সরকারের ‘একদলীয় ও বাকশালীয় শাসন ব্যবস্থার’ বিরুদ্ধে যেসব তরুণরা প্রতিবাদ জানাচ্ছে তাদের নির্মূল ও নিশ্চিহ্ন করতেই সরকার তাদের গুম করে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, তখনও (বঙ্গবন্ধুর শাসনামল) একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ছিল। সেই কৌশল এখনও বদলে দিয়ে তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায় আওয়ামী লীগ। এখানে যারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে তারা তাদের নির্মূল করতে চায়, নিশ্চিহ্ন করতে চায়।
সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলীকে গুম করার ১০ বছর উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমার মনে আছে, যখন ইলিয়াস আলী গুম হয়ে যায় তখন আমি তার বাসায় গিয়েছিলাম, তার ছোট মেয়ের বয়স ছিল তখন ৬ বছরের মতো। সে শূন্য একটা দৃষ্টি নিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল। প্রায় প্রত্যেক বছরই আমি তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে তাদের বাসায় যাই। এখন দেখা করতে গেলে তার মেয়ে আমাদের সামনে আসে না, অনেক কষ্ট নিয়ে আসে না। বলে, ‘তোমরা আসো কিন্তু আমার বাবা তো ফিরে আসে না’।
মির্জা ফখরুল বলেন, গুম হয়ে যাওয়া প্রায় প্রত্যেকটি পরিবারের একই অবস্থা।
আমার উত্তরার বাসার পাশেই দক্ষিণখান। সেখানে একজন মহিলা আছেন, তার ছেলে মুন্না গুম হয়ে গেছে। বাবা এক বছর বিভিন্ন জায়গায় ছেলেকে খুঁজতে খুঁজতে মারা গেছেন। আর মা এখন অসহায় অবস্থায় আছেন। তার ঘর ভাড়াও থাকে না। আমরা চেষ্টা করি অত্যন্ত সীমিতভাবে তাদের পাশে থাকার জন্য। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান প্রতিটি পরিবারের খবর রাখেন। আমাদের মানবাধিকার সেল চেষ্টা করে গুমের বিষয়টিকে আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করার জন্য। তারা সফলও হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের একমাত্র রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হল, তারা ক্ষমতায় চিরদিন টিকে থাকতে চায়। এটা তাদের পুরাতন অভিলাষ। তারা চায়, বাংলাদেশ যতদিন থাকবে তারাও ততদিন ক্ষমতায় টিকে থাকবে।
গুম-খুনের শিকার পরিবারের সদস্যদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি এখন। এখন কোনো যুদ্ধ নেই। কোনো শত্রুর সঙ্গে লড়াই হচ্ছে না। অথচ আজকে তরুণদের গুম করে দেওয়া হচ্ছে। তাদের একমাত্র অপরাধ, তারা পরিবর্তন চায়। তাদের কথাগুলো বলতে চায়, নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
এমন রাজনৈতিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের জন্য ও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের জন্য সব রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বানও জানান মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, এই আন্দোলন হবে গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার জন্য। জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য।
বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা বলেন, ইলিয়াস আলীকে গুম করে দেওয়ার পর সরকার নাটক সাজাতে চেয়েছিল। খারাপ খারাপ কথা লিখে দেয়ালে পোস্টার সাঁটিয়েছিল। কিন্তু জনগণ সেটা গ্রহণ করেনি।
তিনি বলেন, এই সরকার বিএনপির মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের গুম করে দিয়ে মেসেজ দিতে চেয়েছিল যে স্টপ হয়ে যাও। আন্দোলন করলে, কথা বললে গুম হয়ে যাবে।
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, নজরুল ইসলাম খান, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণঅধিকার পরিষদের আহবায়ক ড. রেজা কিবরিয়া, ঢাবির সাবেক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, ইলিয়াস আলীর ছেলে আবরার ইলিয়াস, বৃটিশ হাই কমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি সালাওয়াত এডুফি সহ গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা।
‘ইলিয়াস আলীসহ সব গুমের শিকার ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দাও’ শীর্ষক এই আলোচনা সভাটি পরিচালনা করেন বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক কমিটির সদস্য ফারজানা শারমিন পুতুল।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়