ঢাকার ফকিরাপুল ট্রাফিক মোড়ের (ইন্টারসেকশন) তিনটি রাস্তার কোনা সুচালো। মোড়টির এ বৈশিষ্ট্যের কারণে বামদিকগামী গাড়িগুলোকে চলতে হয় ধীরগতিতে। উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে আবার রয়েছে বিদ্যুতের ট্রান্সমিটার। গাড়ির চাপ বেড়ে তীব্র যানজট তৈরি হওয়া মোড়টির নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
মালিবাগ রেলগেট ট্রাফিক মোড়ের সবচেয়ে বড় সমস্যা সোহাগ পরিবহনের বাস কাউন্টার। কাউন্টারে আসা-যাওয়া বাসের কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে স্বাভাবিক যান চলাচল। পূর্ব প্রান্তের রাস্তাসহ মোড়জুড়ে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে যানজট লেগেই থাকে ওই স্থানটিতে।
ফকিরাপুল ও মালিবাগ রেলগেট ট্রাফিক মোড়সহ ঢাকার ২৬টি ট্রাফিক মোড়ে জরিপ করে সবক’টিতেই নকশাগত বিভিন্ন দুর্বলতা এবং অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলার চিত্র পেয়েছে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ)। চলতি বছরের শুরুর দিকে করা জরিপে নকশাগত দুর্বলতার পাশাপাশি ট্রাফিক মোড়গুলোর ধরন, ঝুঁকিপূর্ণ পথচারী পারাপার রোধে গৃহীত ব্যবস্থা, অবৈধ পার্কিং, অবৈধ দখল, জেব্রা ক্রসিং, বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামার মতো বিষয়গুলোও পর্যবেক্ষণ করেন সংস্থাটির পরিদর্শকরা, যা যথাযথ ও সুশৃঙ্খল অবস্থায় পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি বেশির ভাগ ট্রাফিক মোড়ে সিগন্যাল ব্যবস্থার জন্য অবকাঠামো থাকলেও সেগুলো কার্যকর অবস্থায় পায়নি ডিটিসিএর পর্যবেক্ষক দল।
‘ইন্টারসেকশনের সমস্যা শনাক্তকরণ ও সমাধানে সুপারিশ প্রদান’ শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়েছে, যেকোনো ট্রাফিক মোড়ে বাধাহীনভাবে যান চলাচলের জন্য লেন ডিমারকেশন লাইন থাকা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু পরিদর্শন করা ২৬টি ট্রাফিক মোড়ের কোনোটিতেই লেন ডিমারকেশন লাইন দৃশ্যমান ছিল না।
ট্রাফিক মোড়গুলোতে লেন ডিমারকেশন লাইন রাখা কতটা গুরুত্বপূর্ণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. হাদিউজ্জামান বণিক বার্তাকে বলেন, ফুটপাত বা সড়ক বিভাজক থেকে নির্দিষ্ট দূরত্ব রাখতে চালককে সতর্ক করাই ডিমারকেশন লাইনের মূল উদ্দেশ্য। রাস্তা কিংবা রাস্তার মোড়ে ডিমারকেশন লাইন না থাকলে গাড়ি রাস্তা বা মোড়ের কোনায় বেঁধে যেতে পারে। এর ফলে দুর্ঘটনার পাশাপাশি রাস্তায় যানজট অনেক বেড়ে যায় বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক হাদিউজ্জামান।
রাজধানীর ট্রাফিক মোড়গুলো পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাস্তার ধারণক্ষমতা কেমন হবে, তার বেশির ভাগই নির্ভর করে মোড়গুলোর ওপর। রাস্তার চেয়ে ট্রাফিক মোড়ে গাড়ির চাপ থাকে চার-পাঁচগুণ বেশি। এজন্য মোড়গুলোকে যতটা সম্ভব প্রশস্ত করে নির্মাণ করতে হয়। কিন্তু ঢাকার বেশির ভাগ ট্রাফিক মোড়ই প্রয়োজনের তুলনায় সরু করে নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণের ক্ষেত্রে জ্যামিতিক নকশা কোথাও মানা হয়নি। পণ্যবাহী গাড়ির বিষয়গুলোও মাথায় রাখা হয়নি। অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান নগরায়ণের কারণে ট্রাফিক মোড়গুলো সম্প্রসারণ করে যথাযথভাবে নির্মাণের সুযোগও কমে আসছে। এমন অবস্থায় কর্তৃপক্ষের উচিত এ বিষয়গুলোতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যতটা সম্ভব ট্রাফিক মোড়গুলোর উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। পাশাপাশি ট্রাফিক মোড়গুলোর জন্য একটি আদর্শ ডিজাইন ম্যানুয়াল তৈরির পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
চারপাশে অবকাঠামো গড়ে ওঠায় ট্রাফিক মোড়গুলো সম্প্রসারণের সুযোগ সীমিত হয়ে আসার কথা উঠে এসেছে ডিটিসিএর জরিপ প্রতিবেদনেও। পরিদর্শন করা ২৬টি ট্রাফিক মোড়ের বেশির ভাগেরই সম্প্রসারণ কিংবা উন্নয়নের জন্য চারপাশে পর্যাপ্ত জায়গার অভাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
নকশাগত দুর্বলতার পাশাপাশি ঢাকার সবক’টি ট্রাফিক মোড়ে অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলার চিত্র পেয়েছে ডিটিসিএর পরিদর্শক দল। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা বিভিন্ন যানবাহনের অবৈধ পার্কিং। একই সঙ্গে ট্রাফিক মোড়ে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানোর কারণেও দেখা দিচ্ছে বিশৃঙ্খলা, যা রূপ নিচ্ছে যানজটে।
দুয়েকটি ট্রাফিক মোড় নকশাগতভাবে তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকলেও সেগুলোর কার্যক্ষমতা কমেছে অব্যবস্থাপনা-বিশৃঙ্খলার কারণে। এর একটি বড় উদাহরণ ঢাকার শাহবাগ ট্রাফিক মোড়। ডিটিসিএর জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোড়টির চারিদিকে বামদিকগামী যানবাহনের জন্য পৃথক লেন থাকলেও রিকশা ও মোটরসাইকেলের অবৈধ পার্কিংয়ে তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এছাড়া মোড়টিতে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করার কারণেও যানজট তৈরি হচ্ছে।
বিশৃঙ্খলা, অব্যবস্থাপনা, যানজটের পাশাপাশি ঢাকার ট্রাফিক মোড়গুলোকে দুর্ঘটনাপ্রবণ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে ডিটিসিএর জরিপ প্রতিবেদনে। নকশাগত দুর্বলতা, যাত্রী পারাপারের জন্য জেব্রা ক্রসিং না থাকা কিংবা থাকলেও জেব্রা ক্রসিংয়ের দাগ মুছে যাওয়া, সাইকেলের মতো যানবাহনের জন্য লেনের ব্যবস্থা না রাখার জন্য ট্রাফিক মোড়ে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানিও বেশি ঘটছে।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়