১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্য দিয়ে দেশের বিদ্যুৎ খাতে আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হবে। ফলে কম জ্বালানি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ যেমন বেশি পাওয়া যাবে, পাশাপাশি পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখাও সম্ভব হবে। পটুয়াখালীর পায়রায় অবস্থিত এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উদ্বোধন আজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে উপস্থিত থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উদ্বোধন করবেন।
দক্ষিণ জনপদে অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য বাড়াতে নির্মিত হয়েছে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। এরই মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে ঘিরে শিল্পে বিনিয়োগ শুরু হয়েছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাটারিচালিত গাড়ি, বিদ্যুৎ সহজলভ্য হওয়ায় ওই অঞ্চলের পর্যটন খাতও ব্যাপক বিস্তৃত হচ্ছে। গড়ে উঠছে অত্যাধুনিক সব হোটেল ও রেস্তোরাঁ। এসব শিল্প-কারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলায় কয়েক লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) আওতায় নির্মিত এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হয়েছে। যদিও সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত না হওয়ায় এখনই কেন্দ্রটির পুরো বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাচ্ছে না।
বিসিপিসিএল বলছে, বর্তমানে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে। এর মধ্যে ৫০০ মেগাওয়াট গোপালগঞ্জ সাবস্টেশনে দেয়া হচ্ছে। বাকি ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশেই একটি সাবস্টেশনে দেয়া হচ্ছে। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রকে জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সংযুক্ত করার জন্য পায়রা থেকে গোপালগঞ্জ এবং সেখান থেকে সাভারের আমিনবাজার পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে গোপালগঞ্জ থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ সঞ্চালন লাইন নির্মাণ শেষ হলে এ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ চলে যাবে ঢাকায়।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে দক্ষিণাঞ্চলে সরকারের যে বিদ্যুৎ হাব গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল, তা বাস্তবে রূপ নিতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে একই সক্ষমতার আরো একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রও বাংলাদেশ ও চীন নির্মাণ করছে। যার কাজ এরই মধ্যে ২৪ শতাংশ শেষ হয়েছে। পাশাপাশি ৬০০ মেগাওয়াটের একটি সোলার পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
বিসিপিসিএলের এমডি প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম বণিক বার্তাকে বলেন, দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ পাওয়ার ক্ষেত্রে পায়রা একটি মাইলফলক। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে পরিবেশ দূষণের মতো কোনো কারণ নেই। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দূষণ প্রক্রিয়ায় বিশ্বব্যাংকের যেসব প্যারামিটার রয়েছে, সেসব সূচকের অনেক নিচে অবস্থান করছে এ কেন্দ্র।
পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালিকানায় রয়েছে বিসিপিসিএল, রাষ্ট্রীয় কোম্পানি নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট করপোরেশন (সিএমসি)।
বিসিপিসিএলের নির্মিত ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি এখন দেশের সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রতিটি ইউনিটের ৬৬০ মেগাওয়াট সক্ষমতা। ২০২০ সালের জুন নাগাদ বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসে, একই বছরের আগস্টে উৎপাদনে আসে দ্বিতীয় ইউনিট। তবে সঞ্চালন লাইন নির্মাণ না হওয়ার কারণে আজ অবধি পূর্ণ মাত্রায় চালানো যায়নি।
সঞ্চালন লাইনের বিষয়ে জানতে চাইলে এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, পায়রা-গোপালগঞ্জ-আমিনবাজার লাইনটির পদ্মা রিভার ক্রসিংয়ের কাজ এখনো চলমান, এটি শেষ হতে চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ লেগে যাবে। এই কাজ শেষ হলে ঢাকায় সরাসরি বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারব আমরা।
পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। নির্মাণ ব্যয়ের সিংহভাগ অর্থায়ন করেছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। প্রায় ১ হাজার একর জমির ওপর নির্মিত এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানি করা হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া থেকে।
এর আগে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উদ্বোধনের বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এটি দেশের প্রথম ও দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় বৃহৎ আল্ট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিশ্বের দশম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এটি নির্মাণ করেছে।
দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সরকার এক দশক আগে বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের সময় ২০১৪ সালে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি সই হয়। পরে গঠিত হয় বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। যৌথ উদ্যোগের ওই কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় পায়রার এ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ পায় চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনইপিসি ও সিইসিসি কনসোর্টিয়াম।
এদিকে, পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন। একই সঙ্গে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সাজানো হয়েছে নতুন রূপে। পুরো বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে সাজানো হয়েছে ২০০ নৌকা। রঙিন পাল তুলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাশে নদীতে এসব নৌকা ভাসিয়ে স্বাগত জানাবেন এ অঞ্চলের জেলেরা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি উদ্বোধন করবেন। ওই কেন্দ্র উদ্বোধনের পর পরই শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণাও দেবেন তিনি।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বীর বিক্রম, বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মো. হাবিবুর রহমান ও বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং। স্বাগত বক্তব্য দেবেন বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী এএম খোরশেদুল আলম।
প্রধানমন্ত্রীর আগমনের বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার আমিন-উল-আহসান গতকাল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের একটি প্রকল্পের উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। এ প্রকল্পকে ঘিরে এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নানাভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়