রোজার সময় যত ঘনিয়ে আসছে কিছু পণ্যের দর ততই তেতে উঠছে। কোনোটির দর এতই বেড়েছে যে, ক্রেতার চোখ কপালে ওঠার মতো। সবচেয়ে বড় লাফ দেখা গেছে মাংসের বাজারে। শবেবরাত ঘিরে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দিয়েছে পণ্যটির দরে। গত দুই দিনে কেজিতে ৮০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে গরুর মাংসের দাম।
হঠাৎ করে দামের এমন ঊর্ধ্বগতিতে ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। তাদের অভিযোগ, সারা বছর না কিনলেও শবেবরাতে অনেকেই মাংস কেনেন। আর বরাবরের মতোই এ সুযোগটি নিচ্ছে মুনাফালোভী ব্যবসায়ী চক্র। সরকার পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ আর প্রতিশ্রুতির কথা শোনালেও আসলে তা অসার প্রমাণিত হচ্ছে। এর প্রমাণ মাংসের বাজার।
ক্রেতাদের কোনো অভিযোগই আমলে নেওয়ার ধার ধারেন না ব্যবসায়ীরা। তাদের যুক্তি, খামারিরা কোরবানির জন্য আগাম গরু সংগ্রহ করছেন। তাতে গরুর চাহিদা বেড়েছে। সেজন্য ব্যাপারীরা গরুর দাম বাড়িয়েছেন। ফলে গত দুই সপ্তাহে মাঝারি আকারের প্রতিটি গরুর দর ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বেড়েছে। ৮০০ টাকার কমে বিক্রি করলে তাদের লোকসান গুনতে হবে। আর খামারিরা বলছেন, কৌশলে তাদের ওপর দোষ চাপিয়ে দাম বাড়ানোর পথে হাঁটছেন মাংস ব্যবসায়ীরা। বাজারে শৃঙ্খলা আনতে দর নির্ধারণে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
তবে সরকারের সংশ্লিষ্টরা জানান, রোজায় কম দামে মাংস বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাজারে এর প্রভাব পড়বে বলে দাবি তাদের।
প্রায় চার মাস আগে হঠাৎ করে ছন্দপতন ঘটে মাংসের বাজারে। কেজি নেমে আসে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়। তখন ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের নির্দেশে খামারি ও ব্যবসায়ীরা বৈঠক করে ডিসেম্বরের শুরুর দিকে প্রতি কেজি মাংসের দর ৬৫০ টাকা নির্ধারণ করেন। জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত বিক্রি হয় এ দরেই। তবে নির্বাচনের দুই দিন পরই কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে দর ওঠে ৭০০ টাকায়। এতদিন এ দর বা কিছুটা বেশিতে মাংস বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা। গত বৃহস্পতিবারেও রাজধানীর বেশির ভাগ বাজারে ৭০০ টাকা দরে গরুর মাংস কেনা গেছে। হঠাৎ করে গত শুক্রবার তেজকুনিপাড়া, মালিবাগ, মোহাম্মদপুর, মিরপুরসহ কয়েকটি বাজার ও মহল্লায় দেখা গেছে, বেশির ভাগ মাংস দোকান থেকে ৭০০ টাকা লেখা মূল্য তালিকা উধাও হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা কেজি বিক্রি করছেন ৭৫০ টাকা দরে। তবে গতকাল শনিবার এসব বাজারে কেজিতে আরও ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে কোথাও ৭৮০ আবার কোথাও ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
গতকাল মিরপুর শাহআলী বাজার থেকে ৭৮০ টাকা দরে মাংস কিনেছেন আব্দুল হালিম নামের এক বেসরকারি চাকরিজীবী। সমকালকে তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে ৬৫০ টাকা, দুই মাস না যেতেই কেজিতে দেড়শ টাকা বেড়ে গেলে। তখন ৬৫০ টাকায় বিক্রি করলে এখন কেন পারেন না ব্যবসায়ীরা। বাজারে নজরদারি নেই বলেই যে যার মতো দাম বাড়িয়ে ঠকাচ্ছেন মানুষকে।
২০১৮ সালেও সিটি করপোরেশন নির্ধারিত ৪২০ টাকা কেজি দরে মাংস বিক্রি হয়েছিল। সেই হিসাবে পাঁচ বছরের ব্যবধানে দর বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
হঠাৎ কেন দাম বেড়েছে– জানতে চাইলে শাহআলী বাজারের মোল্লা গোস্তের স্বত্বাধিকারী আলমগীর হোসেন সমকালকে বলেন, দুই সপ্তাহ আগে যে গরু কিনেছি ১ লাখে, একই ওজনের গরু কিনতে এখন লাগছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকার বেশি। দাম না বাড়িয়ে উপায় নাই।
সমিতির সিদ্ধান্তে দাম বাড়ানো হয়েছে কিনা– জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাট হাটের গতিতে চলে। গরুর দাম বাড়লে মাংসের দামও বাড়ে।
গত এক সপ্তাহে প্রতিটি গরুর দাম অন্তত ১৫ হাজার টাকা বেড়েছে বলে জানান বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মোর্তুজা মন্টু। তিনি বলেন, ‘গরুর দাম বাড়ার কারণে কেউ কেউ কেজি ৮০০ টাকায়ও বিক্রি করছে। তবে আমি গতকাল দুটি গরু জবাই করে কেজি ৭৫০ টাকায় বিক্রি করে ৭ হাজার টাকা লোকসান দিয়েছি।’
গোলাম মোর্তুজা বলেন, মাংস ব্যবসায়ী সমিতি কাউকে নির্ধারিত দরে বিক্রি করতে বাধ্য করতে পারে না। কারণ কেউ লোকসান দিয়ে বিক্রি করবে না। রোজায় মাংস ব্যবসায়ী সমিতি চেষ্টা করবে ৭৫০ টাকার মধ্যে দর রাখতে।
শবেবরাতকে ঘিরে দাম বাড়ানোর কৌশল হিসেবে মাংস ব্যবসায়ীরা এসব অভিযোগ তুলছেন বলে মনে করেন খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। সমকালকে তিনি বলেন, ‘চাল-আটা মজুত করা যায়। কিন্তু গরু মজুত করে রাখার মতো নয়। গরু কিনে খামারে রাখলে খাওয়া বাবদ অনেক খরচ আছে। তা ছাড়া খামারিরা গরুর বাছুর কেনে। জবাই করার মতো গরু কেনে না। মূলত উৎসবকে ঘিরে দাম বাড়ানোর কৌশল হিসেবে এসব অভিযোগ তুলছেন মাংস ব্যবসায়ীরা।’
ইমরান হোসেন বলেন, ‘মোহাম্মদপুর, মিরপুর, নিউমার্কেট, কারওয়ান বাজারসহ বেশ কয়েক জায়গা থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রির খবর পেয়েছি। মাংসের বাজারে বেশ কয়েক মাস ধরে বিশৃঙ্খলা রয়েছে। একটা যৌক্তিক দর নির্ধারণে সরকারের হস্তক্ষেপ খুব জরুরি। গরুর দাম বাড়লে তো প্রান্তিক খামারি বা কৃষকদের বেশি দাম পাওয়ার কথা। কিন্তু আদতে তারা তো বেশি দর পাচ্ছে না।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, চার-পাঁচ মাস আগে মাংসের দর নিয়ে বেশ আলোচনা হয়েছে। নানা জায়গায় ভোক্তা অধিদপ্তর অভিযান ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করা হয়। দাম সহনীয় রাখার যথেষ্ট উদ্যোগ নেওয়া হয়। অভিযানে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে সরকারের সংশ্লিষ্টদের।
তিনি বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তর তার নিজের অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। কিন্তু যৌক্তিক দর কত হওয়া উচিত, তা নির্ধারণের দায়িত্ব প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের। তারা দর নির্ধারণ করে দিলে বাজারে বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করবে ভোক্তা অধিদপ্তর।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়