নজিওকর্মী ছিলেন সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার সদরপুর গ্রামের নাজিম উদ্দিন। এনজিওতে কাজ করার সুবাদে পরিচয় হয় ময়মনসিংহের কয়েকজন মুক্তা চাষীর সঙ্গে। তাদের কাছ থেকে মুক্তা চাষ দেখে আগ্রহ বেড়ে যাওয়ায় শখের বশে নিজের ৪০ শতাংশ জায়গার ওপর পুকুরে ৫শ’ ঝিনুক দিয়ে চাষ শুরু করেন তিনি। প্রথম দিকে লাভ না হলেও বর্তমানে মুক্তাচাষে সফল হয়েছেন তিনি। তার উৎপাদিত মুক্তা এখন দেশের বিভিন্ন বাজারের পাশাপাশি ভারতেও বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে মুক্তাচাষ করে এলাকার বেকারত্ব দূর করতে তিনি কয়েকজনকে দিয়েছেন চাকরি। তারাও মুক্তা চাষের পুরো প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেরা মুক্তা চাষ করছেন, পাশাপাশি নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি হচ্ছে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা পেলে এই মুক্তা দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব বলে মনে করেন মুক্তা চাষী নাজিম উদ্দিন।
এনজিওতে কাজ করার সুবাদে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০১৭ সালে শখের বশে নিজের ৪০ শতাংশ জায়গার পুকুরে মাছের পাশাপাশি সাত হাজার টাকা খরচ করে ৫শ’ ঝিনুক দিয়ে চাষ শুরু করেছিলেন নাজিম উদ্দিন। শুরুতেই তার অধিকাংশ মুক্তা মারা যায়। হতাশ হয়ে যান তিনি। কিন্তু পরে ২০১৮ সালে ময়মনসিংহ মুক্তা গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অরুণ চন্দ্র বর্মণের কাছে গিয়ে আবারও মুক্তার ওপর প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তা চাষের কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে আসেন। ২০১৯ সালে হাওড়সহ বিভিন্ন নদ-নদী থেকে ঝিনুক সংগ্রহ করে ৭ হাজার টাকা খরচ করে ৮শ’ ঝিনুক দিয়ে চাষ শুরু করেন। এ সময় কিছু ঝিনুক মারা গেলেও বছর শেষে উৎপাদিত মুক্তা প্রায় ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন তিনি। এরপর থেকে মুক্তা চাষে আগ্রহ বেড়ে যায় নাজিম উদ্দিনের। তিনি বাণিজ্যিকভাবে নেমে যান মুক্তা চাষে। ২০২০ সালে মুক্তা চাষ করে কিছু লাভ হলেও অধিকাংশ মুক্তা করোনা মহামারীর কারণে বিক্রি করতে পারেননি। ২০২১ সালে ৩ হাজার ৫শ’ ঝিনুক দিয়ে চাষ করেছেন। এবার মুক্তা চাষ করে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা বিক্রি করার আশা করছেন তিনি।
খামারের কর্মচারী র্যাবন সূত্রধর, মহাময়া বাগচি ও জাকারিয়াসহ অনেকে বলেন, তারা বেকার ছিলেন। নাজিম উদ্দিনের খামারে কাজ করার সুবাদে নিজেরা প্রশিক্ষণ নিয়ে এই খামারেই কাজ করছেন। তাদের বেকারত্ব দূর হয়েছে। এখন তারা ভাল টাকা বেতনও পাচ্ছেন। এরকম অনেকে এই খামারে এসে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেরা উদ্যোক্তা হচ্ছেন। তাদের দাবি সরকার মুক্তা চাষের ওপর গুরুত্ব দিলে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।
মুক্তা চাষী নাজিম উদ্দিন বলেন, মাছের পাশাপাশি মুক্তা চাষ শুরু করি শখের বশে। হাওড়সহ নদ-নদী থেকে ঝিনুক সংগ্রহ করে ‘অপারেশনের’ মাধ্যমে মুক্তা চাষ করতে হয়। ঝিনুকের খোলসের ভেতরের শিরা কেটে বিশেষ প্রক্রিয়ায় মুক্তা তৈরির জন্য সেটিং করা হয়, আর একেই বলা হয় ‘অপারেশন’। একটি ঝিনুকে ২ থেকে ৩টি মুক্তা জন্ম নিতে পারে। প্রায় ১০ মাস পর প্রতিটি ঝিনুক থেকে পরিপূর্ণ মুক্তা পাওয়া যায়। মুক্তার দুটি ধরন রয়েছে। একটি রাইচ মুক্তা আরেকটি ইমেজ মুক্তা। ইমেজ মুক্তার চাহিদা বেশি।
নাজিম উদ্দিন বলেন, মুক্তা চাষ করে প্রথমে লোকসান হলেও এখন মুক্তা চাষে লাভে আছি। বাংলাদেশের জুয়েলারির দোকান ছাড়া মুক্তা বিক্রি করা যায় না। সরকারী চাকরিজীবী, এনজিওকর্মী, ইউনিসেফ প্রতিনিধিসহ অনেকে আমার কাছ থেকে মুক্তা কিনেন এবং এখান থেকে দেশের পাশাপাশি ভারতসহ বিভিন্ন দেশে মুক্তা বিক্রি করছি। তিনি আরও বলেন, সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ও সহায়তা পেলে মুক্তা চাষ করে দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব। এতে দূর হবে হাওড়াঞ্চলের বেকার সমস্যা। তিনি জানান, হাওড়াঞ্চলে মুক্তা চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই মুক্তা চাষের ওপর প্রশিক্ষণ দিয়ে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি করছি।
তিনি বলেন, ভারত মুক্তার চাহিদা ও দাম বেশি কিন্তু বাংলাদেশে সেই পরিমাণে মুক্তার দাম নেই। এ কারণে দেশে মুক্তা বেচাকেনার মার্কেট গড়ে ওঠেনি। যদি মুক্তা বেচাকেনার ক্ষেত্রে মার্কেটিংয়ের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়, তাহলে আমাদের দেশ অর্থনীতিতে আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারত।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়