পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশ চীন-ভারতের দ্বন্দ্ব বিগত কয়েক বছর ধরেই বেশ প্রকট। ভারতের লাদাখ সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর থেকে চলমান উত্তেজনার কারণে অচলাবস্থা রয়েছে ভারত-চীন সেনাবাহিনীর মধ্যে। সামরিক অচলাবস্থার এ সময়ে ২০২১ এমন একটি বছর ছিল যে সময়ে ও চীন-ভারতের সম্পর্ক নতুন করে নিম্নগামী হয়েছে। সীমান্ত সংকটের পাশাপাশি নিষেধাজ্ঞা ও বয়কটের মতো পরিস্থিতিতেও পড়তে হয়েছে দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ককে।
কিন্তু সেসব পেরিয়ে ২০২১ সাল ছিল দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধির বছর। দৃশ্যমান এসব বিবাদ এবং সেনাবাহিনীর অচলাবস্থা সত্ত্বেও গত বছরে চীন-ভারতের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বেড়েছে প্রবল। এর আগে যেখানে এক বছরে সর্বোচ্চ বাণিজ্যের লক্ষ্য ছিল ১০ হাজার কোটি ডলারের। সেই সীমা পেরিয়ে দুই দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে ১২ হাজার ৫০০ কোটির ডলারেরও বেশি। যদিও এ বছরেই ভারতের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ৬ হাজার ৯০০ কোটি ডলারের বেশি। খবর উইওন নিউজ।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য বলছে, ২০২১ সালে চীন ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হয়েছে ১২ হাজার ৫৬৬ কোটি ডলারের। আগের বছর ২০২০ সালের তুলনায় তা বেড়েছে ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ওই বছরে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য দাঁড়িয়েছিল ৮ হাজার ৭৬০ কোটি ডলারে।
চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমসের দেয়া তথ্য এবং ট্যাবলয়েড গ্লোবাল টাইমসের খবর বলছে, ২০২১ সালে ভারতে ৯ হাজার ৭৫২ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে চীন। রফতানি বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ৪৬ দশমিক ২ শতাংশ। এই সময়ে চীন ভারত থেকে গ্রহণ করে ২ হাজার ৮১৪ কোটি ডলারের পণ্য। আমদানি বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল ৩৪ দশমিক ২ শতাংশ।
ওই বছরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৈষম্য ছিল ৬ হাজার ৯০০ কোটি ডলার আর সেটা ছিল চীনের দিক থেকেই। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এ ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে ভারত। তারা বারবার ভারতীয় আইটি ও ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাজার খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছে বেইজিংয়ের কাছে।
তবে নভেল করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভয়াবহ আঘাত এবং নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ভারতের লড়াই করার মতো পরিস্থিতিতে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বছরজুড়ে ভারতে চীনের এমন রফতানি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে মূলত ভারতের বিকাশমান ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের জন্য চিকিৎসা সরঞ্জাম ও কাঁচামাল আমদানিই প্রধান কারণ।
যদিও পূর্ব লাদাখে দীর্ঘস্থায়ী সেনাবাহিনীর অচলাবস্থার কারণে চীন-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ঐতিহাসিক সেই ১০ হাজার কোটি ডলারের মাইলফলক অতিক্রমের তথ্যটা তেমনভাবে নজরেই পড়েনি অনেকের।
পানগং লেক এলাকায় সহিংস সংঘর্ষের পর ২০২০ সালের ৫ মে প্রথম ভারত ও চীন সেনাবাহিনীর মধ্যে সীমান্তে অচলাবস্থা তৈরি হয়। এরপরে দুই দেশই ওই সীমান্তে সেনা মোতায়েন বাড়ায়। দুই দিকেই ১০ হাজার করে বাড়তি সেনা মোতায়েন করা হয় ও ভারী ভারী অস্ত্র সরবরাহও করা হয়। পরে কয়েক দফা সেনা ও কূটনীতিক পর্যায়ে আলোচনা শেষে দুই পক্ষই ২০২১ সালের আগস্টে গোগ্রা এলাকা থেকে এবং তার আগে ফেব্রুয়ারিতে পানগঙের উত্তর ও দক্ষিণ তীর থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্নকরণ প্রক্রিয়া সমাপ্ত করে।
চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি দুই পক্ষই ১৪তম দফায় আলোচনায় বসে। শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা এ দফায়ও ব্যর্থ হয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, লাদাখে অনুষ্ঠিত চীন-ভারত ১৪তম সামরিক সংলাপ ইতিবাচক ফল দিতে ব্যর্থ হলেও দুদেশই লাদাখ সীমান্ত বিরোধ বিষয়ে গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজতে একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। আশা করা হচ্ছে, সংলাপ অব্যাহত রাখতে শিগগিরই পরবর্তী রাউন্ড আলোচনা হবে। ভারতীয় পক্ষ স্পষ্টতই কংকা লার পাশে গোগরায় টহল থেকে পিপলস লিবারেশন আর্মিকে (পিএলএ) সরানোর ব্যাপারে রাজি করাতে ব্যর্থ হয়েছে। এছাড়া দৌলত বেগ পুরনো সেক্টরের ডেপসাং বুলজে এবং ডেমচক সেক্টরের চার্ডিং নুল্লাহ জংশনে টহলবিষয়ক সমস্যাগুলো সমাধানে রাজি করাতে পারেনি।
শি জিনপিংয়ের সিদ্ধান্তে কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশনের এককভাবে সীমান্ত পরিবর্তনবিষয়ক নির্দেশনার পর থেকে দেশ দুটির সীমান্তে এ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ২০২০ সালের মে মাসে লাদাখ নিয়ন্ত্রণরেখা বিষয়ে ১৯৫৯ কার্টোগ্রাফিক্যাল লাইন কার্যকর করার অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে চীন। তার পর থেকে দুপক্ষই মিসাইল, রকেট, আর্টিলারি এবং ট্যাংক রেজিমেন্টসহ পুরো তিন ডিভিশন সেনা মোতায়েন করে। এছাড়া বিমানবাহিনীকে স্ট্যান্ডবাই ফোর্স হিসেবে তৈরি রাখা হয়। ২০২০ সালের মে মাসে প্যাংগং হ্রদ, গ্যালওয়ান, গোগরা হট স্পিং এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় প্রধান পর্যায়ে সম্পাদিত ১৯৯৩ ও ১৯৯৬ সালের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ভঙ্গ করে চীন।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়