দেশের বিভিন্ন ব্যাংকের প্রায় ৮০০ কোটি টাকারও বেশি ঋণ খেলাপি। ব্যাংকের কাছে ঋণের বিপরীতে জামানতও পর্যাপ্ত নয়। কিছু ব্যাংকের কাছে ঋণের বিপরীতে কোনো জামানতই নেই। ফেরত না দিয়ে উল্টো ঋণের অর্থ অন্য খাতে ব্যবহার ছাড়াও কানাডায় গড়েছেন বিলাসবহুল বাড়ি। ব্যাংকের খেলাপি এ গ্রাহক চট্টগ্রামের ম্যাক ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার মো. জয়নাল আবেদিন। গতকাল অর্থঋণ আদালত তাকে পাঁচ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন। প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের গ্রেফতারি পরোয়ানার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থঋণ আদালতের বিচারক মুজাহিদুর রহমান এ আদেশ দেন।
জানা গেছে, ব্যবসার জন্য ঋণ নিয়ে ফেরত দেয়া না হলে পাওনা আদায়ে মামলা করে প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৫ সালে চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতে মামলা করে ব্যাংক (মামলা নং-৪৯/২০১৫)। ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ডিক্রিদার ব্যাংক ওই মামলায় রায় পায়। প্রতিষ্ঠানটির কাছে সর্বমোট ৯১ কোটি ২৭ লাখ ৩৫ হাজার ৭৯ টাকা আদায়ে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর জারি মামলা দায়ের করে (মামলা নং-৪৬৬/২০১৯)। ৫ জানুয়ারি ২০২২ তারিখে ব্যাংকের পক্ষ থেকে খেলাপি গ্রাহক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদিনের কাছ থেকে অর্থ আদায়ে গ্রেফতারি পরোয়ানার জন্য আবেদন করে। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মেসার্স ম্যাক ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার মোহাম্মদ জয়নাল আবেদিনকে পাঁচ মাসের সাজা দিয়েছেন। চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আদালতের তথ্য পর্যালোচনায়, প্রাইম ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার কাছ থেকে মেসার্স ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল ঋণ নেয় ৫৭ কোটি ৮৭ লাখ ৪০ হাজার ৯৫৭ টাকা। ২০১৫ সালের ৩ মার্চ থেকে ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত ১২ শতাংশ সুদ হিসেবে ব্যাংক আরো পাবে ৩৩ কোটি ৩৯ লাখ ৩৩ হাজার ৫৩২ টাকা। এছাড়া মামলা খরচ বাবদ ৬০ হাজার ৫৯০ টাকা যুক্ত করলে প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকের সর্বমোট পাওনা দাঁড়ায় ৯১ কোটি ২৭ লাখ ৩৫ হাজারে। আদালত খেলাপি গ্রাহকের সম্পত্তি ক্রোক করার মাধ্যমে নিলামে বিক্রি করে ডিক্রীকৃত টাকা আদায়ের নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি পাওনা আদায়ের মতো পর্যাপ্ত সম্পত্তি পাওনা না গেলে বা কোনো দায় ঘাটতি থাকলে দেওয়ানি আদালতে খেলাপি গ্রাহককে আটক রেখে ডিক্রীকৃত টাকা আদায়ের আবেদন জানালে আদালত পাঁচ মাসের সাজা দেন আলোচিত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জয়নাল আবেদিনের বিরুদ্ধে।
এক সময় ভোগ্যপণ্য ব্যবসা ছিল চট্টগ্রামভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মেসার্স ম্যাক ইন্টারন্যাশনালের। দেশে ইস্পাত ও শিপব্রেকিং ব্যবসার রমরমা অবস্থায় ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার মোহাম্মদ জয়নাল আবেদিন এ খাতে বিনিয়োগ করেন। ব্যাংকও ঢালাওভাবে ঋণ দেয় প্রতিষ্ঠানটিকে। ম্যাক ইন্টারন্যাশনালের সঙ্গে আরো যুক্ত ছিলেন জয়নাল আবেদিনের অন্য সহোদর জামিল আবেদিন ও মোহাম্মদ আলাউদ্দিন। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা নিয়ে পরিচালনা করলেও ২০১০ সালের দিকে ব্যবসায় ধস আসে। বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে ধস, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম উত্থানের পর পতন হলে বন্ধ হয়ে যায় ম্যাক ইন্টারন্যাশনালের ব্যবসা। এরপর ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করেই সপরিবারে কানাডা পাড়ি জমান জয়নাল আবেদিন। জয়নালের অন্য এক ভাই জামিল আবেদিন পাড়ি দেন যুক্তরাষ্ট্রে। এ পর্যন্ত মেসার্স ম্যাক ইন্টারন্যাশনালের কাছে ১২টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পাওনা দাঁড়িয়েছে ৮০০ কোটি টাকার বেশি।
জানতে চাইলে প্রাইম ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখার ম্যানেজার মো. সিরাজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ম্যাক ইন্টারন্যাশনালের কর্ণধার জয়নাল আবেদিনের নামে প্রাইম ব্যাংকের একাধিক মামলা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এ খেলাপি গ্রাহক বিদেশে পলাতক রয়েছেন। এর মধ্যে একটি মামলায় আদালত সাজা দিয়েছেন। আদালতের আদেশ ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে প্রাইম ব্যাংক অর্থ আদায়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এ-সংক্রান্ত সার্বিক বিষয়গুলো প্রাইম ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়