বিদেশে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির লবিস্ট নিয়োগ ইস্যুতে তোলপাড় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। অবশ্য এ বিষয়টি অস্বীকার করেছে দু’পক্ষই। তবে বিএনপি বলছে, দলটি লবিস্ট নিয়োগ করেনি; চিঠি দিয়েছে। কিন্তু কী ছিল ওইসব চিঠিতে?
চিঠিগুলো ঘেঁটে দেখা যায়, এসব লিখেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যুক্তরাষ্ট্রের চার প্রভাবশালী রাজনীতিককে তিনি যে চারটি চিঠি লিখেছিলেন, তার দুটিতে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। অন্য দুটি চিঠিতে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জানানো হয় তদন্তের আহ্বান।
প্রায় তিন বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রভাবশালী কংগ্রেসম্যানকে লেখা ওই চিঠিতে বাংলাদেশকে দেয়া সহায়তা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দেশে গণতন্ত্রের অবনতি ঘটেছে, এমন অভিযোগ করা হয় ওই চিঠিতে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের দুজন সিনেটরকে চিঠি দেয়া হয় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়ে।
সরকারের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগের অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের মধ্যে বাকযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মির্জা ফখরুলের চারটি চিঠি প্রকাশ করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
এর মধ্যে ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল সে সময়ের কংগ্রেসম্যান নিতা লোয়ি ও লিন্ডসে গ্রাহামকে একটি চিঠি লেখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে তিনি বাংলাদেশকে দেয়া বৈদেশিক সহায়তা পর্যালোচনার অনুরোধ করেন। নিতা সে সময় যুক্তরাষ্ট্রের হাউস কমিটি অন অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস এবং সাব-কমিটি অন স্টেট, ফরেন অপারেশনস এন্ড রিলেটেড প্রোগ্রামসের প্রধান ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েল অ্যালায়েন্স ককাসের সদস্যও ছিলেন তিনি।
ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির গুরুত্বপূর্ণ এই নেতা বর্তমানে এসব পদে নেই। ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি অবসরে যান তিনি। অবসরে গেলেও সরকারের সঙ্গে এই ধরনের নেতাদের যোগাযোগ থাকে। লিন্ডসে গ্রাহাম বর্তমানে ক্ষমতার বাইরে থাকা রিপাবলিকান পার্টির সিনেটর। এর পাশাপাশি তিনি সিনেট অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস সাব-কমিটি অন স্টেটসের পাশাপাশি ফরেইন অ্যাফেয়ার্স এন্ড রিলেটেড প্রোগ্রামসের চেয়ারম্যান ছিলেন।
অপর দুটি চিঠি দেয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দুই রাজনীতিক মিট রমনি ও জেমন রিসককে। রমনি সে সময় পূর্ব, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ও সন্ত্রাসবিরোধী সাব-কমিটির প্রধান ছিলেন। জেমস রিসক, পররাষ্ট্র বিষয়টি সিনেট কমিটির প্রধান ছিলেন। বাংলাদেশে ২০১৮ সালের নির্বাচন সুষ্ঠু ছিল না- এমন অভিযোগ করে ফখরুল দাবি করেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার অবনতি ঘটছে।
নিতা ও গ্রাহামকে দেয়া চিঠিতে মির্জা ফখরুল লেখেন, এই উদ্বেগজনক প্রবণতা ও ইউএস ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের সঙ্গে তাদের সম্পর্কিত ঝুঁকির আলোকে, আমরা দৃঢ়ভাবে আপনাকে যে প্রশ্নগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বরাদ্দ প্রক্রিয়া চলাকালীন বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা এবং বৈদেশিক সহায়তা পর্যালোচনা করে সেগুলো উত্থাপন করার সুযোগ বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করছি।
যেহেতু বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ নিশ্চিতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, তাই এটি অপরিহার্য যে, যুক্তরাষ্ট্রের বরাদ্দ প্রক্রিয়াকে কার্যকর উপায় হিসেবে কাজে লাগাতে হবে- যাতে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা গণতন্ত্রের বিনিময়ে না আসে।
চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিদেশিদের কাছে লেখা আমার ওইসব চিঠি কোনো লবিস্ট নিয়োগের বিষয়ে নয়, মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের প্রতি আহ্বান মাত্র’।
অন্যদিকে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুল যে চিঠি লিখেছেন বিদেশিদের কাছে তা স্বীকার করেছেন। তিনি যেটা অস্বীকার করেছেন সেটা হচ্ছে সাহায্য বন্ধের কথা লেখা। কিন্তু তিনি এই নথিগুলো কীভাবে অস্বীকার করবেন?’
চিঠিতে যা বলা হয়েছে : মির্জা ফখরুল লেখেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অবনতি সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে কংগ্রেসের পদক্ষেপের আহ্বান জানানোর এই সুযোগের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। যেহেতু বর্তমান ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ সরকার একটি কর্তৃত্ববাদী, একদলীয় শাসনের পথে হাঁটার পরিকল্পনা করছে, আমরা সম্মানের সঙ্গে কংগ্রেসনাল অ্যাপ্রোপ্রিয়েটরদের বাংলাদেশে মার্কিন সহায়তা ও বৈদেশিক সহায়তা পর্যালোচনা করার জন্য তত্ত্বাবধান ক্ষমতা প্রয়োগ করার আহ্বান জানাই।
এটা জরুরি যে কংগ্রেসনাল অ্যাপ্রোপ্রিয়েটররা সতর্কতা ও কৌশলীভাবে এ পন্থা ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের অত্যাবশ্যক জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে মার্কিন ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ক্ষেত্রে এমনভাবে সুরক্ষিত করবেন- যা বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন কর্তৃপক্ষের কঠোর নেতৃত্বের অধীনে ক্রমাগত খারাপ হতে থাকা পরিস্থিতির উন্নতিতে অবদান রাখে।
২০১৮ সালের ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, নির্বাচনের পর, দেশে গণতন্ত্রের অবনতি যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ ও এর প্রতি অসন্তোষ অব্যাহত রেখেছে। ইউএস এক্সিকিউটিভ ব্রাঞ্চ, সশস্ত্র বাহিনী ও কংগ্রেস ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কর্তৃত্ব ও মানবাধিকারের অপব্যবহারের বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
তিনি উল্লেখ করেন, মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের স¤প্রতি প্রকাশিত বার্ষিক হিউম্যান রাইটস রিপোর্টে বাংলাদেশের ওপর ৫০ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন রয়েছে। ওই প্রতিবেদনে ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ ডিসেম্বরে এমন একটি ব্যাপকভাবে একতরফা সংসদ নির্বাচনে টানা তৃতীয় পাঁচ বছরের মেয়াদে জয়লাভ করেছে যেটি অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না ও যেখানে ব্যালট বাক্স ভর্তি, বিরোধী পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদের ভয় দেখানোর মতো বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ছিল।
আর্মড সার্ভিসেস কমিটির সামনে সিনেটের সাক্ষ্যে ইউএস ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডের প্রধান অ্যাডমিরাল ফিলিপ এস ডেভিডসন উল্লেখ করেছেন যে, বাংলাদেশে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ক্ষমতা সুসংহত করার প্রবণতার জানান দেয় ও এতে আশঙ্কা জেগেছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি একদলীয় রাষ্ট্র অর্জনের লক্ষ্যে রয়েছেন।
বাহ্যিক চাপ সত্ত্বেও, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তার শাসনকে সুসংহত করতে এবং নাগরিক স্বাধীনতা ও বিরোধী কণ্ঠস্বরের ওপর আক্রমণ চালিয়ে যেতে চায় বলেও অভিযোগ করেন ফখরুল। তিনি বলেন, অধিকন্তু চলমান রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতা আরো খারাপের দিকে মোড় নিয়েছে। কারণ জাতিসংঘ স¤প্রতি শরণার্থীদের একটি উপকূলীয় দ্বীপে স্থানান্তর করার সরকারের পরিকল্পনার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংশ্লিষ্ট উদ্বাস্তুদের সম্মতি ছাড়া অপরিকল্পিত স্থানান্তরে নতুন সংকট সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক করেছে।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তদন্তের আহ্বানে দুই চিঠি : মিট রমনি ও জেমন রিসককে দেয়া চিঠির ভাষাও হুবহু এক। এতে ফখরুল লেখেন, বাংলাদেশে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অনিয়মের ব্যাপক অভিযোগ খতিয়ে দেখার জন্য একটি স্বাধীন তদন্তের গুরুত্ব ও এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য কোনো অর্থবহ পদক্ষেপের অভাব সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আন্তর্জাতিক স¤প্রদায় বারবার আহ্বান জানানো সত্ত্বেও, কোনো তদন্ত হয়নি ও তদন্তের পরিকল্পনাও জানানো হয়নি।
যেহেতু বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল কর্তৃত্ববাদী, একদলীয় শাসনের দিকে ধাবিত হওয়ার পরিকল্পনা করছে, আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে কংগ্রেস নেতাদের প্রশ্ন উত্থাপন করার জন্য অনুরোধ করছি- যাতে একটি স্বাধীন তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বানগুলোর দিকে মনোযোগ দেয়া হয়।
ইউএস ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের পরিপ্রেক্ষিতে, গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং মানবাধিকারের প্রতি সমর্থন আমেরিকান স্বার্থকে এগিয়ে নেয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেন ফখরুল। তিনি লেখেন- যা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন এর অভাব ও এর জবাবদিহিতার অব্যাহত অভাবের কারণে হুমকির সম্মুখীন।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়