ভোজ্যতেলের দাম বাড়ছে লাগামহীনভাবে। এ নিয়ে চলছে তেলেসমাতি। মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আলোচনা হয় এক রকম, বাজারে চিত্র দেখা যায় আরেক রকম। অজুহাতের অভাব নেই। এক পক্ষ দোষ দিচ্ছে আরেক পক্ষের; মাঝখানে চিঁড়েচ্যাপ্টা হচ্ছে গরিব শীর্ণকায় মানুষ, যাদের শরীরে একটু তেল দরকার। অথচ তারাই এখন বিনা তেলে রান্না করার জোগাড়। গত দুই বছরের ব্যবধানে গ্রাহক পর্যায়ে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে ৮৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বাজারে প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের মূল্য ছিল ৭৮ টাকা। দুই বছর পরে ভোক্তাকে এই তেল ক্রয় করতে হচ্ছে ১৪৬ টাকায়। এক বছর আগেও এই তেল বিক্রি হয়েছে ১১২ টাকায়। সরকারি বাণিজ্য সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এক দিকে নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা নিম্ন আয়সহ নির্ধারিত আয়ের মানুষ। করোনার করুণ এই মুহূর্তে ভোজ্যতেলের দামের এই বাড়াবাড়িতে তারা চোখে অন্ধকার দেখছেন।
এ দিকে সয়াবিন ও পাম অয়েলের মূল্যবৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দেশের ২৩ বিশিষ্টজন। তারা বলেছেন, নতুন করে ভোজ্যতেল বিশেষত সয়াবিন ও পাম অয়েলের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনকে আরো কষ্টকর করে তুলবে। গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে তারা ভোজ্যতেলসহ খাদ্যসামগ্রীর মূল্য নিয়ন্ত্রণের দাবি জানান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে প্রায় প্রতিটি ভোগ্যপণ্যের মূল্যে চলছে ঊর্ধ্বগতি। ভোজ্যতেল ছাড়াও বাজারে এখন মুরগির দাম বেশ চড়া। বেড়েছে চিনির দামও। স্বল্প আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে সবকিছু। তারা টিসিবির ট্রাকের সামনে ভিড় করছেন। এমন সময়ে ভোজ্যতেলের দাম আরেক দফা বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়ছে মানুষ। ফলে শুধু রান্নার তেলের পেছনেই এখন বাড়তি ব্যয় করতে হবে তাদের। গত দেড় মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষের। ব্যয় বৃদ্ধির চাপ সইতে না পেরে পরিবর্তন আনছে জীবনধারায়। খাদ্যাভ্যাস ও আবাসস্থল পরিবর্তন করে কোনো রকমে টিকে থাকতে নানা পথ অবলম্বন করতে হচ্ছে তাদের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান নয়া দিগন্তকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলে দাম বেড়েছে; কিন্তু মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়েনি। আমাদের কর্মসংস্থান কমেছে। করোনার প্রভাবে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। মানুষের বেতন কমে গেছে। সরকার পদ্মা সেতু, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পায়রা বন্দরসহ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু আমার ক্রয়ক্ষমতা না বাড়লে এই উন্নয়ন আমার কী কাজে আসবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সয়াবিন তেলের দাম নিয়ে মিল মালিকদের কারসাজি দীর্ঘ দিনের। তাদের এই কারসাজি ধরতে অতীতে কয়েকবার রিফাইনারি কারখানার প্রধান কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়েছে। এই অভিযান থেকে ভোজ্যতেল উৎপাদনকারী সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও টিকে গ্রুপও বাদ যায়নি। এ ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত মনিটরিং টিম মেঘনা ও সিটি গ্রুপের মিলও পরিদর্শন করেছে।
দেশে ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে পাঁচটি পরিশোধনকারী কারখানা। এই পাঁচ কারখানার মালিকই নির্ধারণ করেন বাজারে সয়াবিন তেলের মূল্য কত হবে। তারা ঠিক করেন, দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিলে কত কমবে, আদৌ কমবে কি না। বর্তমানে ১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভোজ্যতেল আমদানিতে সবগুলো সক্রিয় নেই। সক্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলোই মূলত ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বলে জানা গেছে। দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা হচ্ছে বছরে ১৫ লাখ টন। এর মধ্যে সয়াবিনের চাহিদা ১১ লাখ টন, পাম অয়েলের তিন লাখ টন এবং সরিষার এক লাখ টন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমবে, তখন দেশের বাজারেও কমানো হবে। বিভিন্ন সময় আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দাম কমায়নি। এই বছরের শুরুতে ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করলে সরকার তাতে সায় না দিয়ে কিছুদিন সময় নেয়। কিন্তু ব্যবসায়ীরা সরকারের কথা শোনেনি; বরং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মৌন সম্মতিতে খোলা তেলের দাম তাদের সুবিধা অনুযায়ী বাড়িয়ে নিয়েছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, ভোজ্যতেলের বাজার যেভাবে ব্যবস্থাপনা করা দরকার, তা হয় না। হাতেগোনা কয়েকটি ব্যবসায়ী গ্রুপ এ পণ্যটির ব্যবসা করছে। সরকার ওই সব কোম্পানির সাথে সমঝোতার মাধ্যমে ভোক্তাস্বার্থ রক্ষার চেষ্টা করছে। এখন যে পরিস্থিতি, তাতে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে তেলে শুল্ক প্রত্যাহার করা যেতে পারে।
২৩ বিশিষ্টজনের বিবৃতি : সয়াবিন ও পাম অয়েলের মূল্যবৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে দেশের ২৩ বিশিষ্ট নাগরিক বলেছেন, সয়াবিন ও পাম অয়েলের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনকে আরো কষ্টকর করে তুলবে। এক বিবৃতিতে তারা বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত রোববার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আট টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেয়। তাতে বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম হবে ১৬৮ টাকা। আর বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম হবে ৭৯৫ টাকা। এত দিন ছিল ৭৬০ টাকা। ২০২০ সালের অক্টোবরে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ছিল ৫০৫ থেকে ৫১৫ টাকা।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘প্রায় দুই বছর যাবৎ করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ সীমাহীন আর্থিক দুরবস্থায় নিমজ্জিত। করোনাকালে বিপুলসংখ্যক মানুষ কাজ হারিয়েছে, আয় কমেছে অনেকের। এ রকম পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, বিশেষ করে খাদ্যসামগ্রীর দাম ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। নতুন করে ভোজ্যতেল বিশেষত সাধারণ মানুষ যে তেল ব্যবহার করে সেই সয়াবিন ও পাম অয়েলের মূল্যবৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনকে আরো কষ্টকর করে তুলবে।’
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়