দেশে গত ফেব্রুয়ারিতে চিনি আমদানি বেড়েছে আগের মাসের তুলনায় প্রায় ২৭ শতাংশ। জানুয়ারিতে সমুদ্র ও স্থলবন্দরগুলো মিলিয়ে দেশে আমদানীকৃত চিনি খালাস হয়েছিল ৯৩ হাজার টন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে দেশে অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছে ১ লাখ ২৭ হাজার টন, যার মূল্য ৮৪৫ কোটি টাকা।
এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে এখন দুটি জাহাজ থেকে আরো ১ লাখ ১২ হাজার টন চিনির খালাস কার্যক্রম চলছে। বেলটাইড নামে একটি জাহাজ চিনি নিয়ে এসেছে ৫৩ হাজার টন। এর মধ্যে ৪৫ হাজার ১৯০ টন খালাস হয়েছে। বাকি ৮ হাজার টন খালাস প্রক্রিয়া চলছে। আরেকটি জাহাজে চিনি এসেছে প্রায় ৫৯ হাজার টন। এর ১৫ হাজার ৮৩৩ টন খালাস হয়েছে। বাকি ৪৩ হাজার টন খালাসের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বিদ্যমান মজুদ ও আমদানিকে বিবেচনায় নিলে দেশের বাজারে এখন চিনির সংকট দেখা দেয়ার কোনো কারণ নেই বলে জানিয়েছেন আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাষ্যমতে, স্বাভাবিক অবস্থায় দেশে প্রতি মাসে চিনির সরবরাহ থাকে দেড় লাখ টনের কাছাকাছি। এবারের রমজানে তা আড়াই লাখ টনের মতো হতে পারে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। যদিও চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তনের কারণে তা কিছুটা কমও হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। সব মিলিয়ে বাজারে বিদ্যমান সরবরাহ ও মজুদ এবং পাইপলাইনে খালাসের অপেক্ষায় থাকা চিনি দিয়ে আসন্ন রমজানের চাহিদা বেশ ভালোভাবেই পূরণ করা যাবে।
এ বিষয়ে মেঘনা গ্রুপের (এমজিআই) চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘দেশে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন এখন নেই বললেই চলে। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও আমরা অপরিশোধিত চিনি আমদানি ও মিলে পরিশোধনের মাধ্যমে স্থানীয় বাজারে চাহিদামাফিক সরবরাহ ঠিক রাখতে চেষ্টা করেছি সবসময়। রমজানে খাদ্যপণ্যটির চাহিদা বাড়লেও আমদানি ও সরবরাহ ধরে রাখায় সংকট হবে না।’
ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে দেশের সমুদ্র ও স্থলবন্দরগুলো দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে আমদানীকৃত চিনি খালাস হয়েছে ৯ লাখ ৮২ হাজার টন। এসব চিনির কাস্টমস শুল্কায়িত মূল্য ৬ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, আমদানীকৃত এ চিনির ৮১ শতাংশই এনেছে বড় তিন শিল্পগোষ্ঠী—মেঘনা, সিটি ও এস আলম গ্রুপ। এছাড়া দেশবন্ধু সুগার মিলস লিমিটেড ও আবদুল মোনেম সুগার রিফাইনারি ছোট পরিসরে চিনি আমদানি করছে। মূলত ব্রাজিল ও প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে অপরিশোধিত চিনি দেশে এনে নিজস্ব কারখানায় পরিশোধনের পর বাজারজাত করছে তারা।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে প্রতি মাসে চিনির চাহিদা প্রায় দেড় লাখ টন। তবে রোজা কিংবা গ্রীষ্মকালে চিনির চাহিদা অন্তত ৫০ শতাংশ বাড়ে। এ বছর রোজা ও গ্রীষ্মকালীন মৌসুম একই সঙ্গে হওয়ায় চিনির চাহিদা অন্যান্য মাসের তুলনায় বেড়ে দাঁড়াতে পারে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টনে। বিদ্যমান মজুদ ও আমদানি দিয়েই এ বাড়তি চাহিদা পূরণ করা যাবে।
আমদানিকারকরা সরবরাহ স্বাভাবিক বললেও বাজারের চিত্র উল্টো। সংকটের গুজবে গতকাল চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন স্থানের খুচরা ও পাইকারি বাজারে চিনির দাম বাড়তে দেখা গেছে। চট্টগ্রামে এক সপ্তাহ আগেও খুচরা পর্যায়ে চিনির কেজিপ্রতি দাম ছিল ১৪০ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ টাকা বেড়ে এখন তা ১৪৫ টাকায় বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা। বাজারের বর্তমান ঊর্ধ্বমুখিতার জন্য খুচরা ব্যবসায়ীরা দায়ী করছেন পাইকার ও ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
চট্টগ্রামের কমার্স কলেজ রোডের মেসার্স নিউ খাজা গরিবেনেওয়াজ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের স্বত্বাধিকারী আবদুল রহিম জানান, মূলত পাইকারি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো চিনি বিক্রি কমিয়ে দেয়ায় খুচরা বাজারেও এর উত্তাপ ছড়াচ্ছে।
দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে সরজমিনে দেখা গেছে, গত সোমবার মণপ্রতি (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চিনি লেনদেন হয়েছিল (মিল থেকে সরাসরি উত্তোলনযোগ্য) ৪ হাজার ৯৩০ টাকা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই পাইকারি পর্যায়ে এর দাম বাড়তে দেখা যায়। দিনশেষে ৯০ টাকা বেড়ে চিনির মণপ্রতি দাম গিয়ে ঠেকে ৫ হাজার ২০ টাকায়। এরপর গতকাল সন্ধ্যায় তা আরো বেড়ে প্রতি মণ ৫ হাজার ৫০ থেকে ৫ হাজার ৬০ টাকায় উঠে যায়। অর্থাৎ দুই দিনে চিনির দাম বেড়েছে অন্তত প্রতি মণে ১৩০ টাকা।
এর কারণ সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃহৎ চিনি আমদানিকারক ও পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান এস আলম সুগার মিলের গুদামে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর মঙ্গলবার থেকেই ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে চিনি বিক্রিতে অনীহা দেখা যাচ্ছে। চিনির মজুদ পর্যাপ্ত হলেও এ ঘটনা এবং আসন্ন রমজান ও গ্রীষ্মকালকে সামনে রেখে বৃহৎ পাইকারি ব্যবসায়ী ও ট্রেডিং প্রতিষ্ঠানগুলো বাড়তি দাম হাঁকিয়ে বাজারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, চট্টগ্রামে চিনির গুদামে অগ্নিকাণ্ডে এক লাখ টন চিনি পুড়ে গেছে বলে বাজারে গুজব ছড়িয়েছে। যদিও পুড়ে যাওয়া গুদামের সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতাই ৬০ হাজার টন। ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতা এ আগুন আশপাশের কোনো গুদামেও ছড়ানোর সুযোগ পায়নি। যে চিনি পুড়েছে, তা দেশের বাজারে প্রভাব ফেলতে যথেষ্ট নয়। যদিও পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী বাজারকে সাময়িকভাবে অস্থিতিশীল করে তুলছে। সেক্ষেত্রে দেশের অন্যান্য মিল থেকে চট্টগ্রামে চিনির সরবরাহ শুরু হলে বাজার স্থিতিশীল হয়ে যাবে বলে মনে করছেন তারা।
বাংলাদেশ চিনি ডিলার ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের সংকটে বৃহৎ ভোক্তা বাজারে সংকট হওয়ার কথা নয়। দেশে যে পরিমাণ চিনি আমদানি হয়েছে, তাতে রোজা বা গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে। তাছাড়া এ বছর সরকারি মিলগুলোয় ১০ হাজার টনের বেশি বাড়তি চিনি উৎপাদন হয়েছে। রোজার সপ্তাহ খানেক আগে চট্টগ্রামের একটি মিলের দুর্ঘটনার কারণে সাময়িক অস্থিরতা রয়েছে। দেশের অন্যান্য মিল থেকে চট্টগ্রামে সরবরাহ বৃদ্ধি এবং সরকারি মিলগুলোয় চিনির উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়া হলে বাজার অবশ্যই স্থিতিশীলতায় ফিরবে।’
তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতেও দেশে আমদানীকৃত চিনির পুরোটাই এনেছে মেঘনা, সিটি, এস আলম, আবদুল মোনেম ও দেশবন্ধু গ্রুপ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে সরকারি মিলগুলোয় চিনির উৎপাদন কমেছে ব্যাপক মাত্রায়। এর ধারাবাহিকতায় স্থানীয় উৎপাদন কমে আসায় বাজারের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে বৃহদায়তনে আমদানিকারী বেসরকারি শিল্পগোষ্ঠীগুলোর হাতে। বর্তমানে এ পাঁচ প্রতিষ্ঠানই দেশে চিনির চাহিদা পূরণ করছে।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়