গ্যাস সংকটে ব্যাহত সিরামিক পণ্য উৎপাদন

কারখানাগুলোয় পর্যাপ্ত মাত্রায় গ্যাস সরবরাহ না থাকায় চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে সিরামিক তৈজসপত্র, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার শিল্পের উৎপাদন। গত এক মাসেরও বেশি সময় এ সমস্যায় ভুগছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করেও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় গ্যাস প্রাপ্তির তেমন আশ্বাস মিলছে না। তাই দ্রুত এ সমস্যার সমাধান চেয়ে গত ৩১ মার্চ তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমইএ)। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

অ্যাসোসিয়েশন বলছে, সম্ভাবনাময় রফতানি এবং আমদানি বিকল্প খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত দেশের সিরামিক তৈজসপত্র, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার কারখানাগুলোয় আবারো গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এতে চরমভাবে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরে গাজীপুরের ভবানীপুর ও ভাওয়াল মির্জাপুর এলাকায় অবস্থিত ৮ থেকে ১০টি সিরামিক কারখানায় তীব্র গ্যাস সংকট চলছে। সিরামিক কারখানার উৎপাদন ক্ষমতাভেদে ১৫ পিএসআই পর্যন্ত লোড অনুমোদন করা থাকলেও গ্যাসের প্রেসার কোনো কোনো কারখানায় কখনো কখনো ২-৩ পিএসআই থেকে শূন্য পর্যন্ত নেমে আসছে। অথচ কারখানা চালাতে ন্যূনতম ১০ পিএসআই গ্যাসের প্রেসার প্রয়োজন।

চাহিদামতো গ্যাসের প্রেসার না থাকায় কারখানাগুলোয় উৎপাদন বন্ধ রাখায় নির্ধারিত সময়ে পণ্য রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে করে ক্রয় আদেশ বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কম মাত্রায় গ্যাস সরবরাহের কারণে কারখানার চুল্লি বন্ধ থাকছে। এর ফলে এ অঞ্চলগুলোয় প্রতিদিন প্রায় ২-৩ কোটি টাকার সিরামিক পণ্যের উৎপাদন কম হচ্ছে। এছাড়া নিরবচ্ছিন্নভাবে গ্যাস সরবরাহ না হওয়ার কারণে পোড়ানোর অপেক্ষায় চুল্লিতে থাকা মালামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, কারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকলেও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ও ব্যাংকঋণের কিস্তি যথাসময়ে পরিশোধ করতে হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিগুলোর পক্ষে যা আগামীতে চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এ অবস্থায় গ্যাসনির্ভর সিরামিক শিল্প রক্ষায় গ্যাসের স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেয়ার জন্য তিতাসের এমডির কাছে আবেদন করেছে বিসিএমইএ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিএমইএর সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দীন বণিক বার্তাকে বলেন, গাজীপুর জেলার সিরামিক কারখানাগুলো এক মাসের বেশি সময় ধরে ঠিকমতো প্রেসারে গ্যাস পাচ্ছে না। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত গ্যাসের প্রেসার থাকে ১-২ পিএসআই। ওই অঞ্চলের সব কারখানা খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে একটি কারখানার উৎপাদন বন্ধই হয়ে গেছে।

তিনি আরো বলেন, তিতাসের স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়নি। তাই এ শিল্প রক্ষায় প্রয়োজনীয় মাত্রায় গ্যাস পেতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এমডির কাছে চিঠি লেখা হয়েছে। কারণ বর্তমানে গ্যাসের যে চাপ সেটা অব্যাহত থাকলে এ শিল্পের টিকে থাকাটা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। এ খাতকে টিকিয়ে রাখতে আমরা তিতাসের এমডির হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

বিসিএমইএ সূত্রে জানা গেছে, দেশের সিরামিক শিল্পে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা। এ খাত থেকে বার্ষিক প্রায় ৪০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। শিল্পে প্রত্যক্ষ শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৫৩ হাজার। পরোক্ষ চার লাখের বেশি। সিরামিক খাতটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত। দেশে টেবিলওয়্যার, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যারে ৭০টি কারখানা রয়েছে। এর উৎপাদন গ্যাসচালিত হওয়ায় অন্য জ্বালানি ব্যবহারের সুযোগ নেই। তাছাড়া সরবরাহকৃত গ্যাসের চাপ কম হলে এসব কারখানা চালু রাখাও সম্ভব নয়। এতে দেশীয় এ শিল্প বিদেশী পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে। ফলে আমদানিনির্ভর হয়ে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দেবে। এ খাতের ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ জড়িত সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

সূত্র জানায়, দেশে আধুনিক সিরামিক শিল্প যাত্রা করে পঞ্চাশের দশকের শেষে। ষাটের দশকের মাঝামাঝি স্থানীয় বাজারে পণ্য সরবরাহের জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয় পাকিস্তান সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। স্বাধীনতার পরপর প্রতিষ্ঠানটির নাম পাল্টে রাখা হয় পিপলস সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। কারখানাটি ১৯৬৬ সালে উৎপাদন শুরু করেছিল। বর্তমানে বাংলাদেশে সিরামিক পণ্য উৎপাদনকারী শিল্প-কারখানা আছে ৭০টি।

বিসিএমইএর তথ্য অনুযায়ী, দেশের অনেক বড় কোম্পানি এ মুহূর্তে সিরামিক টাইলস পণ্য উৎপাদনে নিয়োজিত রয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরেও পণ্যটির বাজার ব্যাপ্তি ছিল ৪ হাজার ৬০১ কোটি ৪৬ লাখ টাকার। ওই সময়ের পর থেকে এ পর্যন্ত শিল্পটির আকার আরো বেড়েছে। চলমান কভিড মহামারীর প্রাদুর্ভাবের পর সাময়িক স্থবিরতা থাকলেও তা এ বাজার সম্প্রসারণকে থামাতে পারেনি।

এদিকে আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে সিরামিক শিল্পের মূল পণ্য ছিল টেবিলওয়্যারই (বাসন-কোসন)। যদিও দেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে টেবিলওয়্যারের বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ ছিল কম। এখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেশের বাজারে ব্যবহার বাড়ছে টেবিলওয়্যারের। সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছর পর্যন্ত চার বছরে দেশে এ-জাতীয় পণ্যের বাজার সম্প্রসারিত হয়েছে ৬৭ শতাংশ।
এই বিভাগের আরও খবর
রোজায় বাজার সহনশীল রাখার চেষ্টা করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

রোজায় বাজার সহনশীল রাখার চেষ্টা করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

যুগান্তর
এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

প্রথমআলো
ব্যাংকের ওপর আস্থা কমায় টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনছে মানুষ

ব্যাংকের ওপর আস্থা কমায় টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনছে মানুষ

কালের কণ্ঠ
বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সাথে হওয়া চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সাথে হওয়া চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

নয়া দিগন্ত
প্রাইম ব্যাংক ও সেবা ডট এক্সওয়াইজেডের মধ্যে চুক্তি সই

প্রাইম ব্যাংক ও সেবা ডট এক্সওয়াইজেডের মধ্যে চুক্তি সই

বাংলা ট্রিবিউন
ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু

ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু

বাংলা ট্রিবিউন
ট্রেন্ডিং
  • সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে 'বস্তায় বস্তায় ঘুষ' নেওয়ার অভিযোগ: দুদকের অনুসন্ধান শুরু

  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া