রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পর এবার কয়লা আমদানি সংকটের কারণে বন্ধ হতে চলেছে পটুয়াখালীর পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। বর্তমানে কেন্দ্রটিতে যে পরিমাণ কয়লা মজুদ রয়েছে তাতে আর দুই সপ্তাহ চলবে। কয়লার বিল বাবদ ২৯৩ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পড়েছে। চলতি এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসের এ বকেয়া পরিশোধ না করলে আর কয়লা সরবরাহ করবে না সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে বকেয়া পরিশোধের বিষয়টি জানিয়ে বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডকে (বিসিপিসিএল) চিঠি দিয়েছে চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি)। এ চিঠির বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।
বিসিপিসিএলের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা আমদানির জন্য ছয় মাসে ডেফার্ড পেমেন্ট (দেরিতে পরিশোধ) হিসেবে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল দিয়ে আসছে সিএমসি। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দীর্ঘমেয়াদি কয়লা আমদানির জন্য এ অর্থ দিচ্ছিল চীনা কোম্পানিটি। তবে কয়লা আমদানি বাবদ চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত মোট ১০ মাসের জন্য ২৯৩ মিলিয়ন ডলার (২৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার) বিল বকেয়া পড়েছে, যা আন্তঃব্যাংক ডলার রেট (১ ডলার সমান ১০৭) হিসেবে বাংলাদেশী টাকায় ৩ হাজার ১৩৫ কোটি ১০ লাখ ডলার। এ অর্থ পরিশোধ না করা হলে আর কয়লার অর্থ দিতে পারবে না সিএমসি।
বিষয়টি জানতে চাইলে বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কয়লা আমদানির বিল বকেয়ার কারণে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আর কয়লা আমদানি করা যাচ্ছে না। ২৯৩ মিলিয়ন ডলারের বকেয়া পড়েছে। এ অর্থ পরিশোধ করা না হলে সিএমসি আর অর্থ দেবে না। অর্থ না পেলে কয়লা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কয়লাও সরবরাহ করবে না। বর্তমানে প্লান্টে যে পরিমাণ কয়লা রয়েছে তা দিয়ে ১৫ দিন কেন্দ্রটি চালানো যাবে। এরপর বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ করে দিতে হবে। আমরা সিএমসির চিঠির বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি।’
এদিকে, বর্তমানে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার মজুদ রয়েছে ১৫ দিনের। সেই হিসেবে মজুদকৃত কয়লা দিয়ে ১৫ মে পর্যন্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালানো যাবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এরপর কেন্দ্রটির দুটি ইউনিট পুরোপুরি বন্ধ করে দিতে হবে। কেন্দ্রটি পূর্ণ সক্ষমতায় চালাতে দৈনিক ১২ হাজার টন কয়লার প্রয়োজন পড়ে। সেই হিসেবে প্রতি মাসে কেন্দ্রটির জ্বালানি বাবদ ৩ লাখ ৬০ হাজার টন কয়লার প্রয়োজন। কেন্দ্রটির কয়লা আমদানি করা হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া থেকে।
দেশের বিদ্যুৎ চাহিদায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির দুটি ইউনিট পূর্ণ ক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে রয়েছে। কয়লা সংকটে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে গেলে দেশে তীব্র লোডশেডিং হবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লা সরবরাহ করে বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করায় সিএমসির ওপর কয়লা আমদানির নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চীনের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) সূত্রে জানা গেছে, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ করে ইন্দোনেশিয়ার কোম্পানি পিটি বায়ান রিসোর্স টিবিক। আর এ প্রতিষ্ঠানটির কয়লার দাম পরিশোধ করে সিএমসি। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যৌথভাবে মালিকানায় রয়েছে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) ও চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত এ (সিএমসি) প্রতিষ্ঠানটি। ফলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালানোর জন্য সিএমসি ছয় মাসের দেরিতে অর্থ পরিশোধ সাপেক্ষে চীন থেকে ঋণ নিয়ে পায়রার জন্য কয়লা কিনছে। তবে দেশে ডলার সংকটের কারণে বিপুল পরিমাণ এ অর্থ একসঙ্গে পরিশোধ করতে পারছে না বিপিডিবি।
পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতা হলেও প্রকৃত উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট। বিদ্যুতের তীব্র চাহিদার সময়ও কেন্দ্রটি শতভাগ প্লান্ট ফ্যাক্টরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বর্তমানে টনপ্রতি কয়লার আমদানি খরচ পড়বে ১৩৫-১৪০ ডলার।
এর আগে কয়লা সংকটের কারণে রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির চলমান একটি ইউনিট (৬৬০ মেগাওয়াট) গত ২৩ এপ্রিল বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২৯ এপ্রিল উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের বৃহৎ কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ার ২৭৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার তৃতীয় ইউনিটটিও বন্ধ রয়েছে। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ থাকায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় ব্যাপক হারে বেড়েছে লোডশেডিং।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়