কক্সবাজারে নতুন পদ্ধতিতে আগাম লবণ চাষ শুরু হয়েছে। চলতি মৌসুমে মাঠে ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় খুশি চাষিরা। বিশেষ করে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার একমাস আগে থেকে লবণ চাষ শুরু হয়েছে। এ কারণে অন্যান্য বছরের চেয়ে একমাস আগে নতুন লবণ বাজারে উঠছে। আগামীতে এ অবস্থা চলমান থাকলে ক্ষতি পুষিয়ে বেশি লাভের স্বপ্ন দেখছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তবে মিল মালিকদের একটি সিন্ডিকেট বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
পেকুয়ার লবণ চাষি ও ব্যবসায়ী সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘এমন আবহাওয়া থাকলে দেশে এবার চাহিদার বিপরীতে লবণের বাম্পার উৎপাদন হবে। সিন্ডিকেট চক্র বিদেশ থেকে লবণ আমদানির কারণে পরপর বেশ কয়েক মৌসুম বিপুল পরিমাণ উৎপাদন করেও লোকসান গুনতে হয়েছে চাষিদের। এবার সবকিছু ঠিক থাকলে চাষিদের মুখে ফুটবে। তবে বরাবরের মতো শিল্প মন্ত্রাণালয় এবং বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের কাছে চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন কম হবে—এমন আগাম মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করতে মরিয়া সিন্ডিকেট চক্র। তারা মূলত দেশে লবণের ঘাটতি দেখিয়ে সোডিয়াম লবণ আমদানির জন্য সব রকমের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। মন্ত্রণালয়কে এটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’
চাষিদের দাবি, সরকার যেন সিন্ডিকেট চাপের মুখে প্রভাবিত না হয়। দেশে যেভাবে লবণ উৎপাদিত হচ্ছে তাতে কোনও ঘাটতি হবে না।
কুতুবদিয়ার লেমশীখালী এলাকার লবণ চাষি নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘নতুন পদ্ধতিতে লবণ চাষ শুরু করেছি আমরা। গত বছর সাগর ও নদী থেকে লবণ পানি নিষ্কাশন করে পলিথিনের মাধ্যমে লবণ উৎপাদন করেছি। কিন্তু চলতি মৌসুমে মাঠে নলকূপ স্থাপনের মাধ্যমে লবণ পানি উত্তোলন করে খুব সহজে লবণ উৎপাদন করছি। তাই অন্যান্য বছরের চেয়ে চলতি বছর দ্বিগুণ লবণ উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখছি আমরা।’
লেমশীখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকতার হোসেন বলেন, ‘কুতুবদিয়ায় নিবন্ধিতসহ ছয় হাজারের বেশি লবণ চাষি রয়েছেন। এসব চাষি দিনরাত পরিশ্রম করে লবণ উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাই চাষিদের কথা চিন্তা করে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি বন্ধ রাখতে হবে।’
কুতুবদিয়ার দক্ষিণ ধুরুং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেন, ‘কুতুবদিয়ার প্রধান কৃষিখাত হচ্ছে লবণ। এই অঞ্চলের শতকরা ৮০ জন লবণ চাষি ও মৎস্যজীবী। এখন লবণ চাষের ভরা মৌসুম। এই মৌসুমে লবণ চাষ করতে গিয়ে চাষিরা পড়েছেন বেকায়দায়। বর্তমানে পলিথিন থেকে শুরু করে লবণ উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত সব উপকরণের দাম বেড়েছে। তাই মাঠপর্যায়ে লবণের মূল্য কম হলে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।’
দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনকেন্দ্রিক এলাকা কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাঁশখালীর কিছু অংশ। এই দুই অঞ্চলের প্রায় ৬৫ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ করেন চাষিরা। এরই মধ্যে গত ২ নভেম্বর মৌসুমের প্রথম দফায় মাঠ থেকে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে।
কক্সবাজার লবণ শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর নভেম্বরের শুরুতে চাষিরা লবণ উৎপাদনে মাঠে নামেন। এ বছর একমাস আগে অক্টোবর থেকে মাঠে নেমেছেন চাষিরা। এবার ৩৭ হাজার চাষি লবণ চাষে নিয়োজিত রয়েছেন। মাঠে উৎপাদন কাজে জড়িত আছেন আরও ৭৫ হাজার শ্রমিক। পরিবহন, লোড-আনলোড এবং মিলপর্যায়ে প্যাকেটিং ও বাজারজাত মিলিয়ে লবণ শিল্পে পাঁচ লাখ মানুষ নিয়োজিত। এ বছর প্রায় ৬৫ হাজার একর জমিতে লবণ চাষের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে চকরিয়া, পেকুয়া, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়া, কক্সবাজার সদর ও টেকনাফ উপজেলা এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা থেকে ২৪ লাখ মেট্রিক লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়