জমে উঠেছে কেনাবেচা, নতুন চাপে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা

২৭ বছর ধরে গুলিস্তানের ফুটপাতে জুতার ব্যবসা করেন আব্দুল কাদের। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগে যেখানে তিনি দিনে ২০-২৫ হাজার টাকা বেচাকেনা করতেন সেখানে লকডাউনের পর তার বিক্রি হয় ১০-১২ হাজার টাকার মতো। করোনার কারণে মানুষের হাতে টাকা নেই। লকডাউনে অনেকে ধার করে চলেছেন। ফলে দোকানপাট খুলে দেওয়ার শুরুতে বেচাকেনা কম হলেও গত কয়েকদিনে তা বেশ বেড়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আরও বাড়বে বলে জানান কাদের।

কোভিড-১৯-এর কারণে লকডাউনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। লকডাউনে ব্যবসা বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন তারা। অনেকে কারও কাছে হাত পাততে পারেননি চক্ষুলজ্জার ভয়ে। কেউ পাড়ি দিয়েছেন গ্রামে, আবার কেউ ধার-দেনা করে কোনোভাবে সংসার চালিয়েছেন। কারও বাসা ভাড়া, দোকান ভাড়া, সন্তানের স্কুলের বেতন আটকে গেছে মহামারিতে। এতে অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা।

আগস্টের ১২ তারিখ লকডাউন তুলে দেয় সরকার। এতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব ধরনের দোকানপাট খুলে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ফলে দীর্ঘ বিরতির পর ফুটপাতে আবারও দোকান খোলার সুযোগ পান গুলিস্তানের ফুটপাত, বঙ্গবন্ধু স্কয়ার পাতাল সড়ক মার্কেট, গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সসহ আশপাশের দোকানিরা। শুরুতে ক্রেতা কম আসলেও ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ক্রেতার সংখ্যা। করোনার আগে গুলিস্তানজুড়ে এসব দোকানে প্রতিদিন যেখানে প্রায় কোটি টাকার কেনাবেচা হতো, লকডাউনের পর সেই বেচাবিক্রি এখনও আগের অবস্থায় ফেরেনি।

ফুটপাত, পাতাল সড়ক মার্কেটসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ছোট বাচ্চা ও কিশোরী থেকে শুরু করে যুবক, নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ সব ক্রেতাই এসেছে তাদের পছন্দের ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্য। ঢাকার ব্যস্ততম গুলিস্তানের ফুটপাত নিম্নআয়ের মানুষের কেনাকাটার মূল জায়গা। তাই যার যা প্রয়োজন তা কিনতে ব্যস্ত সব বয়সী ক্রেতারা। কেউ জুতা কেউবা প্যান্ট, গেঞ্জি, মালা, ঘড়ি, পার্সসহ নানা জিনিস কিনছেন। ব্যবসায়ীরাও দীর্ঘদিন পর বেচাকেনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

গুলিস্তানে ফুটপাতে বেল্ট বিক্রি করেন মো. সোহেল। লকডাউনে তার কিছু টাকা ধার করতে হয়েছে। দোকান নিয়ে বসতে পারায় দেনা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন তিনি। প্রথম কয়েকদিন বেচাকেনা কম ছিল। এখন প্রতিদিনই বাড়ছে ক্রেতার সংখ্যা। করোনার আগে ৮-১০ হাজার টাকা বেচাকেনা হতো। এখন প্রতিদিনই ক্রেতা বাড়ায় ৬-৭ হাজার টাকা বিক্রিতেই খুশি এই বেল্ট বিক্রেতা। লকডাউনে কাজকর্ম ছিল না মাল্টা ও নাসপাতি বিক্রেতা মো. সবুজের। দোকান নিয়ে বসায় এখন প্রতিদিনই তার বিক্রি হয় ১০-১২ হাজার টাকা। এতে স্বস্তি ফিরেছে তার পরিবারে।

গুলিস্তানের এসব ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি শো-রুমগুলোরও একই অবস্থা। একটি শো-রুমের তত্ত্বাবধায়ক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, আগের তুলনায় বেচাকেনা এখন অর্ধেক হচ্ছে। খরচ ওঠে কিন্তু আয় হচ্ছে না। এই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে চার-পাঁচ মাস সময় লাগবে বলে জানান তিনি।

গুলিস্তান শপিং কমপ্লেক্সের আরেক দোকানি জাহিদ বলেন, ‘প্রতিদিন ১৫-২০ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। পরিস্থিতি ভালো হলে বিক্রি আরও বাড়বে। দেনা দিতে পারতেছি। লস কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি।’

এদিকে বেচাকেনা বাড়লেও নানামুখী চাপে পড়েছে এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। লকডাউন তুলে দেওয়ায় ব্যবসা শুরু হলেও সঙ্গে সমস্যাও বেড়েছে। বাসা ভাড়া, সন্তানদের পড়ার খরচ, পাওনাদারদের টাকা পরিশোধসহ নানা সমস্যা তৈরি হয়েছে। এসব সমাধানে যে টাকার প্রয়োজন তার অর্ধেকও বেচাকেনা হচ্ছে না বলে অনেকে অভিযোগ করেছেন।

ফুটপাতে ৩৫ বছর ধরে ব্যবসা করা মো. মিজান বলেন, করোনায় মানুষের সহযোগিতা পেতাম, এখন পাই না। বাসা ভাড়া, পড়ার খরচ, পাওনাদারদের টাকা দেওয়া সব চাপ একসঙ্গে। পাঁচজন ছেলেমেয়ে পড়ালেখা করে। করোনাকালের চেয়ে এখন সংসার চালানো বেশি কঠিন।

সাত-আট বছর ধরে ফুটপাতে ব্যবসা করেন প্যান্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ রাজু। তিনি বলেন, বেচাকেনা ভালোই শুরু হয়েছে। স্বাভাবিক হলে পাঁচ মাস পর আগের মতো হয়ে যাবে। কিন্তু আবার লকডাউন বা ফুটপাত থেকে তুলে দিলে গলায় দড়ি দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।

একই অবস্থা ছেঁড়া ও নতুন টাকার ব্যবসা করা মো. আমিরুল ইসলাম ভূঁইয়ার। তিনি জানান, ছয়জনের সংসার নিয়ে তাঁতি বাজারে বাস করি। সকাল থেকেই কাস্টমার কম। আবার কাস্টমার আসলেও বিক্রি হচ্ছে না। আগের চার ভাগের এক ভাগ বেচাকেনা হচ্ছে। কবে স্বাভাবিক হবে তাও জানেন না তিনি।

গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু স্কোয়ার পাতাল সড়ক মার্কেটের মোবাইল মেকানিক শাহজাহান বলেন, নানা চাপে আছি। দুই-তিন হাজার টাকা মাত্র আয় হচ্ছে সারাদিনে। চাহিদা অনুযায়ী চলতে হচ্ছে।
এই বিভাগের আরও খবর
রোজায় বাজার সহনশীল রাখার চেষ্টা করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

রোজায় বাজার সহনশীল রাখার চেষ্টা করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

যুগান্তর
এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

প্রথমআলো
ব্যাংকের ওপর আস্থা কমায় টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনছে মানুষ

ব্যাংকের ওপর আস্থা কমায় টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনছে মানুষ

কালের কণ্ঠ
বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সাথে হওয়া চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

বিদ্যুৎ নিয়ে আদানির সাথে হওয়া চুক্তি বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট

নয়া দিগন্ত
প্রাইম ব্যাংক ও সেবা ডট এক্সওয়াইজেডের মধ্যে চুক্তি সই

প্রাইম ব্যাংক ও সেবা ডট এক্সওয়াইজেডের মধ্যে চুক্তি সই

বাংলা ট্রিবিউন
ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু

ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু

বাংলা ট্রিবিউন
ট্রেন্ডিং
  • সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে 'বস্তায় বস্তায় ঘুষ' নেওয়ার অভিযোগ: দুদকের অনুসন্ধান শুরু

  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া