একীভূত হতে ব্যাংক পরিচালকদের ছয় মাস সময় দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

একীভূতকরণের (মার্জার) মাধ্যমে ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনতে বেসরকারি ব্যাংক পরিচালকদের ছয় মাস সময় দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ সময়ের মধ্যে নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী সবল বা দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে বলা হয়েছে। অন্যথায় আগামী জানুয়ারি থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিজস্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করে দেবে। বেসরকারি ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) নেতাদের সঙ্গে গতকাল অনুষ্ঠিত বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বিএবি নেতাদের গভর্নর বলেছেন, ‘‌আমাদের কাছে তথ্য আছে কোন ব্যাংক ভালো, আর কোন ব্যাংক খারাপ। আপনারা চাইলে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার উদ্যোগ নিতে পারেন। সবল দুটি ব্যাংক একীভূত হয়ে আরো বড় ও শক্তিশালী হতে চাইলে সেটিতেও আপত্তি নেই। ভারত, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। একীভূত হলে ব্যাংক শক্তিশালী হয়। নিজেরা একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে আগামী জানুয়ারি থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবে।’

বিএবি নেতাদের সঙ্গে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের এ বৈঠক বেলা ৩টায় শুরু হয়ে চলে প্রায় ২ ঘণ্টা। বাংলাদেশ ব্যাংকে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বিএবি চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদারের নেতৃত্বে ছয়-সাতটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিচালকরা অংশ নেন। আর বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর ছাড়াও সংশ্লিষ্ট বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভা শেষে বিএবি ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ব্যাংক একীভূত করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কথা হয়েছে। যেকোনো ব্যাংকের পরিস্থিতি যেকোনো কারণে খারাপ হয়ে যেতে পারে। সারা পৃথিবীতে ব্যাংক খারাপ হয়, যুক্তরাষ্ট্রেও হয়েছে। আমাদের এখানেও কিছু ব্যাংক খারাপ হয়ে গেছে। তবে বেশির ভাগ ব্যাংক ভালো অবস্থায় আছে। ভারত, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাংক একীভূত হয়েছে। গভর্নর আমাদের সামনে সেসব দেশের উদাহরণ তুলে ধরেছেন।’

তিনি বলেন, ‘দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আমাদের মতামত জানতে চেয়েছিল। আমরা বলেছি, জাতীয় স্বার্থে ব্যাংক একীভূত করা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমরা একমত। আমরা শেয়ারধারী, আজীবন চেয়ারম্যান পদে থাকব না। প্রজন্মের পর প্রজন্ম আসবে। গভর্নর আমাদের বলেছেন, এক বছরের মধ্যে একীভূত করার কাজ শেষ হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও নিরীক্ষা কমিটির হিসাবে ১০ শতাংশ ব্যাংক খারাপ করছে। এটা হতেই পারে।’

নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, ‘ব্যাংক একীভূত করা হলে ভালো-খারাপ কোনো ব্যাংকেরই ক্ষতি হবে না। একীভূত হলে খারাপ ব্যাংক ভালো হবে, ভালো ব্যাংক আরো ভালো হবে। এতে আমাদের কোনো উদ্বেগ নেই।’

বৈঠক সূত্র মতে, গভর্নরের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান বলেন, ‘যাদের কারণে ব্যাংক খারাপ হলো, তাদের তো কিছুই হলো না।’ এর জবাবে গভর্নর বলেন, ‘‌একীভূত হলে দুর্বল ব্যাংকগুলোর উদ্যোক্তাদের পাঁচ বছর পর্যন্ত পরিচালক হওয়া থেকে বিরত রাখা হতে পারে।’

বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা ও করপোরেট সুশাসনের উন্নয়ন ঘটাতে এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ১৭টি কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে। সেখানে মার্জার-অ্যাকুইজিশনের কথাও আছে। ব্যাংক একীভূত হওয়া সারা বিশ্বের একটি চর্চা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আমরা এ নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়ন করব। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী করতে এ উদ্যোগ। বিষয়টি ব্যাংক চেয়ারম্যানদের জানানো হয়েছে।’

মেজবাউল হক বলেন, ‘শুধু দুর্বল ব্যাংককে সবল ব্যাংকের সঙ্গে নয়, দুটি সবল ব্যাংকও আরো শক্তিশালী হতে একীভূত হতে পারে। কোনো ব্যাংকের এক কোটি গ্রাহক থাকলে সে গ্রাহকও ব্যাংকের সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। ব্যাংকের সম্পদ খারাপ হলেও গ্রাহকসংখ্যা দেখে কেউ দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে পারে। স্বেচ্ছায় কোনো ব্যাংক একীভূত হতে পারে, আবার নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকেও কোনো ব্যাংককে অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করে দেয়া হতে পারে। এরই মধ্যে আমরা প্রম্পট কারেক্টিভ অ্যাকশন (পিসিএ) নামে একটি ফ্রেমওয়ার্ক দিয়েছি। সেটির ভিত্তিতে আগামী বছর ব্যাংকগুলোর কর্মতৎপরতার মূল্যায়ন হবে। তারপর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।’

প্রসঙ্গত, এতদিন বাড়ানোর পক্ষে থাকলেও এখন ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনতে চাইছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার উদ্যোগের কথা জানানো হয়। দেশের ব্যাংকগুলোর আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে গত ৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক ঘোষণা করা হয়। পরে গত ৪ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে খেলাপি ঋণ কমানো ও ভেঙে পড়া সুশাসন ফেরাতে ১৭ কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়। 

ওই দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন ডেপুটি গভর্নর আবু ফরাহ মো. নাছের বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জারীকৃত পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক ২০২৫ সালের মার্চ থেকে কার্যকর হবে। এজন্য সব ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীকে পিসিএ বাস্তবায়ন কমিটি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। খেলাপি ঋণ, তারল্য, মূলধন ও সুশাসন—এ চার মানদণ্ডের ভিত্তিতে আগামী বছর র‍্যাংকিং হবে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর ২০২৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদন মূল্যায়ন করা হবে। কোনো ব্যাংক পিসিএ ফ্রেমওয়ার্কে উল্লেখিত লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জনে ব্যর্থ হলে সেগুলো অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করে দেয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো চাইলে নিজেরাও একীভূত হওয়ার প্রস্তাব দিতে পারবে। একীভূত হওয়ার পরবর্তী তিন বছর কোনো কর্মচারী চাকরিচ্যুত হবে না।’ 

এ বিষয়ে ঘোষিত রোডম্যাপে বলা হয়, ‘একাধিক ব্যাংক একীভূত হলে পরিচালনা পর্ষদ শক্তিশালী হবে। ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দূর হবে। একই সঙ্গে প্রশাসনিক ব্যয় কমে আসবে।’

এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি ব্যাংক নির্বাহীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘আমরা একীভূতকরণের মাধ্যমে ব্যাংকের সংখ্যা কমিয়ে আনতে চাই। কোনো দুটি ব্যাংক নিজে থেকে একীভূত হওয়ার প্রস্তাব দিলে সেটি বিবেচনায় নেয়া হতে পারে।’ ওই বৈঠকে গভর্নর ব্যাংকের সংখ্যা ৬১ থেকে কমিয়ে ৪৫-এ নামিয়ে আনার ইঙ্গিত দেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৎপরতার মধ্যেই ব্যাংক খাতে মার্জার-অ্যাকুইজিশন বিষয়ে নানা আলোচনা ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় একটি ব্যাংকের সঙ্গে চতুর্থ প্রজন্মের একটি দুর্বল ব্যাংকের একীভূত হওয়ার গুঞ্জন ওঠে। বিষয়টি নিয়ে ওই ব্যাংক পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি হয়। আবার বেসরকারি খাতের ভালো ব্যাংক হিসেবে পরিচিত পাঁচ-সাতটি ব্যাংকের সঙ্গে তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের দুর্বল ব্যাংকগুলোকে বাধ্যতামূলকভাবে একীভূত করে দেয়া হতে পারে বলেও গুঞ্জন ওঠে। এ অবস্থায় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর অনেক উদ্যোক্তা বিএবি নেতাদের কাছে প্রকৃত অবস্থা জানতে চান। অনেকে মার্জারের বিষয়ে সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কেও জানার চেষ্টা করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিএবির পক্ষ থেকে গত রোববার জরুরি সভার আয়োজন করা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে গতকাল গভর্নরের সঙ্গে বিএবি নেতারা বৈঠকে বসেন।
এই বিভাগের আরও খবর
টোল আদায়ে দেড় হাজার কোটির মাইলফলকে পদ্মা সেতু

টোল আদায়ে দেড় হাজার কোটির মাইলফলকে পদ্মা সেতু

বাংলা ট্রিবিউন
টানা ৩ দিন ধরে কমছে সোনার দাম

টানা ৩ দিন ধরে কমছে সোনার দাম

দৈনিক ইত্তেফাক
বোতলের সয়াবিন তেলের লিটার ১৬৭, খোলা ১৪৭ টাকা

বোতলের সয়াবিন তেলের লিটার ১৬৭, খোলা ১৪৭ টাকা

দৈনিক ইত্তেফাক
মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট না বসানোর চেষ্টা চলছে

মেট্রোরেলের টিকিটে ভ্যাট না বসানোর চেষ্টা চলছে

প্রথমআলো
বাংলাদেশ থেকে সরাসরি তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারে ব্রাজিল

বাংলাদেশ থেকে সরাসরি তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারে ব্রাজিল

বিডি প্রতিদিন
ভারতে স্বর্ণের দামে সর্বকালের রেকর্ড

ভারতে স্বর্ণের দামে সর্বকালের রেকর্ড

বিডি প্রতিদিন
ট্রেন্ডিং
  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া

  • অবিশ্বাস্য কীর্তিতে হাজার রানের ক্লাবে এনামুল বিজয়