টানা একমাস পর শুরু হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সশরীরে পাঠদান। করোনা পরিস্থিতি নিম্নমুখী হওয়ায় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে আনন্দমুখর পরিবেশ তৈরি হয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোতে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও সন্তোষজনক। গড়ে প্রায় ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে কেবল করোনা টিকার দুটি ডোজ নেয়া ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাসে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও সশরীরে ক্লাস শুরু হওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা উল্লসিত। একই সঙ্গে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ২০টি নির্দেশনা মানা বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। এদিকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বিধিনিষেধমুক্ত হয়েছে সরকারী অফিস-আদালত, ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠান। সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর উপস্থিতিতে শুরু হয়েছে অফিসপাড়াও।
ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকাল থেকে নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত হয়। টানা একমাস বন্ধ থাকায় প্রথমদিনের ক্লাসে পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত সরকারী নির্দেশনা শিক্ষার্থীদের মাঝে তুলে ধরেন শিক্ষকরা।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের শাখা প্রধান মুসতারি আহমেদ মঙ্গলবার সকালে বলেন, সকাল থেকে ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে আসছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে। কোন ছাত্রীর শরীরের তাপমাত্রা বেশি থাকলে তাকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। যাদের টিকার দুটি ডোজ দেয়া হয়েছে তাদের শুধু ক্লাসে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পাঠদান শুরু করা হয়েছে। ক্লাসে ছাত্রীদের উপস্থিতি প্রায় ৯০ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, ছাত্রীদের মধ্যে যারা করোনার দুটি ডোজ নিয়েছে শুধু তারা যেন ক্লাসে উপস্থিত হয়Ñ এ ধরনের নির্দেশনা নোটিস বোর্ডসহ অভিভাবকদের এসএমএসে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের অনলাইনে জুম ক্লাসে যুক্ত হতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সকাল থেকে পাঠদান শুরু হয়েছে।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম বলেন, সরকারী নির্দেশনা মেনে মঙ্গলবার সকাল থেকে পাঠদান শুরু করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি প্রায় ৮০ শতাংশ। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ক্লাস কার্যক্রম চলছে। তিনি বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক যেসব শিক্ষার্থীর করোনার দুটি ডোজ নেয়া হয়েছে শুধু তাদের স্কুলে আসতে নোটিস দেয়া হয়। যাদের দুটি টিকা নেয়া হয়নি তাদের জুম ক্লাসে যুক্ত হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মহামারী করোনা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ায় সরকারের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী মঙ্গলবার থেকে সারাদেশে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়া হয়েছে।
তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও শিক্ষার্থীদের সশরীরে শ্রেণীকক্ষে পাঠ গ্রহণের ক্ষেত্রে শর্ত আরোপ রয়েছে। যে শিক্ষার্থীরা করোনা প্রতিরোধী টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে শুধু তারাই শ্রেণীকক্ষে উপস্থিত থেকে ক্লাস করতে পারবে। এক্ষেত্রে অন্য শিক্ষার্থীদের বাসায় থেকে অনলাইন ক্লাসে যুক্ত থাকতে হবে। সারাদেশে ওমিক্রনসহ করোনার ব্যাপক প্রাদুর্ভাবের মুখে গত ২১ জানুয়ারি দেশের সবস্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলেও প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলবে আগামী ২ মার্চ। এছাড়া প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা কবে ক্লাসে ফিরতে পারবে, এ বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।
এদিকে করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর তা কীভাবে চলবে, এ বিষয়ে ২০ দফার গাইডলাইন দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। রবিবার মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ এসব নির্দেশনা দিয়ে একটি আদেশ জারি করেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সরকারী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে পূর্বের গাইডলাইনও অনুসরণ করতে হবে। এর ওপর নতুন করে আরও ২০ দফা নির্দেশনা দিয়েছে মাউশি। করোনার উর্ধমুখী প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় গত ১০ জানুয়ারি সারাদেশে বিধিনিষেধের প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। যা ১৩ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়। নতুন বছরের প্রথম ওই বিধিনিষেধে ১১টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মানতে হবে যে ২০ নির্দেশনা ॥ শ্রেণীপাঠদানে অংশ নিতে করোনার দুই ডোজ টিকা নেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে টিকার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণ করেছে, শুধু তারাই শ্রেণী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশমুখসহ অন্যান্য স্থানে কোভিড-১৯ অতিমারী সম্পর্কিত সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে করণীয় বিষয়সমূহ ব্যানার বা অন্য কোন উপায়ে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে সকল শিক্ষক-কর্মচারী-শিক্ষার্থী-অভিভাবককে তাপমাত্রা পরিমাপক যন্ত্রের মাধ্যমে নিয়মিত তাপমাত্রা মাপা ও তা পর্যবেক্ষণ করার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি বিবেচনায় অনলাইন/ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে শিখন-শেখানো কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।
শিক্ষার্থীদের জন্য বিতরণকৃত এ্যাসাইনমেন্টগুলোর কার্যক্রম যথারীতি অব্যাহত থাকবে; শিক্ষার্থীদের ক্লাস রুটিন ইতোপূর্বে পাঠানো নির্দেশনা মোতাবেক প্রণয়ন করতে হবে। শিক্ষার্থীদের ভিড় এড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠানের সব প্রবেশ/প্রস্থান মুখ ব্যবহার করার ব্যবস্থা করতে হবে। যদি কেবল একটি প্রবেশ/প্রস্থান মুখ থাকে সেক্ষেত্রে একাধিক প্রবেশ/প্রস্থান মুখের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করতে হবে।
প্রতিষ্ঠানের একটি কক্ষ প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাসহ আইসোলেশন কক্ষ হিসেবে প্রস্তুত রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সকল ভবনের কক্ষ, বারান্দা, সিঁড়ি, ছাদ এবং আঙ্গিনা যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রতিষ্ঠানের সকল ওয়াশরুম নিয়মিত সঠিকভাবে পরিষ্কার রাখা এবং পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মচারী, অভিভাবকসহ অন্য কেউ প্রবেশ/অবস্থান/প্রস্থানের সময় সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারী এবং অন্য কেউ সঠিকভাবে মাস্ক পরিধান করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিষ্ঠানে সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দ্বারা হাত ধোয়ার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতে হবে। শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের বসার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে পারস্পরিক তিন ফুট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ, ড্রেন ও বাগান যথাযথভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা এবং কোথাও পানি জমে না থাকে তা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা নিরূপণ করতে হবে। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে আনন্দঘন শিখন কার্যক্রমের মাধ্যমে শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকদের সঙ্গে সভা করে এ সংক্রান্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ॥ স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস জানায়, ভরা বসন্তে অন্যরকম আনন্দ ছিল ক্যাম্পাস জুড়ে। ভাল লাগার উপস্থিতি ছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থী সকলের মাঝে। ৩৯ দিন পর মঙ্গলবার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে ক্লাস শুরু হয়েছে।
দীর্ঘ আন্দোলন ও করোনার বিধিনিষেধের কারণে ৩৬ দিন বন্ধ থাকার পর ক্লাসে ফিরতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরাও।
পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী আরমান হোসাইন বলেন, দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আবারও ক্লাসে ফিরতে পেরে ভাল লাগছে। প্রায় মাসখানেক অশান্ত শাবিতে উত্তাপ কাটিয়ে সিনিয়র, সহপাঠী ও জুনিয়রদের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়