চীনে কাজের পর অফিস পার্টির প্রচলন বহুদিনের। এসব পাটিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মদ্যপানের একরকম অলিখিত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু কাজের জায়গায় বহুদিন ধরে চলা এই সংস্কৃতি এখন দেশটির জনগণের কাঠগড়ায়।
চীনের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তি কোম্পানি আলিবাবার এক অফিস পার্টিতে এক নারী কর্মচারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর থেকে কর্পোরেট জগতে ক্ষমতাধরদের আচরণ নিয়ে বিস্তর কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় লাখ লাখ চীনা নাগরিক মদ্যপানের জন্য অফিস কর্মীদের ওপর জবরদস্তি করার এই 'বিষাক্ত সংস্কৃতির' অবসান দাবি করছেন।
চীনে কাজের পর ঘন ঘন অফিস পার্টির সংস্কৃতি বহুদিনের। কর্মীরা একজোট হয়ে মদ্যপান, হই-হুল্লাহ করেন। এসব পার্টিতে অংশ নেয়ার অলিখিত বাধ্যবাধকতাও রয়েছে।
যেমন, মিং শিকে প্রতি দু-সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন কাজের পর সহকর্মীদের সাথে মদ্যপান করতে যেতে হয়।
মিং শি এই নারীর ছদ্ম নাম। কারণ তিনি তার পরিচয় গোপন রাখতে চান।
এসব অফিস পার্টি তার একবারেই পছন্দ নয়। কারণ এ পার্টিগুলো এমন নয় যে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তার ধারে কোনো পানশালায় সহকর্মীদের সাথে বসে দু-এক গ্লাস বিয়ার পান করে বাসায় ফেরা যায়।
বরং দেখা যায়, এসব পার্টিতে অনেক সময়ই কোম্পানির ক্লায়েন্টরা আসে এবং তাদের সাথে হেসে কথা বলতে হয়, তাদের সাথে মদের গ্লাসে ঠোকাঠুকি করতে হয়।
এগুলো নিয়ে কখনই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেননি গুয়াংজুভিত্তিক এই জনসংযোগ পরামর্শক।
‘যদিও আমি নিজে পানের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি, কিন্তু তারপরও কখন পরিস্থিতি বেসামাল হয়ে পড়ে - তা নিয়ে সবসময় আমার মধ্যে ভয় কাজ করে,’ বিবিসিকে বলছিলেন ২৬ বছরের মিজ মিং ।
‘হঠাৎ হঠাৎ কেউ কেউ যৌন বিষয়ক নানা রসিকতা করে। অস্বস্তি হলেও তখন মজা পাওয়ার ভান করতে হয়।’
মিং শি-র মত বহু তরুণী অফিস কর্মচারী একই ধরণের অভিজ্ঞতার কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছেন। তারা বলছেন, ইচ্ছা না থাকলেও এসব অফিস পার্টিতে তাদের যেতে হয়। কারণ, চীনে ব্যবসা পেতে এবং উচ্চপদস্থদের সুনজরে থাকার জন্য 'গুয়াংশি' অর্থাৎ ব্যক্তিগত সম্পর্কের রাখার গুরুত্ব অনেক।
ধর্ষণ কেলেঙ্কারিতে আলিবাবা
প্রযুক্তি জায়ান্ট আলিবাবার একজন সিনিয়র ম্যানেজারের বিরুদ্ধে মদ্যপানে অচেতন এক অধস্তন কর্মচারীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠার পর চীনের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর পার্টিতে বেসামাল মদ্যপানের যে সংস্কৃতি - তা তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে।
ওই কোম্পানির একজন নারী কর্মচারী তার ১১-পাতা জোড়া অভিযোগপত্রে বলেছেন, কোম্পানির এক বিজনেস ট্রিপে গিয়ে রাতভর এক মদের পার্টিতে অচেতন হয়ে পড়লে তিনি ধর্ষণের শিকার হন। তার এই দীর্ঘ অভিযোগপত্রটি চীনা সোশ্যাল মিডিয়া উইবোতে ভাইরাল হয়ে যায়।
আলিবাবার ওই নারী কর্মচারী অভিযোগ করেন, ব্যবসা সম্পর্কিত এক ডিনার পার্টিতে তার ঊর্ধ্বতনরা তাকে জোর করে প্রচুর মদ পান করান। পরে সকালে তার হোটেল রুমে ঘুম থেকে উঠে দেখেন তিনি নগ্ন। আগের রাতের ঘটনা তিনি মনে করতে পারেননি।
পরে হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ ঘেঁটে ওই নারী দেখেন, তার ম্যানেজার ওই রাতে চারবার তার হোটেল কক্ষে গেছেন।
আলিবাবা তাদের অভিযুক্ত ওই ম্যানেজারকে বরখাস্ত করেছে।
কিন্তু চীনা সরকারি কৌঁসুলিরা ওই ম্যানেজারের বিরুদ্ধে মামলা খারিজ করে দিয়েছেন। তাদের কথা, মদ পানে জবরদস্তি করা বড় কোনো অপরাধ নয়। চীনা পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি তার শাস্তি হিসাবে ১৫ দিন আটক থাকবেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে নতুন করে আর কোনো তদন্ত হবে না।
তবে চীনা সোশ্যাল মিডিয়ায় এ নিয়ে ঝড় শুরু হয়েছে। শুধু যে কাজের জায়গায় যৌন হয়রানির সমালোচনা হচ্ছে তাই নয়, কাজের সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মদ্যপানের জন্য কর্মচারীদের জবরদস্তি করার যে 'বিষাক্ত সংস্কৃতি' - তার বিরুদ্ধে জোর প্রতিবাদ শুরু হয়েছে।
'কাজের জায়গায় মদপানের সংস্কৃতি নিয়ে আপনাদের মত কী' এই হ্যাশট্যাগে উইবোতে এক পোস্টে ১১ কোটি হিট হয়েছে। সেখানে মানুষজন কাজের জায়গায় ব্যবসা-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পার্টিতে তাদের ব্যক্তিগত তিক্ত অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়