সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ গ্রহণের আগে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে ‘ধীরে চলো নীতি’ গ্রহণ করেছে বিএনপি। কে এম নুরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে। ফলে, ভেতরে-ভেতরে অনানুষ্ঠানিকভাবে অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে নতুন ইসি গঠন নিয়ে আলোচনা শুরু করলেও প্রক্রিয়াটি এখনই দৃশ্যমান করছে না বিএনপি। আর এ কারণে এখনও স্থায়ী কমিটির আলোচ্যসূচিতে জায়গা পায়নি ইস্যুটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, আগামী বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি বর্তমান হুদা কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে। নতুন কমিশন গঠনে ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে আগের মতো ‘সার্চ কমিটি’ গঠনের ইঙ্গিত এসেছে। আর এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের পক্ষ থেকে প্রকাশ্য কোনও বক্তব্যও আসেনি। এ কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই ইস্যুটি নিয়ে অভ্যন্তরীণ কাজ গোছাচ্ছেন বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা।
বিরোধী অন্তত চারটি দলের প্রধানরা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, বিএনপির পক্ষ থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে চিন্তাবিনিময় শুরু হয়েছে। বিশেষ করে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ‘নতুন নির্বাচন কমিশন’ গঠনের বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বৃহৎ রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার পক্ষে দলটির শীর্ষনেতৃত্ব। আর এ লক্ষ্যে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে অপরাপর বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যে পৌঁছাতে চায় বিএনপি।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম নেতা ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে বিএনপির আনুষ্ঠানিক কোনও আলোচনা হয়নি। তবে নির্বাচন কমিশন গঠন হচ্ছে দ্বাদশ নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার প্রথম শর্ত। আমরা চাই, স্থায়ী নির্বাচনি ব্যবস্থা। এখনও ইসি গঠনে কোনও আইন হয়নি। অ্যাডহকভিত্তিতে যেভাবে কমিশন গঠন করা হয়েছে, এতে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
সাইফুল হক আরও বলেন, ‘গতবার রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটি গঠন করে দিয়েছিলেন। কিন্তু কী কমিশন গঠিত হয়েছে—সেটা তো পরিষ্কার। এবারও সরকার চাইবে সেভাবে করতে। কিন্তু আমরা এটা চাই না। আমরা দলের অভ্যন্তরে ও জোটগতভাবে বিষয়গুলো আলোচনা করবো। আর বিএনপি প্রস্তাব দিলে সেটিও আলোচনায় উঠবে।’
বর্তমান সরকারবিরোধী একাধিক রাজনৈতিক দলের প্রধান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, বিএনপির পক্ষ থেকে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছেন কয়েকজন নেতা। বিষয়টি সরাসরি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে হওয়ায় অধিকতর সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন এজেন্সি ও নেতাদের সমন্বয়ে নানা প্রক্রিয়া চলমান থাকায় বিএনপিও হিসাব করে উদ্যোগ নিচ্ছে।’
জানতে চাইলে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নিয়োগকৃত কমিশন কোনোভাবেই নিরপেক্ষ হবে না। আমরা চাই, স্বাধীন সাংবিধানিক কমিশন গঠন। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। যে কমিশন নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের আজ্ঞাবহ হবে না। সরকারি দল, বিরোধী দল, সবার প্রতি সমান দায়বদ্ধতা থাকবে তাদের। ইসি স্বাধীন, মানে সংবিধান ও আইনের প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে। এই সরকারের অধীনে আবার ইসি গঠন হলে আবারও হুদা কমিশনের মতো একটি কমিশন হবে। এতে কোনও আস্থার সৃষ্টি করবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা ছাড়াতে হবে। আগামী আরও ৩টি নির্বাচন এভাবে অন্তবর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হবে।’
শনিবার (২৮ আগস্ট) রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন প্রভাবশালী নেতা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে আগামী নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। এখন পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তই আছে দলের। সে ক্ষেত্রে ইসি গঠন প্রক্রিয়ায় বিরোধী দলের এই মানসিকতাও যাচাই করবে বিএনপি। যে দলগুলোতে বর্তমান সরকারপ্রধানের অধীনে নির্বাচনের আন্তরিকতা উঠে আসবে—তাদের এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত না করার পক্ষে হাইকমান্ড।’
গত ২৩ আগস্ট একটি অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ও এ বিষয়টিকে সামনে এনেছেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘সরকার নানাভাবে ফাঁদে ফেলে ২০১৮ সালের মতো নির্বাচনে বিএনপিকে মাঠে নামানোর চেষ্টা করবে। এখন বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখে তারা নির্বাচনে যাবে কি না।’
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়