অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ পায়নি ৭৯ শতাংশ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কোনো অর্থ সহায়তাই পায়নি। প্রণোদনা প্যাকেজ সম্পর্কে জানেনই না ১৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের মালিক। আবার যে ২১ শতাংশ প্রতিষ্ঠান প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় অর্থ পেয়েছেন, তাদের মধ্যে ছোট প্রতিষ্ঠান তুলনামূলকভাবে কম। সাম্প্রতিক এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। অন্যদিকে, মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে দেয়া সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থছাড়ের জন্য ঘুষ দাবি করা হয়েছে বলে জরিপকালে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
কভিড-১৯ মহামারীর প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের আস্থা ও প্রত্যাশার ওপর বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে জরিপটি পরিচালিত হয়। গত এপ্রিল থেকে জুনের পরিস্থিতি বিবেচনা করে ৫০১টি প্রতিষ্ঠানের ওপর জুলাইয়ে এ জরিপ চালানো হয়। গতকাল এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জরিপে অংশ নেয়া ২৯ শতাংশ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তাদের কাছে ঘুষ চাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ৪৭ শতাংশ ব্যবসায়ী ঘুষ চাওয়ার প্রশ্নের জবাবে হ্যাঁ বা না কিছুই বলেননি। তাদের মৌনতাকে সম্মতি বলে ধরে নিয়ে ধারণা করা হচ্ছে যে ২৯ শতাংশের বেশি ব্যবসায়ীর কাছেই ঘুষের দাবি এসেছিল।
জরিপের মূল বিষয় ছিল ব্যবসার আস্থা। সানেম বলছে, গত এপ্রিল-জুনে কভিড পরিস্থিতি আগের প্রান্তিকের তুলনায় খারাপ ছিল। তাই ওই প্রান্তিকে ব্যবসায়ীদের আস্থা কমে মাত্র ৪১ শতাংশে নেমে আসে। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে তা ছিল প্রায় ৫৮ শতাংশ। তাহলে কভিডের কারণে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া কেমন ছিল—এমন প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ৬৪ শতাংশ ব্যবসায়ী। তারা মনে করেন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দুর্বল। ২৭ শতাংশ ব্যবসায়ী মনে করেন, মোটামুটি মানের পুনরুদ্ধার হচ্ছে। আর ৯ শতাংশ ব্যবসায়ীর মতে, পুনরুদ্ধারের ধরন শক্তিশালী।
জরিপে দেখা যায়, দেশব্যাপী বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর মৌসুমে ব্যবসা পুনরুদ্ধারের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের আস্থা আগের চেয়ে বেড়েছে। ০ থেকে ১০০ স্কেলে পরিমাপ করা এ জরিপে দেখা গেছে, চলতি বছরের এপ্রিল-জুনে ব্যবসায় আস্থা সূচক (বিসিআই) ৪১ দশমিক ৩৯ শতাংশ থাকলেও জুলাই-সেপ্টেম্বরে তা ৪৯ দশমিক ৭৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
সানেম জানায়, চলতি বছরের এপ্রিলে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর তাদের চতুর্থ ধাপের জরিপে ব্যবসায় আস্থার অবনতি দেখা গিয়েছিল। এবারের জরিপে এ অবস্থার উন্নতি হলেও সামগ্রিক ব্যবসায় আস্থা এখনো ২০২০ সালের জুলাই-সেপ্টেম্বরের চেয়ে কম। ওই সময় বিসিআই ছিল ৫১ দশমিক ৬। ফলে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া যে ধীর, সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট।
এছাড়া ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিক ও প্রতিনিধিদের টিকা প্রাপ্তির বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। জবাবে ৬০ শতাংশ মালিক জানিয়েছেন, তারা কমপক্ষে এক ডোজ টিকা নিয়েছেন। অন্যদিকে কর্মীদের মধ্যে মাত্র সাড়ে ২৫ শতাংশ টিকা পেয়েছেন। ৭৫ শতাংশ কর্মী টিকার একটি ডোজও পাননি। তৈরি পোশাক খাতের কর্মীদের প্রতি পাঁচজনে একজন মাত্র টিকা নিতে পেরেছেন বলেও জরিপে উঠে আসে।
সানেমের পঞ্চম পর্যায়ের জরিপটি দেশের ৩৭ জেলার ৫০১টি ক্ষুদ্র, ছোট, মাঝারি ও বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ওপর চালানো হয়। এজন্য উৎপাদন খাতের ২৫৫টি ও সেবা খাতের ২৪৬টি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে ফোনালাপ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ড. সেলিম রায়হান বলেন, দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের গতি শ্লথ। যেহেতু কভিড সংকট শিগগিরই শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই, সেহেতু নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে সমন্বয় করে ভিন্ন্ন কৌশল ঠিক করতে হবে। ঢাকায় যে ধরনের লকডাউন প্রযোজ্য হবে, রংপুরে সে ধরনের লকডাউন প্রযোজ্য নয়। আবার তৈরি পোশাক খাতের জন্য একধরনের কৌশল লাগবে, অন্যদের ক্ষেত্রে তা হয়তো প্রযোজ্য হবে না। তাই সরকারি-বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কৌশল ঠিক করতে হবে। তিনি বলেন, সবচেয়ে বেশি জোর দিতে হবে টিকাদান কর্মসূচি ও প্রণোদনা প্যাকেজের ক্ষেত্রে। যেহেতু কর্মীদের একটি অংশ এখনো এক ডোজ টিকাও পাননি। তাই যত দ্রুত সম্ভব তাদের টিকাদানের ব্যবস্থা হাতে নিতে হবে। তা না হলে কভিড সংক্রমণ পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে পারে। পাশাপাশি নতুন প্রণোদনা প্যাকেজ দেয়ার আগে সঠিকভাবে যাচাই করে নিতে হবে। যেন যথাযথ প্রতিষ্ঠানের কাছেই এ প্রণোদনা পৌঁছে। এজন্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরো এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়