তেলের সাম্রাজ্য হারাচ্ছে রাশিয়া

বিশ্ব জ্বালানি বাজারে মোড়লের অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। দেশটি কেবল ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) ৪০ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করে। এ ছাড়া জার্মানি, ইতালি ও অস্ট্রিয়ার অর্থনীতির জন্য রাশিয়া বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

রাশিয়ার বৈশ্বিক শক্তি মূলত তেল নিয়ে। বিশ্বে অপরিশোধিত তেল (ক্রুয়েড) রপ্তানিতে দ্বিতীয় রাশিয়া। সৌদি আরবের পরেই এর অবস্থান। দেশটি প্রতিদিন গড়ে পাঁচ মিলিয়ন ব্যারেল তেল রপ্তানি করে। এ ছাড়া প্রায় তিন মিলিয়ন ব্যারেল পরিশোধিত পণ্য (ডিজেল ও বিমান জ্বালানি) রপ্তানি করে।

অর্থনৈতিক এই শক্তি ও সামর্থ্যের জেরে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করতে সক্ষম হয়েছে। ইউক্রেনের বেসামরিক জনগণ ও অবকাঠামোর বিরুদ্ধে ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠেছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বিশ্বাস করেছিলেন, জ্বালানি শক্তির বাজারে তিনি যে নগ্নশক্তি প্রয়োগ করবেন তার বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়াবে না। পুতিন ভেবেছিলেন, ইউরোপীয়রা খুব বেশি প্রতিরোধ করলে তিনি গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেবেন। যদি বাকি বিশ্ব প্রতিরোধস্বরূপ তেল কেনা বন্ধ করে দেয় তাহলে তেলের দাম বাড়বে এবং সর্বত্রই অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেখা দেবে।

কিন্তু বাস্তবে পুতিনের ভাবনার উল্টো হয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপ রুশ অভিযানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও তাদের মিত্ররা নিজে থেকেই রাশিয়া জ্বালানি নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সারা বিশ্বই রাশিয়ার তেল-গ্যাস আমদানি করা থেকে বিরত থাকছে। অবশ্য ইউরোপ আর কখনো রাশিয়ার ওপর আমদানিনির্ভর থেকে জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে ফেলবে না। ফলস্বরূপ, রাশিয়া শিগগিরই বিশ্ব জ্বালানি বাজারের খিলাড়ি হিসেবে বিলুপ্ত হবে।

পুতিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের হাজার হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। বাস্তুচ্যুত হয়েছে এক কোটিরও বেশি মানুষ। যার মধ্যে ৪০ লাখেরও বেশি মানুষ ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়েছে। রুশ বাহিনী বেসামরিক এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবর্ষণ করছে। এ ছাড়া এক কোটি ৩০ লাখ ইউক্রেনীয় বোমা হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে। মারিউপোল ও অন্যান্য স্থানে বেসামরিক লোকের আশ্রয়স্থল টার্গেট করে হামলা চালানো হয়েছে। বিশ্ব মানবতার দৃষ্টিতে যা একেবারই যুদ্ধপরাধ।

ইউক্রেনের এই ক্ষত ইউরোপ বেশ তীব্রভাবে অনুভব করেছে। এ ঘটনা সমগ্র ইউরোপকে আরও ঐক্যবদ্ধ করেছে। ইউরোপের দেশগুলো লাখ লাখ ইউক্রেনীয় শরণার্থী গ্রহণ করেছে। যতটা সম্ভব যে কোনো উপায়ে ইউক্রেনের পাশে দাঁড়াচ্ছে। রাশিয়ার প্রতিটি নৃশংসতা ইউরোপীয় নেতা ও জনসাধারণের মধ্যে ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন বাড়াচ্ছে।

বেশ কিছু ইইউ দেশ ইতিমধ্যে রাশিয়ার তেল বয়কট করেছে। ট্যাংকারট্রেকারস ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারিতে ডেনমার্ক রাশিয়া থেকে মাত্র ৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন ক্রুড আমদানি করেছে। কিন্তু গত মার্চে দেশটি ডেনমার্ক থেকে কোনো ক্রুড আমদানি করেনি। সুইডেন, ফিনল্যান্ড ও অন্য দেশগুলো রাশিয়ার ক্রড আমদানির পতনের খবর দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ইউরোপে রাশিয়ার তেল আমদানির ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার নেতৃত্ব দিতে জার্মানি ও অন্য দেশগুলোকে পদক্ষেপ নিতে দেখা যেতে পারে।

রাশিয়ার গ্যাস ও পাইপলাইন তেলের জন্য এসক্রো অ্যাকাউন্টে (থার্ড পার্টি) অর্থ প্রদান ও ইউরো দিয়ে রাশিয়ার কোনো অস্ত্র কেনা যাবে না বলে আলোচনা হয়েছে। পুতিন গ্যাসের দাম কেবল রুবলে পরিশোধ করার চেষ্টা করছেন। অবশ্য এটিকে ইইউ চুক্তির লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে।

পুতিন ও কিছু জ্বালানি ব্যবসায়ী মনে করছেন, ইউরোপে রাশিয়ার তেলের বাজার বন্ধ হলে এশিয়ার বাজার ধরা সহজ হবে। কিন্তু তারা ভুলে গেছে, এর আগে ইরানের ওপরও তেল নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, যুক্তরাজ্য ও নরওয়ে যদি রাশিয়ার তেল ও ক্রুয়েড ট্যাংকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও সামুদ্রিক বিমা বন্ধ করে, তাহলে বিশ্বের বেশিরভাগ ট্যাংকার বহর রাশিয়ার বাজার থেকে ফিরে যাবে।

রাশিয়ার নিজস্ব কিছু ট্যাংকার আছে। কিন্তু তাদের ট্যাংক বহর প্রতিদিন এক মিলিয়ন ব্যারেল স্থানান্তর করার জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ অনেক ক্রুড মুরমানস্ক, বাল্টিক সাগর বা কৃষ্ণসাগর থেকে আনার প্রয়োজন হবে। কেউ কেউ হয়তো রাশিয়ার বাজারে প্রবেশ করার চেষ্টা করতে পারে। এমন দেশ, জাহাজ মালিক, চার্টারার, ক্যাপ্টেনদের নজরদারি করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ। এমনকি তাদের ওপর ব্যক্তিগত নিষেধাজ্ঞাও দিতে পারে। ইউক্রেন এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে, যুদ্ধাপরাধের অর্থায়নে জড়িত যে কারো বিরুদ্ধে সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই বিভাগের আরও খবর
আলু-পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলো ভারত

আলু-পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করলো ভারত

ভোরের কাগজ
আদানির সবই ছিল গোপনীয়, প্রায় চার বছর অন্ধকারে ছিলেন বিপিডিবির কর্মকর্তারাও

আদানির সবই ছিল গোপনীয়, প্রায় চার বছর অন্ধকারে ছিলেন বিপিডিবির কর্মকর্তারাও

বণিক বার্তা
প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার ৫ প্রকল্প অনুমোদন একনেকের

প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকার ৫ প্রকল্প অনুমোদন একনেকের

বাংলা ট্রিবিউন
রোজায় বাজার সহনশীল রাখার চেষ্টা করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

রোজায় বাজার সহনশীল রাখার চেষ্টা করা হবে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

যুগান্তর
এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

এস আলমের শেয়ার বিক্রি করে ১০ হাজার কোটি টাকা আদায় করা হবে: ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান

প্রথমআলো
ব্যাংকের ওপর আস্থা কমায় টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনছে মানুষ

ব্যাংকের ওপর আস্থা কমায় টাকা না রেখে সঞ্চয়পত্র কিনছে মানুষ

কালের কণ্ঠ
ট্রেন্ডিং
  • সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামাল ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে 'বস্তায় বস্তায় ঘুষ' নেওয়ার অভিযোগ: দুদকের অনুসন্ধান শুরু

  • ভালোবাসা দিবসে পরী মনির ‘বুকিং’

  • নির্বাচনের আগে পাকিস্তানে জোড়া বিস্ফোরণে নিহত ২৮

  • ভিসা পদ্ধতি পুরোপুরি তুলে নিলো যে দেশ

  • শন্তিপূর্ণভাবে মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি: প্রধানমন্ত্রী

  • ২০৩৫ সালের মধ্যে চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বাড়বে তিন গুণ

  • তানজানিয়ায় প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৯

  • ব্যাংকে ৫ কোটি টাকার বেশি থাকলে বেশি কর

  • কাতার বিশ্বকাপে ফিরছে জিদানের সেই ভাস্কর্য

  • ইন্দোনেশিয়ার নিষেধাজ্ঞায় তেলের মূল্য আকাশছোঁয়া