কাগিসো রাবাদার বলকে পয়েন্ট অঞ্চল দিয়ে সীমানার বাইরে পাঠালেন সাকিব আল হাসান। এ বাউন্ডারিটি সুপারস্পোর্ট পার্কে বাংলাদেশের ড্রেসিংরুম আর গ্যালারিকে উন্মাতাল করে দিল, নিঃসন্দেহে তা ঢেউ তোলে বাংলাদেশেও। জয়সূচক এ রানেই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথমবারের মতো যেকোনো ফরম্যাটে সিরিজ জয়ের ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ।
প্রোটিয়াদের ২-১ ব্যবধানে হারিয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিল তামিম ইকবাল বাহিনী। গতকাল সেঞ্চুরিয়নে তৃতীয় ম্যাচে স্বাগতিকদের ৯ উইকেটে হারিয়েছে টাইগাররা। ২০ বছরের চেষ্টায় এ প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব দেখাল বাংলাদেশ।
তাসকিন আহমেদ ও সাকিবের অনবদ্য বোলিং পারফরম্যান্সে ভর করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে মাত্র ১৫৪ রানে অলআউট করে বাংলাদেশ। এরপর তামিম ইকবাল ও লিটন দাসের নিখুঁত ব্যাটিং ১৪১ বল ও ৯ উইকেট হাতে রেখেই বাংলাদেশকে এনে দেয় সহজ এক জয়। ওপেনিং জুটিতে দুজন ১২৫ বলে ১২৭ রান তুলে দিলে জয় নিয়ে আর ভাবতে হয় না অতিথিদের। লিটন ৫৭ বলে ৪৮ রান করে কেশব মহারাজের শিকার হন। কিন্তু ততক্ষণে জয় থেকে মাত্র ২৮ রান দূরে। বাকি রানগুলো সাকিবকে নিয়ে তুলে নেন তামিম। বাংলাদেশ দলনায়ক ৮২ বলে ৮৭ ও সাকিব ২০ বলে ১৮ রান করে অপরাজিত ছিলেন।
এর আগে তাসকিন আগুনে পুড়েছে প্রোটিয়ারা। ৩৫ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন এই ডানহাতি ফাস্ট বোলার। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে কোনো বাংলাদেশী বোলার এ প্রথম ৫ উইকেট নেয়ার গৌরব অর্জন করলেন। প্রায় আট বছর পর ৫ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব দেখালেন তাসকিন। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে অভিষেক ওয়ানডেতে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। এবার নিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সেঞ্চুরিয়নে। এর মাধ্যমে বিদেশে বাংলাদেশের চতুর্থ পেসার হিসেবে ৫ উইকেট নিলেন তাসকিন। তার অনবদ্য এ বোলিং পারফরম্যান্সে ভর করেই প্রোটিয়াদের অল্প রানে আটকে দিতে সমর্থ হয় বাংলাদেশ, তাতে ভর করে আসে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ও।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটিই সর্বনিম্ন স্কোর দক্ষিণ আফ্রিকার। আগের সর্বনিম্ন সংগ্রহ ছিল ২০১৫ সালে মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে করা ১৬২।
টস হেরে বোলিং পেয়ে হতাশ হন বাংলাদেশ দলনায়ক তামিম। যদিও বোলাররা একটু পরই তার মুখে হাসি ফুটিয়েছেন। মুস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল ইসলাম খুব একটা সুবিধা করতে পারছিলেন না বলে পঞ্চম ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজকে আক্রমণে আনেন তামিম। সেই মিরাজই এনে দেন প্রথম ব্রেক থ্রু। সপ্তম ওভারে তিনি বিদায় করেন কুইন্টন ডি কককে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি সফরকারী দলকে। ওপেনিং জুটির ৪৬ রানের পর আর ৪০ রানের মধ্যে স্বাগতিকদের নেই আরো চার উইকেট।
মিরাজের স্পিনে ডেডলক ভাঙার পর গতির ঝড় তুলে প্রোটিয়াদের ব্যাটিং অর্ডার বিধ্বস্ত করেন তাসকিন। কাইল ভেরেইন ও অনবদ্য খেলতে থাকা ইয়ান্নেমান মালানকে তিনি সাজঘরে ফেরান পরপর দুই ওভারে। এ সময় নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারাতে থাকে প্রোটিয়ারা। ১৬তম ওভারে সাকিবের ঘূর্ণিতে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন স্বাগতিক দলনায়ক তেম্বা বাভুমা। ডেঞ্জারম্যান রাসি ফন ডার ডুসেনকে এদিন দাঁড়াতেই দিলেন না শরিফুল। ব্যক্তিগত মাত্র চার রানে মিরাজকে ক্যাচ তুলে দিয়ে তিনি ফেরেন সাজঘরে।
এরপর ১৯ রানের ব্যবধানে ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস, ডেভিড মিলার ও কাগিসো রাবাদাকে শিকার করে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার ৫ উইকেট পূর্ণ করেন তাসকিন। শেষ দিকে স্পিনার কেশব মহারাজের ২৮ রানে ভর করে ১৫০ ছাড়ায় প্রোটিয়াদের সংগ্রহ। ৩৭তম ওভারের শেষ বলে রানআউটের শিকার হন মহারাজ। তার আগে লুঙ্গি এনগিডিকে ফেরান সাকিব। লুঙ্গি ১৪ বল খেলে কোনো রানই করতে পারেননি!
তাসকিনের খুনে বোলিং ছাড়াও এদিন ঘূর্ণিতে প্রোটিয়াদের নাকাল করেন সাকিব, তিনি ৯ ওভারে ২৪ রানের খরচায় নেন দুটি উইকেট। শরিফুল ও মিরাজের শিকার একটি করে। বোলারদের অবিস্মরণীয় এ প্রচেষ্টা জয়ের ভিত গড়ে দেয় বাংলাদেশকে, যার ওপর দাঁড়িয়ে ব্যাটিংয়ে দাপট দেখিয়ে দলকে জেতালেন তামিম ও লিটন।
জয় শেষে বোলারদের কৃতিত্ব দিতে ভুললেন না তামিম। তাসকিনের ৫ উইকেট শিকার এবং ম্যাচ ও সিরিজসেরার পুরস্কার গ্রহণ নিয়ে তিনি বলেন, আমি খুবই গর্বিত মানুষ, বিশেষ করে কোনো বাংলাদেশী ৫ উইকেট নিয়ে আমাদের জন্য সিরিজ জিতল আর সিরিজসেরাও হলো। বর্তমান ও সাবেক কোচদের কৃতিত্ব দেব। এটা বিরাট অর্জন।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়