আসন্ন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন কেন্দ্র করে সিদ্ধিরগঞ্জে আবারও আলোচনায় বহুল আলোচিত সাত খুন মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেন। এই নির্বাচনে তার ভাই ও ভাতিজা আলাদা ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর প্রার্থী। নূর হোসেন নির্বাচনী মাঠে সশরীরে উপস্থিত নেই। তবে জেলে বসেই নাড়ছেন কলকাঠি। ভোটার ও তার ভাই-ভাতিজার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেছেন। বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর উদ্বিগ্ন সবাই। সিদ্ধিরগঞ্জে তাই নতুন করে আলোচনায় নূর হোসেন।
সরেজমিনে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এমনটি।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন নূর হোসেন। ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হন তিনি। পরে গ্রেফতার ও বিচারের রায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। বর্তমানে তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার-২ এর কনডেম সেলে আছেন। তার ভাই ও ভাতিজাও কয়েকটি মামলার আসামি।
আগামী ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এর মধ্যে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন নূর হোসেনের ভাতিজা শাহজালাল বাদল (ঠেলাগাড়ি)। এছাড়া লাটিম প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন আলমগীর হোসেন, মিষ্টি কুমড়া নিয়ে মো. ইরান ও ঘুড়ি প্রতীকে তোফায়েল হোসেন। শাহজালাল এই ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর। নিমাইকাশারী, নয়াআঁটি, বাঘমারা, সানারপাড় এলাকা নিয়ে গঠিত ৩ নম্বর ওয়ার্ড।
৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন নূর হোসেনের ছোট ভাই নূর উদ্দিন মিয়া (ঠেলাগাড়ি)। এছাড়া এই ওয়ার্ডে লাটিম প্রতীক নিয়ে আরিফুল হক হাসান, ঘুড়ি নিয়ে নজরুল ইসলাম, ট্রাক্টর প্রতীকে বিল্লাল হোসেন নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। শিমরাইল, আঁটি, উত্তর আজীবপুর (উত্তর অংশ), উত্তর আজীবপুর (দক্ষিণ অংশ) এলাকা নিয়ে ৪ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত।
এই দুটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীদের অভিযোগ, নূর হোসেন কাউন্সিলর থাকাকালে সিদ্ধিরগঞ্জ অপরাধীদের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। এই এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, জমি দখল, খুনসহ নানা অপরাধে জড়িত ছিলেন তিনি। সাত খুনের ঘটনার পর তাকে কাউন্সিলর পদ থেকে বরখাস্তও করা হয়। এখন বিভিন্ন অভিযোগে আরও ছয়টি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে নারায়ণগঞ্জ আদালতে। এরপরও নিজের আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে চাইছেন নূর হোসেন। জেল থেকে ফোন দিয়ে ভাই ও ভাতিজার পক্ষে কাজ করতে বয়োজ্যেষ্ঠদের নির্দেশনা দিচ্ছেন। এমন দাগি সন্ত্রাসীর ফোন পেয়ে কাউন্সিলর ও ভোটাররা উদ্বিগ্ন। তাদের সবার মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছে।
রোববার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের শিমরাইল ট্রাকস্ট্যান্ড সংলগ্ন একটি চায়ের দোকানে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা মমতাজ উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে মাসে কোটি টাকা আয় করতেন নূর হোসেন। তার সঙ্গে আরও অনেক সন্ত্রাসী জড়িত ছিল। কেউ তাদের অপরাধ কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার সাহস পেতো না। তিনি জেলে যাওয়ার পর এলাকার মানুষ শান্তিতে আছেন।
মমতাজ উদ্দিনের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল চায়ের দোকানে পাশেই বসা ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা আবু তালুকদার। তিনি বলেন, কাউন্সিলর নির্বাচনে ভাই-ভাতিজাকে বিজয়ী করতে নূর হোসেন জেল থেকে ভোটারদের কল দিচ্ছেন। এমন কথা জানার পর এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সবার একই প্রশ্ন, জেলে থেকে তিনি কীভাবে মোবাইল ব্যবহার করেন। এখন যদি তিনি ছাড়া পান তা হলে তার প্রতিদ্বন্দ্বীদের কারও অস্তিত্ব থাকবে না।
নূর হোসেন যে কয়েকজনকে কল দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে উত্তর আজীবপুরের এক বয়োজ্যেষ্ঠ ভোটার রয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ভোটার বলেন, নূর হোসেন কাউন্সিলর থাকা অবস্থায়ই তার সঙ্গে পরিচয় ছিল। তবে কখনো তার সন্ত্রাসী কার্যক্রমকে সমর্থন করিনি। এখন জেল থেকে নূর হোসেন মোবাইলে তার ভাই-ভাতিজার জন্য ভোট চাইছেন। নূর হোসেন বলেছেন, তিনি ২০২৩ সালে জেল থেকে মুক্তি পাবেন। যেভাবেই হোক তার ভাই-ভাতিজাকে বিজয়ী করতে হবে।
৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আরিফুল হক হাসান জাগো নিউজকে বলেন, সিটি করপোরেশনের তফসিল ঘোষণার পর এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবেই নির্বাচনের কার্যক্রম চলছিল। কিন্তু নূর হোসেন ভোটারদের কল দেওয়ায় অনেক ভোটার ভয় পেয়েছেন। প্রকাশ্যে নিজ পছন্দের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার চালাতে সাহস পাচ্ছেন না।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়