্তান, বলিভিয়াসহ আটটি দেশ জিএসপি প্লাস সুবিধা পায়। আর বাংলাদেশসহ ৪৬টি স্বল্পোন্নত দেশ জিএসপি সুবিধা পাচ্ছে।

২০২৪-২০৩৪ সময়ের জন্য জিএসপির নতুন নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করেছিল ইউরোপীয় কমিশন। খসড়ার ওপর আলোচনা শেষ না হওয়ায় ইইউ পার্লামেন্ট বর্তমান নীতিমালাটির মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করে। 
এই বিভাগের আরও খবর
রোজায় বাজার সহনশীল রাখার চেষ্টা করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

রোজায় বাজার সহনশীল রাখার চেষ্টা করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

যুগান্তর
এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

প্রথমআলো
ব্যাংকের ওপর আস্থা কমায় টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনছে মানুষ

ব্যাংকের ওপর আস্থা কমায় টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনছে মানুষ

কালের কণ্ঠ
বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সাথে হওয়া চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সাথে হওয়া চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

নয়া দিগন্ত
প্রাইম ব্যাংক ও সেবা ডট এক্সওয়াইজেডের মধ্যে চুক্তি সই

প্রাইম ব্যাংক ও সেবা ডট এক্সওয়াইজেডের মধ্যে চুক্তি সই

বাংলা ট্রিবিউন
ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু

ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু

বাংলা ট্রিবিউন
ট্রেন্ডিং
  • সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে 'বস্তায় বস্তায় ঘুষ' নেওয়ার অভিযোগ: দুদকের অনুসন্ধান শুরু

  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া