গ্যাসের চাপ কমছে বিবিয়ানায় বিতরণ কোম্পানিকে প্রস্তুতি নিতে বলেছে পেট্রোবাংলা

উৎপাদন ও সরবরাহের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস ক্ষেত্র বিবিয়ানা। জাতীয় গ্রিডে মোট সরবরাহকৃত গ্যাসের ৪০ শতাংশের বেশি আসে মার্কিন কোম্পানি শেভরন পরিচালিত গ্যাস ক্ষেত্রটি থেকে। বিবিয়ানায় উত্তোলনযোগ্য মজুদের প্রায় ৯৮ শতাংশ এরই মধ্যে উত্তোলন করে ফেলা হয়েছে। এখান থেকে উত্তোলনকৃত গ্যাসের চাপও এখন কমে আসছে। বিষয়টি নিয়ে বিতরণ কোম্পানি জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমস লিমিটেডকে (জেজিটিডিসিএল) এরই মধ্যে একটি চিঠি পাঠিয়েছে পেট্রোবাংলা। চিঠিতে বিবিয়ানা থেকে গ্যাসের সরবরাহ ও চাপ কমে এলেও যাতে গ্রাহক ও সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে কাঙ্ক্ষিত চাপে গ্যাসের সরবরাহ বজায় রাখা যায়, সে বিষয়ে জেজিটিডিসিএলকে প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে বলে পেট্রোবাংলার অপারেশন্স বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

পেট্রোবাংলার চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে শেভরন পরিচালিত বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্রের উৎপাদন ও প্রেশার ক্রমবর্ধমানভাবে হ্রাস পাচ্ছে। ভবিষ্যতে বিবিয়ানা গ্যাস ক্ষেত্রের ওপর নির্ভরশীল গ্রাহক ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে কাঙ্ক্ষিত চাপে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। এতে বিদ্যুৎ উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটবে। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোয় কাঙ্ক্ষিত চাপে গ্যাস সরবরাহে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ আবশ্যক হয়ে পড়েছে।

চিঠিতে সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোয় গ্যাস সরবরাহের জন্য জেজিটিডিসিএলকে প্রয়োজনীয় কারিগরি পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। 

দেশে স্থানীয় পর্যায়ে উত্তোলিত গ্যাসের প্রায় ৬১ শতাংশ সরবরাহ করছে আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস উত্তোলনকারী কোম্পানি (আইওসি) শেভরন ও কেয়ার্ন এনার্জি। বাকি গ্যাস সরবরাহ করছে বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (২৮ শতাংশ), সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেডের (৪ শতাংশ) ও বাপেক্স (৭ শতাংশ)। আবার গ্রিডে আইওসিগুলোর দেয়া মোট গ্যাসের ৯৭ শতাংশই সরবরাহ করছে শেভরন।

জ্বালানি বিভাগের হাইড্রোকার্বন ইউনিটের গত জুলাই পর্যন্ত হালনাগাদকৃত তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডে উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুদ হিসাব করা হয়েছে ৫ হাজার ৭৫৫ বিলিয়ন ঘনফুট (বিসিএফ)। এর মধ্যে উত্তোলন করা হয়েছে ৫ হাজার ৬৩১ বিসিএফ। সে অনুযায়ী জুলাই শেষে বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডে সম্ভাব্য মজুদ ছিল ১২৪ বিসিএফ। এরই মধ্যে আরো চার মাস অতিবাহিত হয়েছে। ফলে গ্যাস ক্ষেত্রটিতে মজুদের পরিমাণ আরো কমে এসেছে।

দেশের জাতীয় গ্যাস গ্রিডে দৈনিক গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে ২৫৯ কোটি ঘনফুট (আমদানীকৃত এলএনজিসহ)। এর মধ্যে শেভরনের আওতাধীন গ্যাস ফিল্ডগুলোর মোট সরবরাহ দৈনিক ১২৪ কোটি ঘনফুটের মতো (২১ নভেম্বরের প্রতিবেদন অনুযায়ী)। শেভরনের গ্যাস ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে শুধু বিবিয়ানা থেকেই সরবরাহ হচ্ছে দৈনিক ১০৫ কোটি ঘনফুট, যা গ্রিডে মোট গ্যাস সরবরাহের প্রায় ৪০ দশমিক ৫৪ শতাংশ আর স্থানীয় গ্যাস ফিল্ডগুলোর সরবরাহের ৫৯ দশমিক ৭ শতাংশ।

দেশের জাতীয় গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ডের উৎপাদন ও চাপ কমে যাওয়ার বিষয়টি জ্বালানি খাতে সংকটময় ও অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্যমতে, বিবিয়ানার সরবরাহ সক্ষমতা কমে গেলে তা পূরণ করার মতো বিকল্প ব্যবস্থা এখন জ্বালানি বিভাগের হাতে নেই।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরূল ইমাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শেভরনের গ্যাস ফিল্ডগুলোর উৎপাদন আগামী তিন-চার বছরের মধ্যেই কমে যাবে। এটি যদি অভাবনীয় হারে কমে যায় বা অর্ধেকেও নেমে আসে, তাহলে যে সরবরাহ ঘাটতি তৈরি হবে তা সামাল দেয়ার মতো সক্ষমতা নেই দেশী কোম্পানিগুলোর।’

দেশে গ্যাস ফিল্ডগুলোর মধ্যে বিবিয়ানা, মৌলভীবাজার ও জালালাবাদ পরিচালনা করছে শেভরন। তিনটি গ্যাস ফিল্ডের আওতায় উত্তোলনযোগ্য গ্যাসের মজুদ ছিল ৭ হাজার ৬১২ বিসিএফ। এর মধ্যে চলতি বছরে জুলাই পর্যন্ত উত্তোলন করা হয়েছে ৭ হাজার ৫৮০ বিসিএফ। এ তিন গ্যাসক্ষেত্রে উত্তোলনযোগ্য মজুদ রয়েছে আর মাত্র ২০৩ বিসিএফ।

শেভরনের গ্যাস ক্ষেত্রগুলোর মজুদ কমে আসার পূর্বাভাস থাকলেও এ বিষয়ে আগে থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি অভিযোগ করে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বুয়েটের অধ্যাপক ম. তামিম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দেশে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় আইওসি হিসেবে শেভরন বড় ভূমিকা পালন করছে। গ্যাস উৎপাদন ও চাপ ঠিক রাখতে তাদের ফিল্ডগুলোয় তারা সেই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। কিন্তু আমাদের গ্যাস ফিল্ডগুলোর ক্ষেত্রে তা করা যায়নি। এমনকি পেট্রোবাংলা সেই উদ্যোগ কখনো নিয়েছিল কিনা, সেটা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মজুদ কমে যাবে, উৎপাদন কম হবে এটার প্রাক্কলন ছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কিছু নেয়া হয়নি।’

পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, গ্যাসের মজুদ বৃদ্ধির জন্য শেভরন নতুন বিবিয়ানা-২৭ নামে একটি কূপ খনন করছে। কূপ খননের মাধ্যমে গ্যাসের মজুদ বৃদ্ধি হলে তা দিয়ে বড়জোর আরো এক-দুই বছরের জোগান পাওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

শেভরন বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোম্পানিটির কমিউনিকেশনস ম্যানেজার শেখ জাহিদুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘বাংলাদেশের জ্বালানি লক্ষ্যমাত্রায় সহায়তার উদ্দেশ্যে শেভরন বাংলাদেশ এর বৈশ্বিক পর্যায়ে আহরিত মজুদ ব্যবস্থাপনার দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে বর্তমানের চাহিদা পূরণ, আরো উৎপাদনের সম্ভাবনা বৃদ্ধি এবং বিবিয়ানা, জালালাবাদ ও মৌলভীবাজার গ্যাস ক্ষেত্র থেকে উত্তোলন সর্বোচ্চ পর্যায়ে নেয়ার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের সঙ্গে উৎপাদন বণ্টন চুক্তির ভিত্তিতে শেভরন বাংলাদেশ তার গ্যাস ক্ষেত্রগুলো পরিচালনা করছে।’  
এই বিভাগের আরও খবর
রোজায় বাজার সহনশীল রাখার চেষ্টা করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

রোজায় বাজার সহনশীল রাখার চেষ্টা করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

যুগান্তর
এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

প্রথমআলো
ব্যাংকের ওপর আস্থা কমায় টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনছে মানুষ

ব্যাংকের ওপর আস্থা কমায় টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনছে মানুষ

কালের কণ্ঠ
বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সাথে হওয়া চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সাথে হওয়া চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

নয়া দিগন্ত
প্রাইম ব্যাংক ও সেবা ডট এক্সওয়াইজেডের মধ্যে চুক্তি সই

প্রাইম ব্যাংক ও সেবা ডট এক্সওয়াইজেডের মধ্যে চুক্তি সই

বাংলা ট্রিবিউন
ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু

ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু

বাংলা ট্রিবিউন
ট্রেন্ডিং
  • সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে 'বস্তায় বস্তায় ঘুষ' নেওয়ার অভিযোগ: দুদকের অনুসন্ধান শুরু

  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া