মাত্র সাত বছর বয়সে ক্রিকেটের প্রেমে পড়ে বাড়ির পাশে খোলা মাঠে সকাল-সন্ধ্যা ক্রিকেট নিয়ে মেতে থাকতেন তৌহিদ হৃদয়। তবে এই ক্রিকেটের কারণেই ক্যারিয়ারের শুরুতে প্রতারণার শিকার হতে হয়েছিলে তাকে। ১০ বছর আগে ঢাকায় এসে বনশ্রীতে একটি ‘ভুয়া’ ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হয়ে গচ্চা দিয়েছিলেন বেশ কিছু টাকা। রীতিমতো শোকার্ত হয়ে পড়েছিলেন হৃদয়। শোক ভুলে ক্রিকেটে ফিরতে পেরেছেন কেবল মায়ের অনুপ্রেরণায়। ২০২০ সালে যুব বিশ্বকাপ জয়ী দলের অন্যতম সদস্য গত কয়েক বছরে বড়দের সঙ্গে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে অভিজ্ঞতায় রিক্ত হৃদয়, এখন অপেক্ষায় আছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট রাঙানোর।
বিপিএলের নবম আসরে দারুণ ব্যাটিং করে সবার নজর কেড়েছেন হৃদয়। সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে ৫টি হাফসেঞ্চুরি তার। সর্বোচ্চ অপরাজিত ৮৫। বিপিএলের আগে প্রথম শ্রেণি কিংবা লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটেও হৃদয় নিজের প্রতিভার জানান দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, শুক্রবার নিজেদের মধ্যে একটি প্রস্তুতি ম্যাচে হৃদয় ছিলেন সাবলীল। তাসকিন-মোস্তাফিজ কাউকেই সমীহ করনেনি এই ব্যাটার। হৃদয়ের দল ৬ ওভারে ১ উইকেটে ৬৩ রান করে। হৃদয় একাই ৩৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। বৃহস্পতিবারের ম্যাচেও হৃদয় ছিলেন উজ্জ্বল। তার এমন প্রস্তুতি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একাদশে সুযোগের জোর দাবি জানিয়ে রাখছেন হৃদয়।
কেবল অতি সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্স নয়, লম্বা সময় ধরে ঘরোয়া ক্রিকেটে হৃদয়ের পারফরম্যান্স তাকে জাতীয় দলে সুযোগ করে দিয়েছে। জাতীয় দলের নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন এমনটাই জানিয়েছেন, ‘এই ছেলে (তৌহিদ হৃদয়) রান করছে প্রথম শ্রেণি ও লিস্ট ‘এ’ তে। এমন না যে শুধু বিপিএলে এসেই সব রান করছে, তা কিন্তু না। অনেকেই মনে করছে— বিপিএলের পারফরম্যান্সই খুব বেশি চোখে পড়েছে, অবশ্যই চোখে পড়েছে বিপিএলের পারফরম্যান্স। এক্সট্রা অর্ডিনারি পারফর্ম করেছে। কিন্তু বিপিএলে যেমন ব্যাটিং সে করেছে, নরমালি হৃদয় কিন্তু এমন ব্যাটিং করে না।’
বিপিএল ফাইনাল চলাকালীন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সুযোগের খবর পান হৃদয়। সিলেট স্ট্রাইকার্সের সতীর্থ হৃদয়ের সুযোগের খবরের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে অধিনায়ক মাশরাফি বলেছিলেন, দ্রুতই তাকে ডাক দেওয়া হয়েছে। যদিও বাশার বুঝিয়ে দিলেন, একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার পরই দলে নেওয়া হয়েছে হৃদয়কে, ‘প্রথম শ্রেণি বা অন্য জাযগায় ডিফারেন্ট ব্যাটিং করেছে। আমরা সবকিছু নিয়েই চিন্তা করেছি শুধু বিপিএল না। বিপিএল ছিল মাত্র, তবে শেষ দুই বছরের পারফর্মটা মাথায় ছিল। সেটা নিয়েই আলোচনা হয়েছিল।’
হাবিবুল বাশারের মতো তৌহিদের কণ্ঠেও একই সুর। তার মতে, গত দুই বছরের পারফরম্যান্স তাকে জাতীয় দলে সুযোগ করে দিয়েছে, ‘আমি দুই বছর ধরেই বিভিন্ন জায়গায় ধারাবাহিকভাবে রান করছি। হয়তো সেসব নজরে আসেনি। বিপিএলে আমি কিছুটা আগ্রাসী ব্যাটিং করেছি, সেই কারণে সফল হয়েছি। ওটা নিয়েই সবাই আলোচনা করেছে।’
ঘরোয়া ক্রিকেটে দাপিয়ে বেড়ানো হৃদয় পুরোপুরি প্রস্তুত আছেন আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেকে মেলে ধরতে। তার কণ্ঠে আত্মবিশ্বাসের সুর, ‘আমি মনে করি আমি প্রস্তুত আছি। আমার আত্মবিশ্বাসীও আছে। আমি বিপিএলে রান করেছি, জাতীয় দলের আশা তাই মনের মধ্যে ছিলই। কিন্তু সুযোগ পাওয়াটাই তো মূল কথা নয়। আমাকে ওখানে প্রমাণ করতে হবে। নিশ্চিতভাবেই ঘরোয়া ক্রিকেট আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। আমি সেই পার্থক্য বুঝি। আমার মূল জায়গা হচ্ছে— পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ব্যাটিং করতে পারার ক্ষমতা। আশা করি, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সুযোগ পেলে সেই কাজটি ঠিকঠাক করতে পারবো।’
বগুড়ার ছেলে হৃদয় ঢাকায় এসে বনশ্রীতে একটি ‘ভুয়া’ ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হয়েছিলেন। জীবনের শুরুতে প্রতারণার শিকার হয়ে ক্রিকেটই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু মায়ের অনুপ্রেরণা ও স্থানীয় কোচ মহিউদ্দিনের তত্ত্ববধানে ক্রিকেটেই ‘ঘর বাঁধার’ সুযোগটা পেয়ে যান। পুরনো সেই কথা মনে করে কণ্ঠ ধরে এলো হৃদয়ের, ‘ক্রিকেটের প্রতি আমার ভালোবাসা দেখে, জমি বন্ধক রেখে বনশ্রীর সেই ‘অ্যাকাডেমি’র জন্য টাকা জোগাড় করেছিলেন আমার মা। টাকাগুলো হারানোর পর আমি ক্রিকেট ছেড়ে দিতে চেয়েছিলাম। সেই সময় মহিউদ্দিন স্যার আমাকে খেলার সুযোগ করে দেন।’
বগুড়ায় বিভাগীয় পর্যায়ে খেলার পর বিসিবির পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজনের নজরে আসেন হৃদয়। ২০১৬ সালে রাজশাহীতে সুজনের কোচিংয়ে পরিচালিত বাংলা ট্র্যাক ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হয়ে ক্রিকেট জীবনের পথ খুঁজে পান তিনি। সুজনের ভূমিকার কথা জানাতে গিয়ে হৃদয় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘মহিউদ্দিন স্যার আমাকে একটি অ্যাকাডেমিতে নিয়ে যান। আমি কয়েকটি টুর্নামেন্টে ভালো খেলেছিলাম, বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে বিভাগের হয়ে বেশ কিছু ম্যাচ খেলি। সেখানে সুজন স্যার (খালেদ মাহমুদ) আমাকে খেলতে দেখেন এবং আমার ব্যাটিং পছন্দ করেন। সত্যি কথা বলতে সুজন স্যার পাশে না থাকলে আমি এতদূর আসতে পারতাম না। ২০১৬ সাল থেকে সুজন স্যার আমার জন্য কী করেছেন, সেটি আমার পক্ষে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।’
বাংলাদেশ দলে বগুড়ার একমাত্র ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। নিজের এলাকার প্রতিভাবান হৃদয়ের সন্ধান পেয়েই মুশফিক খোঁজ-খবর নিতে থাকেন। হৃদয় যখন ২০১৭ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ পান, খবরটি পৌঁছে যায় মুশফিকের কাছে। তার পর হুট করে হৃদয়ের মোবাইলে মেসেজ, ‘ঢাকায় এসে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করিস।’ মুশফিকের সেই মেসেজ পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হৃদয় দ্রুতই ঢাকায় চলে আসেন। ২০১৭ সালে প্রথমবার মুশফিকের কাছ থেকে ব্যাট উপহার পান হৃদয়। এরপর নিয়মিতই নানা সময়ে মুশফিকের কাছ থেকে ব্যাট উপহার পেয়েছেন তরুণ এই ব্যাটার।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়