তৃণমূল সক্রিয় করতে তৎপর বিএনপি

প্রায় ১৬ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে বিএনপি। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ২ বছর প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল- আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র ওপর যায় নানা ঝক্কি। এরপর ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকলেও ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। অনেক চড়াই-উতরাইয়ের পর রাজনৈতিক জোট ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে ১৮’র নির্বাচনে অংশ নেয় দলটি। ওই নির্বাচনে ব্যাপক ভরাডুবি হয় বিএনপি’র। যদিও বিএনপি এ নির্বাচনকে রাতের ভোটের নির্বাচন আখ্যা দেয়। এরপর থেকে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিএনপি’র নেতারা। একপর্যায়ে বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দেয় বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, গত দুইবারের মতো আর ভুল করতে চায় না বিএনপি। আন্দোলনের লক্ষ্য সামনে রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি।

হচ্ছে পরিকল্পনা। অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে। ত্যাগী ও আন্দোলন সংগ্রামের উপযোগী নেতৃত্ব বাছাই করে দেয়া হচ্ছে দায়িত্ব। সভা সমাবেশ থেকে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের কঠোর বার্তা দিচ্ছেন নীতিনির্ধারকরা।  

নেতাদের ভাষ্য, বর্তমান সরকারের পদত্যাগের পর নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চান তারা। এর জন্য বিভিন্ন বক্তব্যে নেতারা সরকারকে পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছেন। তারা বলছেন, একপর্যায়ে গণআন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। এরআগে সারা দেশে নেতাকর্মীদের আন্দোলনমুখী করতে হবে। সারা দেশে লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা। তাই তৃণমূল পর্যায়ে ছোট ছোট কর্মসূচির মাধ্যমে নেতাকর্মীদের সক্রিয় করার কাজ করছে বিএনপি। নেতারা বলছেন, আগামীর আন্দোলনে সফল হতে হলে তৃণমূল কর্মীদের সক্রিয় করার বিকল্প নেই। রাজধানীতে প্রায় প্রতিদিনই সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন হচ্ছে। এসব কর্মসূচিতে রাজধানী ও এর আশেপাশের নেতাকর্মীরা অংশ নিচ্ছেন। কিন্তু তৃণমূলে জেলা এবং মহানগর পর্যায়ে কর্মসূচি পালিত হলেও উপজেলা, পৌর বা ইউনিয়ন পর্যায়ে তেমন কোনো প্রোগ্রাম হয় না। তাই এখন যেকোনো ইস্যুতে কেন্দ্রের পাশাপাশি তৃণমূলেও কর্মসূচি চলমান রাখার ভাবনা দলটির। জ্বালানি তেল, পরিবহন ভাড়াসহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আগামী ২২শে আগস্ট থেকে দেশব্যাপী ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। সারা দেশের উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা, সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করবে দলটি। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে টিম গঠন করা হয়েছে। 

এই টিম কর্মসূচি সফল করতে সহযোগিতা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। বিএনপি’র দপ্তর সূত্র জানায়, প্রত্যেক বিভাগীয় টিমে দলনেতা হিসেবে কেন্দ্রীয় একজন সিনিয়র নেতা থাকবেন। তার সঙ্গে সদস্য হিসেবে থাকবেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের অধিবাসী সব জাতীয় নির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দ ও সাবেক সংসদ সদস্য, জেলা সভাপতি/আহ্বায়ক এবং সাধারণ সম্পাদক/সদস্য সচিব/যুগ্ম আহ্বায়ক। এরআগে ধারাবাহিক কর্মসূচির বিষয়ে কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে ৮২টি সাংগঠনিক জেলায় চিঠি দেয়া হয়। এতে সব পর্যায়ের কর্মসূচিতে নিজ নিজ জেলার কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক সংসদ-সদস্য ও গত জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া নেতাদের উপস্থিত থাকাসহ ৬টি নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে এখনই হরতাল বা বড় ধরনের কর্মসূচি দিবে না বিএনপি। চূড়ান্ত আন্দোলনের জন্য আরও সময় নিতে চায় তারা। এখন ইস্যুভিত্তিক নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি, দল গোছানো আর বৃহত্তর ঐক্যেই গুরুত্ব দিচ্ছে। এর আগে মাঠে নামলে ফলাফল অনুকূলে আসবে না বলে মনে করছে বিএনপি। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য মানবজমিনকে বলেন, আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। কার্যকরী আন্দোলনের কথাও ভাবা হচ্ছে। এখন আন্দোলনে গেলে শুধু শক্তি ক্ষয় হবে, নেতাকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, হামলায় আহত হবে, মামলায় নাজেহাল হবে। 

সরকার নানাভাবে উস্কানি দিয়ে মাঠে নামাতে চান আমাদের। কিন্তু এবার সরকারের ফাঁদে পা দিবে না বিএনপি। বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান মানবজমিনকে বলেন, বর্তমানে জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য আকাশচুম্বী। এতে নাকাল দেশের মানুষ। এসবের প্রতিবাদে আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছি। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলেও কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। এসব কর্মসূচিতে আমরা সারা দেশের মানুষকে সম্পৃক্ত করতে চাই। এজন্যই আমাদের এসব কর্মসূচি দেয়া। আমরা জেলা এবং মহানগরে কর্মসূচি পালন করেছি, এখন পৌর, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে কর্মসূচি দেবো। কুমিল্লা মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক শওকত আলী বকুল মানবজমনিকে বলেন, বর্তমান সরকারের ভোট ডাকাতি ছাড়াও লুটপাট, চুরি আর টাকা পাচারের খেসারত দিতে হচ্ছে জনগণকে। সরকারের ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম, ভোট ডাকাতি, গণতন্ত্র হরণ ছাড়াও এখন জ্বালানি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশাহারা। নেতাকর্মীরা মামলা-হামলায় জর্জরিত। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নেমে আসতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। সম্প্রতি এক বক্তব্যে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের লক্ষ্য একটাই, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, তারা পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ একটি সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এই যে সংসদ আছে তাকে বাতিল করতে হবে এবং সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নতুন একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সেজন্য রাজপথে আন্দোলনে জোর দিতে হবে। এই সরকার পদত্যাগ না করলে রাজপথের আন্দোলনেই তাদের পতন ঘটানো হবে। এদিকে রাজপথের প্রস্তুতির পাশাপাশি কূটনৈতিক তৎপরতায়ও জোর দিচ্ছে বিএনপি। 

বিভিন্ন ইস্যুতে বিদেশি মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে অফিসিয়িাল ও আনঅফিসিয়াল বৈঠক করছেন দলটির নেতারা। এ সময় তারা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিদেশিদের অবহিত করছেন। সম্প্রতি জাতিসংঘের নবনিযুক্ত আবাসিক সমন্বয়কারী গোয়েন লুইস ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াটলির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধিদল। গত বুধবার দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের এশিয়া-প্যাসিফিক শাখার প্রধান রুরি মুগোবেনের সঙ্গেও বৈঠক করেছে বিএনপি। বৈঠকে অংশ নেয়া নেতারা বলেছেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি কেমন সেটা নিয়ে আমাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আমরা আমাদের বক্তব্য তাকে বলেছি। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আমরা ব্যাখ্যা করেছি যেটা পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন সময়ে এসেছে। এদিকে সারা দেশের সাংগঠনিক কমিটিগুলো সম্পন্ন করার জন্য কেন্দ্র থেকে সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোতে বার্তা দেয়া হয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপি’র ৮৩টি সাংগঠনিক কমিটি রয়েছে। এগুলোর অধীনে রয়েছে অনেক ইউনিট। ইতিমধ্যে সবগুলোতে কমিটি গঠন দ্রুত সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে কেন্দ্র থেকে। বিএনপি’র দপ্তর সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণের থানা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলের কাজ প্রায় শেষ দিকে। এরপর হবে উত্তর ও দক্ষিণের কাউন্সিল। ৮৩টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি পুনর্গঠনের কাজও চলছে।
এই বিভাগের আরও খবর
কাতারের আমিরের নামে ঢাকায় পার্ক ও সড়কের নামকরণ

কাতারের আমিরের নামে ঢাকায় পার্ক ও সড়কের নামকরণ

দৈনিক ইত্তেফাক
ফরিদপুরে মন্দিরে আগুন : দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিএনপির তদন্ত কমিটি

ফরিদপুরে মন্দিরে আগুন : দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় বিএনপির তদন্ত কমিটি

নয়া দিগন্ত
১৯৬০ সালের সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহে কেমন ছিল ঢাকার জীবনযাত্রা

১৯৬০ সালের সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহে কেমন ছিল ঢাকার জীবনযাত্রা

প্রথমআলো
থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, স্বাক্ষরিত হবে যেসব চুক্তি

থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, স্বাক্ষরিত হবে যেসব চুক্তি

কালের কণ্ঠ
তীব্র গরমে ১০-১২ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে অতিষ্ট গ্রামাঞ্চলের মানুষ

তীব্র গরমে ১০-১২ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে অতিষ্ট গ্রামাঞ্চলের মানুষ

জনকণ্ঠ
আরো ৭২ ঘণ্টার তাপদাহের সতর্কতা জারি

আরো ৭২ ঘণ্টার তাপদাহের সতর্কতা জারি

নয়া দিগন্ত
ট্রেন্ডিং
  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া

  • অবিশ্বাস্য কীর্তিতে হাজার রানের ক্লাবে এনামুল বিজয়