কৃষিপণ্যে মুনাফার সর্বোচ্চ হার বেঁধে দিলো সরকার

কোন কৃষিপণ্যে সর্বোচ্চ কত লাভ করা যাবে- তা বেঁধে দিয়েছে সরকার। কৃষিপণ্যের সর্বোচ্চ মুনাফার হার বেঁধে দিয়ে কৃষি বিপণন আইনে দেয়া ক্ষমতাবলে ‘কৃষি বিপণন বিধিমালা, ২০২১’ জারি করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

‘কৃষি বিপণন আইন, ২০১৮’-এ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকে কৃষিপণ্যের সর্বনিম্ন মূল্য ও যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ এবং বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিপণন অধিদপ্তর কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে বিভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন মুনাফার হার ধরে কৃষিপণ্যের যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করে আসছিল। এখন মুনাফার সর্বোচ্চ হার বেঁধে দেয়া হলো।

বিধিমালায় বাজারকারবারি ও সুপারশপ পরিচালনাকারীর দায়িত্বে বলা হয়েছে, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্যে কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণ কেনাবেচা করতে হবে।

অনেক সময় অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় কৃষিপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা করে। এখন বিধিমালায় মুনাফার সর্বোচ্চ হার বেঁধে দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া আরও সহজ হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

একই সঙ্গে কৃষি বিপণন আইন অনুযায়ী, কৃষিপণ্য ও কৃষি উপকরণের রপ্তানিকারক, আমদানিকারক, ডিলার, মিলার, সরবরাহকারী, প্রক্রিয়াজাতকারী এবং চুক্তিবদ্ধ ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স নেওয়ার ফি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে বিধিমালায়।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ বিদেশে থাকায় তার সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা যায়নি। অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (বাজার সংযোগ-১) মো. মজিবর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন কৃষিপণ্যের যৌক্তিক দাম নিয়ে একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করি। আমাদের লোকজন বাজার থেকে কৃষিপণ্যের পাইকারি দাম কালেকশন করেন। এরপর প্রতিটি পণ্যের ক্ষেত্রে কস্ট কত হতে পারে, এর মধ্যে পণ্যের দাম ছাড়াও দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ খরচ, শ্রমিকের মজুরি থাকে। এর সঙ্গে মুনাফা যোগ করে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে যৌক্তিক দাম নির্ধারণ করি। মুনাফার হারটা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন দেয়া, এটা মাঝে মাঝে পরিবর্তন হয়।’

তিনি বলেন, ‘এখন কৃষি বিপণন আইনের অধীনে বিধিমালায় মুনাফার হারটা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এখন এটাই চূড়ান্ত।’

কেউ এ নির্ধারিত হারের বেশি মুনাফা নিলে সরকার আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারবে বলেও জানান কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা।

বিধিমালায় বলা হয়েছে, ধান, চাল, গম, ভুট্টা ও অন্যান্য খাদ্যশস্যের ক্ষেত্রে উৎপাদক পর্যায়ে সর্বোচ্চ যৌক্তিক মুনাফার হার ৩০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ও খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ হার ২৫ শতাংশ। পাট, চা, তুলা, তামাক ও অন্যান্য অর্থকরী ফসল এবং সব ধরনের ডাল ও কলাইয়ের (খোসাসহ ও খোসা ছাড়া) ক্ষেত্রেও তিনটি পর্যায়ে যৌক্তিক মুনাফার সর্বোচ্চ হার হবে একই।

তেলবীজ রাই, সরিষা, তিল, তিসি, বাদাম, নারিকেল, রেঢ়ি, সূর্যমুখী, সয়াবিন ও অন্যান্য ক্ষেত্রে যৌক্তিক মুনাফার সর্বোচ্চ হার হবে উৎপাদক পর্যায়ে ৩০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ও খুচরা পর্যায়ে ৩০ শতাংশ।

আখ এবং সব ধরনের গুড়ের ক্ষেত্রে যৌক্তিক মুনাফার সর্বোচ্চ হার উৎপাদক পর্যায়ে ৩৫ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ১৫ ও খুচরা পর্যায়ে ৩০ শতাংশ।

সব ধরনের ভাজা ও শুকনা ফলের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মুনাফার হার উৎপাদক পর্যায়ে ৩০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ২০ ও খুচরা পর্যায়ে ৩০ শতাংশ।

সব ধরনের তাজা ও শুকনা ফুল, ক্যাকটাস, অর্কিড, পাতাবাহার ও অন্যান্য এবং আলুসহ সব প্রকার শাক-সবজির ক্ষেত্রে যৌক্তিক মুনাফার সর্বোচ্চ হার উৎপাদক পর্যায়ে ৪০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ২৫ ও খুচরা পর্যায়ে ৩০ শতাংশ।

সব ধরনের মাছ (তাজা, শুকনা, লবণজাত ও হিমায়িত) ও অন্যান্য মাছের ক্ষেত্রে মুনাফার সর্বোচ্চ হার উৎপাদক পর্যায়ে ৩০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ১৫ ও খুচরা পর্যায়ে ২৫ শতাংশ।

পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, মরিচ (কাঁচা) ও অন্যান্য মসলার ক্ষেত্রে মুনাফার সর্বোচ্চ হার উৎপাদক পর্যায়ে ৪০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ২০ ও খুচরা পর্যায়ে ৩০ শতাংশ এবং ধনিয়া, কালোজিরা, মরিচ (শুকনা) ও এ জাতীয় অন্যান্য মসলার ক্ষেত্রে উৎপাদক পর্যায়ে ৩০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ১৫ ও খুচরা পর্যায়ে সর্বোচ্চ মুনাফার হার হবে ২৫ শতাংশ।

ডিম, দুগ্ধ ও অন্যান্য দুগ্ধজাত দ্রব্য, সুপারি, পান, সব প্রকার ভুসি, ডাব, নারিকেল ও অন্যান্য ক্ষেত্রেও মুনাফার সর্বোচ্চ হার বেঁধে দেয়া হয়েছে। এসব কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে মুনাফার হার হবে উৎপাদক পর্যায়ে ৩০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ১৫ ও খুচরা পর্যায়ে ২৫ শতাংশ।

চিড়া, মুড়ি, সুজি, সেমাই, আটা, ময়দা সব প্রকার কৃষিপণ্যের রস ও জুস, আচার, বেসন, চিপস, অন্য যেকোনো প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্যে সর্বোচ্চ মুনাফার হার উৎপাদক পর্যায়ে ৩০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ১৫ ও খুচরা পর্যায়ে ২৫ শতাংশ।

উৎপাদক পর্যায়ে যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণের বিষয়ে বিধিমালায় বলা হয়েছে, কৃষিপণ্যের উৎপাদন খরচ ও বিপণন খরচের সঙ্গে উল্লিখিত শতকরা হারে মুনাফা ধার্য করে যৌক্তিক বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করতে হবে।

একই সঙ্গে কৃষিপণ্যের পাইকারি ক্রয়মূল্য (উৎপাদকের বিক্রয়মূল্য) ও বিপণন খরচের সঙ্গে শতকরা হারে মুনাফা ধার্য করে যৌক্তিক বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করতে হবে। কৃষিপণ্যের খুচরা কারবারিও ক্রয়মূল্য (পাইকারি বিক্রয়মূল্য) ও বিপণন খরচের সঙ্গে শতকরা হারে মুনাফা ধরে যৌক্তিক বিক্রয়মূল্য নির্ধারণ করবে।

কৃষি বিপণন আইনে বলা হয়েছে, কৃষি উপকরণ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে বা সরকারের নির্ধারিত হারের বেশি মুনাফা গ্রহণ করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলে শাস্তি হবে দ্বিগুণ।

লাইসেন্স ফি নির্ধারণ
আইন অনুযায়ী, কৃষি পণ্য ও কৃষি উপকরণের ব্যবসা ও আমদানি-রপ্তানি করতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। বিধিমালায় নতুন লাইসেন্স ও লাইসেন্স নবায়ন ফি বেঁধে দেয়া হয়েছে।

হিমাগারের নতুন লাইসেন্স ফি এক হাজার ৫০০ ও নবায়ন ফি ৮০০ টাকা। চুক্তিবদ্ধ চাষ ও বিপণন ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নতুন লাইসেন্সের জন্য এক হাজার ২০০ টাকা দিতে হবে, নবায়ন ফি ৬০০ টাকা। কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকারী প্রতিষ্ঠান এবং বড় গুদাম, রপ্তানিকারক, আমদানিকারক, সরবরাহকারীর নতুন লাইসেন্স ফি এক হাজার ২০০, লাইসেন্স নবায়ন ফি ৬০০ টাকা।
এই বিভাগের আরও খবর
এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

প্রথমআলো
ব্যাংকের ওপর আস্থা কমায় টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনছে মানুষ

ব্যাংকের ওপর আস্থা কমায় টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনছে মানুষ

কালের কণ্ঠ
বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সাথে হওয়া চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সাথে হওয়া চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

নয়া দিগন্ত
প্রাইম ব্যাংক ও সেবা ডট এক্সওয়াইজেডের মধ্যে চুক্তি সই

প্রাইম ব্যাংক ও সেবা ডট এক্সওয়াইজেডের মধ্যে চুক্তি সই

বাংলা ট্রিবিউন
ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু

ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু

বাংলা ট্রিবিউন
ভারতে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম, কেজি উঠেছে ৭০–৮০ রুপিতে

ভারতে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম, কেজি উঠেছে ৭০–৮০ রুপিতে

প্রথমআলো
ট্রেন্ডিং
  • সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে 'বস্তায় বস্তায় ঘুষ' নেওয়ার অভিযোগ: দুদকের অনুসন্ধান শুরু

  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া