কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, ভাঙচুর, সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। অভিযানে শিশু শিক্ষার্থীরদেরও গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ আসছে।
সরকারি হিসেবে এখন পর্যন্ত ৯ দিনে গ্রেপ্তার হয়েছে সাড়ে ৫ হাজারেও বেশি মানুষ। তবে গ্রেপ্তারকৃতদের অধিকাংশই সরকারবিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শের নেতা-কর্মী। এখন প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে আদালত চত্ত্বরে। অনেকে স্বজনের খোঁজে পুলিশের কার্যালয়গুলোর সামনেও অপেক্ষা করছেন।
দৈনিক সমকালের শুক্রবারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, "নিম্ন আদালতের গারদখানার সামনে বাড়ছে ভিড়, কান্নাকাটি। সহিংসতার পর আটকদের রাখা হয়েছে এই গারদখানায়। রাজধানীর বিভিন্ন থানা থেকে প্রিজনভ্যানে করে তাদের এখানে আনা হয়। স্বজনরা এসেছেন তাদের একনজর দেখতে, কথা বলতে। নবম শ্রেণির ছাত্র আমির হামজাকে বুধবার দুপুরে রাজধানীর শেখেরটেকের ১২ নম্বর রোড থেকে আটক করে পুলিশ। একই সঙ্গে আটক করা হয় দশম শ্রেণির ছাত্র নাইম ইসলামকে। তারা দু'জন একসঙ্গে মোবাইল ফোনে খেলছিল।”
১৫ বছরের আমির হামজার মা রেহেনা বেগম চাকরি করেন একটি গার্মেন্টসে। সিএমএম আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে ছেলের জন্য কাঁদছিলেন রেহেনা। তিনি বলেন, "শখ করে ছেলেকে মোবাইল কিনে দিলাম, সেটাই কাল হলো।” পুলিশ তাকে জানিয়েছে, আমির হামজার মোবাইল ফোনে অপরাধমূলক মেসেজ পাওয়া গেছে। আমিরের বাবা ভোলার লালমোহনের বাসিন্দা মো. কাওসার জানান, তার ছেলের বিরুদ্ধে আদাবর থানায় নাশকতার মামলা দিয়েছে পুলিশ।
শিশু শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন, "শিশু শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি এখনো আমার নজরে আসেনি। নিশ্চিত করে না জেনে কিছু বলা যাবে না। তবে আমরা কোয়ালিটি অ্যারেস্ট করতে বলেছি। অর্থাৎ, ভিডিওতে যাদের দেখা গেছে বা এলাকার লোকজন যাদের দেখেছে, তাদেরকে অ্যারেস্ট করতে বলেছি। ছোট বাচ্চারা কোথায় অ্যারেস্ট হয়েছে আমি জানি না। তবে কিছু অল্প বয়সি ছেলে-মেয়েদের ওরা ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। সেটা আপনারাও দেখেছেন। এদের সামনে রেখেছিল। এদের অধিকাংশ কিশোর গ্যাং। এরা লেখাপড়া করে না, বাচ্চা ছেলে। সে কারণে আমাদের পুলিশ প্রথমে অ্যাকশনে যায়নি। এগুলো সেগুলো কিনা আমি জানি না।”
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঢাকাসহ ৫১টি মহানগর-জেলায় ৫২৫টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। গত ৯ দিনে (১৭ জুলাই থেকে ২৫ জুলাই) সারা দেশে মোট গ্রেপ্তারের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে বুধবার রাত থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত সারা দেশে গ্রেপ্তার করা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ১০০ জনকে। রাজধানীতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪৫১ জনকে। এর মধ্যে কয়েকটি জেলায় পুরোনো মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের অনেকে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী এবং দল দুটির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী। পাশাপাশি বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর নেতা-কর্মীদেরও গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিএনপির যুব বিষয়ক সহসম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক সাদ মোরশেদ, ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি কামরুল হাসানকে বুধবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয় বলে বিএনপি জানিয়েছে। এর আগে দুপুরে রাজধানীর বারিধারার বাসা থেকে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)-র চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থকে গ্রেপ্তার করে ডিবি।
‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলেই গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে'
এই অভিযানে অনেক ‘নিরীহ' ও ‘নিরপরাধ' মানুষকেও গ্রেপ্তার হচ্ছে বলে দাবি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমাদের অভিযানে কোনো নিরপরাধ মানুষ গ্রেপ্তার হওয়ার সুযোগ নেই। তবে কোনো এলাকায় আমরা ব্লকরেইড দেওয়ার পর অনেককেই ধরে আনি। কিন্তু যাচাই-বাছাই শেষে নিরপরাধ মানুষদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। শুধুমাত্র যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে, তাদেরই গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে। ”
শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে পুলিশ কমিশনার বলেন, "শুধুমাত্র যারা সহিংসতার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, এমনদেরই গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তবে শিক্ষার্থীরা খুব বেশি সহিংসতায় জড়ায়নি। যারা সহিংসতা চালিয়েছে, আমরা তাদের খুঁজে বের করছি। কোনো শিক্ষার্থী যদি সহিংসতায় না জড়িয়ে থাকে, তাহলে তাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই।”
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা লাগাতার কর্মসূচি শুরু করে ১ জুলাই। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে প্রায় সারা দেশে। এর পরদিন থেকে এই আন্দোলন ঘিরে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, সংঘর্ষ, সহিংসতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন জায়গায় এসব ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। র্যাব জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে নাশকতার অভিযোগে সারা দেশে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২২৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। এর মধ্যে ঢাকায় ৫৫ ও ঢাকার বাইরে ১৭৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) রাজধানীর বিভিন্ন থানায় আরো ১২৮টি মামলা করেছে। এ নিয়ে রাজধানীতে ২০১টি মামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২ হাজার ২০৯ জনকে। বাকি সাড়ে ৩ হাজার গ্রেপ্তার হয়েছে রাজধানীর বাইরে থেকে।
২২ বছর বয়সি মিজানকে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর উত্তরার ১২ নম্বর সেক্টর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। খবর পেয়ে তার বাবা মকবুল হোসেন ও মা রুমা বেগম লৌহজং থেকে ঢাকায় আসেন। আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে ছেলের জন্য অঝোরে কাঁদছিলেন রুমা বেগম। তিনি বলছিলেন, ৭ হাজার টাকা বেতনে মোহাম্মদপুরের একটি সাইনবোর্ড তৈরির কারখানায় কাজ করে মিজান। পুলিশ আটকের পর উত্তরা পশ্চিম থানায় তার বিরুদ্ধে ভাঙচুরের মামলা দিয়েছে। রুমা বেগম বলেন, "আমরা গরিব মানুষ, কাম করে খাই। রাজনীতি বুঝি না। ছেলেটা কী এমন করল?” মিজানের বাবা মকবুল লৌহজং বাজারে ভ্যানে ফল বিক্রি করেন। চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলেন, "আমার ছেলে এমন কী অপরাধ করল যে, জেলে থাকতে হবে। এখন কী হবে, কবে ছাড়া পাবে?' ছেলে নিরপরাধ বলেও দাবি করেন মকবুল।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়