চীনের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানোর সুপারিশ সংসদীয় কমিটির

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে নিজেদের খরচে মেট্রোরেল নির্মাণ করে দেয়ার প্রস্তাব করেছে চীনের চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানি। বিনিময়ে সাগর উপকূলে ৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় চীন-বাংলাদেশের অংশীদারিত্বে স্মার্ট সিটি গড়ে তুলতে চায় এসব প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (সিডিএ) দেয়া এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়েছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে। গতকাল অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির সভা থেকে চীনের এ প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

এরই মধ্যে চীনের এ প্রস্তাব নিয়ে প্রকল্পের একটি রূপরেখা তৈরি করেছে সিডিএ। প্রস্তাবিত প্রকল্পের শিরোনাম দেয়া হয়েছে, সি-সাইড বে ভিউ স্মার্ট সিটি (পতেঙ্গা থেকে মিরসরাই) এবং চট্টগ্রাম সিটিতে ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি)।

প্রস্তাবে চট্টগ্রামে মেট্রোরেলের ছয়টি মেট্রো লাইনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রধান প্রকল্প হবে লাইন-১। ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ লাইনটি হবে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত। একইভাবে লাইন-২ জানালি হাট থেকে রেলওয়ে স্টেশনের মধ্যে নির্মাণ করা হবে। এর দৈর্ঘ্য হবে আট কিলোমিটার। তৃতীয় লাইনটি হবে চট্টগ্রাম ডিওএইচএস থেকে ফিরিঙ্গীবাজারের মধ্যে। ৯ দশমিক ৪ কিলোমিটারের লাইন-৪ হবে বহদ্দারহাট থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৪ কিলোমিটারের আরেকটি লাইন-৫ হবে। এর বাইরে সাঙ্গু রোড থেকে আগ্রাবাদ পর্যন্ত হবে ষষ্ঠ লাইন, যার দৈর্ঘ্য প্রস্তাব করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৫ কিলোমিটার।

মেট্রো লাইনগুলোর সম্মিলিত দৈর্ঘ্য হবে ১২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার। কোথাও উড়ালপথে হবে, কোথাও হবে পাতালপথে। তিন ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে এসব প্রকল্প। প্রথম ধাপ বাস্তবায়নেই খরচ হবে ২২০ কোটি ডলার। চট্টগ্রামের মেট্রো নেটওয়ার্কে প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ২৫ হাজার যাত্রী পরিবহন করা হবে। ব্যস্ত সময়ে সর্বোচ্চ প্রতি ঘণ্টায় ২৮ হাজার ৬০০ যাত্রী পরিবহন করা যাবে।

চীনের চার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাব অনুযায়ী, মেট্রোরেল তৈরি ও পরিচালনায় যে অর্থ খরচ হবে, তা তোলা হবে স্মার্ট সিটির স্থাপনা ও বিভিন্ন সুবিধা বিক্রির মাধ্যমে। এজন্য সাগর উপকূলে গড়ে তোলা হবে ৬০ বর্গকিলোমিটারের স্মার্ট সিটি।

স্মার্ট সিটির জন্য চারটি প্লট প্রস্তাব করা হয়েছে প্রকল্পের রূপরেখায়। প্লট ‘এ’র আয়তন ৩ দশমিক ১২ বর্গকিলোমিটার। এ প্লটটি হবে অত্যাধুনিক ব্যবসা অঞ্চল। ৬ দশমিক ৯২ বর্গকিলোমিটারের প্লট ‘বি’ হবে বুদ্ধিদীপ্ত উদ্ভাবন অঞ্চল। প্লট ‘সি’র আয়তন ২ দশমিক ৯৮ বর্গকিলোমিটার। এটি হবে সম্মেলন ও প্রদর্শনী অঞ্চল। আর ৩৮ দশমিক ৫৫ বর্গকিলোমিটারের প্লট ‘ডি’ হবে অত্যাধুনিক আবাসিক অঞ্চল।

রূপরেখায় আরো বলা হয়েছে, এমআরটি নির্মাণ ও পরিচালনা বেশ ব্যয়বহুল। ব্যক্তিগত অংশীদারের বিনিয়োগ মেট্রোর টিকিট বিক্রির আয় দিয়ে নির্বাহ করা সম্ভব নয়। আধুনিক শহরের ভূমি ও স্থাপনা উন্নয়ন থেকে প্রাপ্ত অর্থ আয়ের মাধ্যমে বিনিয়োগ পুনরুদ্ধার করতে সিডিএ বেসরকারি অংশীদারকে জমি প্রদান করবে। আর এসব কাজের জন্য সরকারের কোনো ঋণ দায়বদ্ধতাও থাকবে না বলে উল্লেখ করেছে সিডিএ।

সিডিএকে চীনের প্রতিষ্ঠানগুলো মেট্রোরেলের বিনিময়ে স্মার্টসিটি গড়ে তোলার প্রস্তাবটি দেয় ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে। পরের বছরের ডিসেম্বরে আবার একই প্রস্তাব দেয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি চীন এবং বাংলাদেশী কোম্পানির যৌথ উদ্যোগের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে সিডিএ। আগামী এপ্রিলের মধ্যেই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা এবং প্রকল্প প্রস্তাব তৈরির জন্য পরামর্শক নিয়োগ সম্পন্ন করার লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন সিডিএর কর্মকর্তারা।

চীনের এ প্রস্তাবের বিষয়টি গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আলোচনা হয়। আলোচনার পর প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর সুপারিশ করে সংসদীয় কমিটি। কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, বজলুল হক হারুন, মনোয়ার হোসেন চৌধুরী, আনোয়ারুল আশরাফ খান ও ফরিদা খানম অংশ নেন। এ সময় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন সংস্থার প্রধানসহ জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

চীন ছাড়াও চট্টগ্রামে মেট্রোরেল নির্মাণের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্য এগিয়ে এসেছে দক্ষিণ কোরিয়াও। সম্প্রতি গণমাধ্যমে চট্টগ্রামে পরিকল্পিত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনা এবং মেট্রোরেল চালুর লক্ষ্যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করতে একটি প্রকল্প গ্রহণের উদ্যোগের কথা জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। চট্টগ্রামে পরিবহন পরিকল্পনা ও মেট্রো নির্মাণের সমীক্ষা প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ হবে প্রায় ৭৭ কোটি টাকা। কোরিয়া সরকারের অনুদানে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। বিষয়গুলো চূড়ান্ত করতে এরই মধ্যে কোরিয়া থেকে একটি বিশেষজ্ঞ সার্ভে টিম বাংলাদেশ সফরে এসেছে। দলটি চট্টগ্রামের উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় এবং তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে।
এই বিভাগের আরও খবর
কাতারের আমিরের নামে ঢাকায় পার্ক ও সড়কের নামকরণ

কাতারের আমিরের নামে ঢাকায় পার্ক ও সড়কের নামকরণ

দৈনিক ইত্তেফাক
ফরিদপুরে মন্দিরে আগুন : দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিএনপির তদন্ত কমিটি

ফরিদপুরে মন্দিরে আগুন : দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিএনপির তদন্ত কমিটি

নয়া দিগন্ত
১৯৬০ সালের সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহে কেমন ছিল ঢাকার জীবনযাত্রা

১৯৬০ সালের সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহে কেমন ছিল ঢাকার জীবনযাত্রা

প্রথমআলো
থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, স্বাক্ষরিত হবে যেসব চুক্তি

থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, স্বাক্ষরিত হবে যেসব চুক্তি

কালের কণ্ঠ
তীব্র গরমে ১০-১২ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে অতিষ্ট গ্রামাঞ্চলের মানুষ

তীব্র গরমে ১০-১২ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে অতিষ্ট গ্রামাঞ্চলের মানুষ

জনকণ্ঠ
আরো ৭২ ঘণ্টার তাপদাহের সতর্কতা জারি

আরো ৭২ ঘণ্টার তাপদাহের সতর্কতা জারি

নয়া দিগন্ত
ট্রেন্ডিং
  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া

  • অবিশ্বাস্য কীর্তিতে হাজার রানের ক্লাবে এনামুল বিজয়