ঋণ পরিশোধে সময় চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে বিজিএমইএর আবেদন

করোনা মহামারীতে ২০২০ সাল থেকেই সংকটে পড়ে দেশের রফতানির সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক শিল্প। মহামারীর এ ধাক্কা সামলাতে অন্যান্য খাতের পাশাপাশি এ খাতটির জন্যও আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন করেছে সরকার। তবে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আরো কিছু সুবিধা চাইছেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা। এর অংশ হিসেবে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সব ধরনের সুদ ও কস্ট অব ফান্ডসহ সব চার্জ মওকুফ চান তারা। মওকুফের পর অবশিষ্ট ঋণকে ২০২২ সালের জানুয়ারিভিত্তিক স্থিতির ওপর ২ শতাংশ হারে ডাউন পেমেন্টে দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছর মেয়াদে ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলীকরণের দাবি জানিয়েছে পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। যদিও ব্যাংকাররা বলছেন, এ প্রস্তাব গ্রহণ করা হলে ব্যাংক খাত দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিতে পড়বে।

সম্প্রতি অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবদুর রউফ তালুকদারের কাছে সংগঠনের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে চিঠি দিয়েছে বিজিএমইএ। তবে এ বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি অর্থ বিভাগ। তারা বাস্তবতার নিরিখে বিজিএমইএর প্রস্তাব পর্যালোচনা করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বণিক বার্তাকে বলেন, করোনা মহামারীতে সারা বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ মুহূর্তে ইউরোপ-আমেরিকায় ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালু হলেও স্বাভাবিক হতে এখনো অনেক দেরি আছে। এতে তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছেন। তাই করোনার ক্ষতির বিষয়টি মাথায় নিয়ে বিশেষ প্রেক্ষাপটে ঋণ পুনঃতফসিলীকরণের বিষয়ে এ উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। কারণ এ মুহূর্তে পোশাক খাতকে টিকিয়ে রাখতে হলে এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।

ফারুক হাসান চিঠিতে বলেন, করোনাভাইরাসের প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের পর সর্বোপরি ডেল্টা ভেরিয়েন্টের কারণে বিদেশী ক্রেতারা ক্রয়াদেশ কমিয়ে দেয়ার পাশাপশি রফতানীকৃত পণ্যের মূল্য পরিশোধ না করার সঙ্গে সঙ্গে কম মূল্য কিংবা মূল্য পরিশোধে বেশি সময় নিচ্ছে। ফলে পোশাক খাতে নগদ অর্থের পরিমাণ ক্রমেই বেড়ে চলেছে। তার পরও ভবিষ্যতের আশায় বিদেশী ক্রেতা ও শ্রমিকদের ধরে রাখার জন্য পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা লোকসান দিয়ে রফতানি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা সময়মতো শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও ব্যাংকঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। তাই ঋণের পরিমাণ ক্রমন্বয়ে বেড়ে চলেছে।

করোনার প্রভাবে রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা তাদের মেয়াদি ঋণ, তলবি ঋণ, চলতি ঋণসহ সব ঋণ সময়মতো পরিশোধ না করার বিষয়ে সরকারের নমনীয় মনোভাব প্রত্যাশা করেছেন। একই সঙ্গে শিল্পের অস্তিত্ব রক্ষা ও শ্রমিকদের কর্মসংস্থান চলমান রাখতে সহায়ক ভূমিকা কামনা করা হয়। এরই অংশ হিসেবে জাতীয় অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে করোনাভাইরাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে দুটি প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রথম প্রস্তাবটি হচ্ছে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকঋণের ওপর আরোপিত-অনারোপিত সুদ ও কস্ট অব ফান্ডসহ সব ধরনের চার্জ মওকুফ করা। একই সঙ্গে অবশিষ্ট ঋণকে ২০২২ সালের জানুয়ারিভিত্তিক হিসাবকৃত স্থিতির ওপর ২ শতাংশ হারে ডাউন পেমেন্ট গ্রহণ করে দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ১০ বছর মেয়াদে ঋণ হিসাব পুনঃতফসিলীকরণ। দ্বিতীয় প্রস্তাবে এককালীন এক্সিট বা ব্যবসা থেকে সম্মানজনক প্রস্থান নিতে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের একই ধরনের সুবিধার আলোকে এক বছর মেয়াদে ঋণ হিসাব অবসায়নের সুযোগ দেয়ার অনুরোধও জানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যাংকারদের সংগঠন এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান এবং মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংকগুলো তিন ও ছয় মাস মেয়াদে আমানত পায়। এক্ষেত্রে ১০ বছর মেয়াদে যদি ঋণ পুনঃতফসিলীকরণ করা হয় তাহলে অনেক গ্যাপ তৈরি হবে। তখন ব্যাংকগুলো সময়মতো আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারবে না। করোনার ক্ষতির কারণে হয়তো এক বছর সময় দেয়া যেতে পারে, তবে ১০ বছর কীভাবে দেয়া যায়। এটা সম্ভব নয়।

তিনি আরো বলেন, এভাবে যদি সব ঋণ দীর্ঘমেয়াদে চলে যায় তাহলে ব্যাংকগুলো বড় ক্ষতিতে পড়বে। সুতরাং সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর বিষয়েও ভাবতে হবে। এসব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সব পক্ষের মতামত নেয়া প্রয়োজন। অপরিকল্পিতভাবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হলে ব্যাংকগুলো দীর্ঘমেয়াদে সমস্যায় পড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি ১০ বছর মেয়াদের পুনঃঅর্থায়ন তহবিল দিত তাহলে এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন সম্ভব হতো। কিন্তু ব্যাংকগুলো তিন মাস মেয়াদে আমানত নিয়ে ঋণগ্রহীতাদের কীভাবে ১০ বছর সময় দেবে।


এ প্রসঙ্গে অর্থ বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বণিক বার্তাকে বলেন, তারা বিজিএমইএর প্রস্তাব পেয়েছেন। তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি। বাস্তবতার আলোকে পর্যালোচনা করে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। 

এদিকে করোনাকালে শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধে সরকারের ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে নেয়া ঋণের অর্থ ১৮ কিস্তির পরিবর্তে ৩৬ কিস্তিতে পরিশোধের সুবিধা চেয়েছেন তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকরা। গত ১৪ সেপ্টেম্বর অর্থ বিভাগের সচিব আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সচিবালয়ে সাক্ষাৎ করে পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানান। বিজিএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এসএম মান্নানের (কচি) নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলটি এ অনুরোধ জানায়।

বিজিএমইএ নেতারা বলেন, করোনা মহামারীর দ্বিতীয় প্রবাহের কারণে পোশাক শিল্পের কঠিন সময় দীর্ঘায়িত হয়েছে। ইউরোপসহ বাংলাদেশের প্রধান রফতানি বাজারগুলো এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি। আশা করা হয়েছিল, মহামারী পরিস্থিতির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পোশাক শিল্প ঘুরে দাঁড়াতে সমর্থ হবে। তবে ভাইরাসটির নতুন ভেরিয়েন্টের সংক্রমণ পোশাক শিল্পকে আবারো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন করেছে। পোশাক খাতের ১৩৩টি রুগ্ণ কারখানার মূল ঋণ ও আয় খাতে নিট সুদ অবসায়নের জন্য অর্থ সচিবের সহযোগিতা চান বিজিএমইএর নেতারা। এছাড়া যেসব উদ্যোক্তা নিরাপদে ব্যবসা বন্ধ করতে চান, তাদের জন্য ‘চ্যাপ্টার ১১’ অনুসরণ করে ব্যবসা থেকে প্রস্থান নীতি প্রণয়নের অনুরোধ জানান তারা।

বিজিএমইএর নেতারা বলেন, কোনো শিল্পগোষ্ঠীর একটি প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হলে তাদের সহযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ঋণপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ব্যবসা পরিচালনা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যায়। তাই কোনো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান খেলাপি হলে সহযোগী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চলমান ঋণ ও ব্যাংক সুবিধাদি বন্ধ না করে খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলীকরণের সুযোগ দিয়ে ঋণ সুবিধা বহাল রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ করেন তারা।

করোনার কারণে গত বছরের মার্চে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতাদেশ আসতে থাকে। তখন পোশাক শিল্পের মালিকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়লে সরকার রফতানিমুখী শ্রমিকদের পরের তিন মাস এপ্রিল, মে ও জুনের মজুরি দেয়ার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। এই ঋণের বিপরীতে সেবা মাশুল ছিল ২ শতাংশ। পরে পোশাক শিল্পের মালিকরা আরো এক মাসের মজুরি দিতে আবার ঋণ দাবি করেন। সরকারও তা মেনে নেয়। তখন তহবিলের আকার বেড়ে ১০ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। তবে চতুর্থ মাসের জন্য ঋণের সেবা মাশুল ধরা হয় সাড়ে ৪ শতাংশ। বাকি সাড়ে ৪ শতাংশ সরকারের ভর্তুকি দেয়ার কথা।
এই বিভাগের আরও খবর
বোতলের সয়াবিন তেলের লিটার ১৬৭, খোলা ১৪৭ টাকা

বোতলের সয়াবিন তেলের লিটার ১৬৭, খোলা ১৪৭ টাকা

দৈনিক ইত্তেফাক
মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট না বসানোর চেষ্টা চলছে

মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট না বসানোর চেষ্টা চলছে

প্রথমআলো
বাংলাদেশ থেকে সরাসরি তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারে ব্রাজিল

বাংলাদেশ থেকে সরাসরি তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারে ব্রাজিল

বিডি প্রতিদিন
ভারতে স্বর্ণের দামে সর্বকালের রেকর্ড

ভারতে স্বর্ণের দামে সর্বকালের রেকর্ড

বিডি প্রতিদিন
বাংলাদেশে গত এক যুগে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে মধ্যপ্রাচ্যের অবদান সামান্য

বাংলাদেশে গত এক যুগে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে মধ্যপ্রাচ্যের অবদান সামান্য

বণিক বার্তা
ঈদের আগে দুই দফা বাড়তে পারে সয়াবিন তেলের দাম

ঈদের আগে দুই দফা বাড়তে পারে সয়াবিন তেলের দাম

জনকণ্ঠ
ট্রেন্ডিং
  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া

  • অবিশ্বাস্য কীর্তিতে হাজার রানের ক্লাবে এনামুল বিজয়