রাজধানীর বাজারে নতুন করে তেল, চিনি, চাল ও পিয়াজের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে আগে থেকে বেড়ে যাওয়া আলু, আদা-রসুন, ব্রয়লার মুরগি ও গরুর মাংসের দামও কমেনি। এ ছাড়া সবজির বাজারেও স্বস্তি নেই। সবমিলিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে অসহায় ক্রেতা সাধারণ। শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচা, মালিবাগ বাজার ও কাওরান বাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অর্ধ ডজনের বেশি পণ্যের দাম বেড়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে তেল ও চিনির দাম। বৃহস্পতিবার থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটারে ১২ টাকা এবং খোলা সয়াবিনের লিটারে ৯ টাকা বেড়েছে। আর ৫ লিটারের বোতলের দাম বেড়েছে ৫৪ টাকা।
এ ছাড়া পাম সুপার ওয়েলের দাম লিটারে বাড়ানো হয়েছে ১৮ টাকা। এখন বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৯৯ টাকা, ৫ লিটারের দাম ৯৬০ টাকা এবং খোলা সয়াবিন তেলপ্রতি লিটারের দাম ১৭৬ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে চিনির সংকট যেন কাটছেই না।
কয়েক দিনের ব্যবধানে চিনির দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা কেজিপ্রতি, যা গত সপ্তাহে ১২০-১২৫ টাকার মধ্যে ছিল। অথচ সরকার খোলা চিনির দাম বেঁধে দিয়েছে প্রতি কেজি ১০৪ টাকা। গত সেপ্টেম্বর থেকে সরকার ৫ বার চিনির দাম বেঁধে দিলেও বাজারে তা কার্যকর হয়নি। এ ছাড়া খুচরা বাজারে কোথাও মিলছে না প্যাকেটজাত চিনি। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ঈদের পর থেকে কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিরা অন্য পণ্যের অর্ডার নিলেও চিনি নেই বলে সাফ জানিয়ে দিচ্ছে।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে কোনো কারণ ছাড়াই পিয়াজ, আদা ও রসুনের দাম হু হু করে বাড়ছে। আগে দেশি পিয়াজের কেজি বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। যা এখন বেড়ে হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। একইভাবে আমদানি করা রসুনের কেজি হয়েছে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। আর দেশি রসুনের কেজি ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা। রোজার ঈদের দুই-এক দিন পরও চীনা রসুনের কেজি ছিল ১৩০ টাকার আশপাশে। আর দেশি রসুন বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়। পাশাপাশি দর বেড়েছে আদার। দেশি আদা ২০০ থেকে ২২০ এবং আমদানি করা চীনা আদার কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ঈদের আগেও দেশি আদা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা এবং আমদানি করা আদার দাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে ছিল।
বিক্রেতা রাজিব বলেন, ঈদের পর ৩৫ টাকা কেজিতে পিয়াজ কিনে বিক্রি করেছি ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। এখন কেনাই পড়েছে ৪৮ টাকা কেজি। খরচসহ ৫২-৫৩ টাকা পড়বে। বিক্রি করছি ৬০ টাকায়। সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে আসা ক্রেতারা বলেন, বাজারে এখন ডাকাতি চলছে। দু’দিন আগেও ৪৫ টাকা কেজিতে পিয়াজ কিনেছি, এখন ৬০ টাকা ছাড়া দিচ্ছে না। আমরা কোন দেশে বসবাস করি! এদিকে ২০ টাকার আলু ৪০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে মোটা চালের দাম কেজিতে প্রায় ২ টাকা বেড়েছে। এই চাল কিনতে এখন ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে বাজারভেদে ৫২ টাকা। বাজারে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৫২ টাকায়। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। সেই হিসেবে এক সপ্তাহে দাম বেড়েছে প্রায় ২ টাকা। বাজারে আটাশ চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গুটি চাল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।
সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, পিয়াজ, রসুন ও আদার দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি পিয়াজের দাম বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি। টিসিবি’র হিসাবে, প্রতি কেজি দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৮০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশি রসুনের দাম ১৯ শতাংশ বেড়েছে। আদার দাম বেড়েছে ৯.২৫ শতাংশ।
অন্যদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে চিনির দাম বেড়েছে ৮.১৬ শতাংশ। ডিম (ফার্ম) প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৪৭ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে ৪.৫৫ শতাংশ। এ ছাড়া মোটা চাল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৫০ টাকায়। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। সেই হিসেবে এক সপ্তাহে দাম বেড়েছে ১ টাকা বা ১.০৫ শতাংশ।
এদিকে বাজারে ঈদের মধ্যে বেড়ে যাওয়া ব্রয়লার মুরগির দাম কমেনি। বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে। সোনালি মুরগির কেজি ৩২০ থেকে ৩৩০ টাকা। এর সঙ্গে গত দু’দিন ধরে বাড়ছে ডিমের দাম। ১০ টাকা বেড়ে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। এ ছাড়া বাজারে ঈদের পরে আলুর দাম উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। সারা বছরই স্থিতিশীল থাকলেও মৌসুমের শুরুতে আলুর অস্থিতিশীল বাজারকে অস্বাভাবিক মনে করছেন ক্রেতারা। দফায় দফায় দাম বেড়ে খুচরা বাজারে আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা, যা ঈদের আগে ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে ছিল। আর গত বছরের এ সময় আলুর দাম ছিল ১৬ থেকে ২০ টাকা।
কাওরান বাজারের ক্রেতা সোহাগ হোসেন বলেন, এ বছর দেশে আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। অথচ হঠাৎ করে সবজি জাতীয় পণ্যটির দাম বেড়ে গেছে। এটা ব্যবসায়ীদের কারসাজি। যা দেখার কেউ নেই। ওদিকে বাজারে সবজির দামও অনেক চড়া। পেঁপের কেজিও ৬০ টাকায় ঠেকেছে। এ দামের নিচে কোনো সবজি মিলছে না। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, করলা প্রতি কেজি ৮০-১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০-৭০ টাকা, পটোল ৫০-৮০ টাকা, শজনে ১২০-১৪০ টাকা, বেগুন ৬০-৮০ টাকা, বরবটি ৮০-১০০ টাকা, কাঁকরোল ৬০-৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সবজির বিক্রেতা হোসেন আলী বলেন, সারা দেশে বৃষ্টিবাদল হচ্ছে না এ জন্য সবজির সরবরাহ কম। আর এ বছর সবজির আবাদও কম হয়েছে বলে জানি।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়