সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় দুজনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। গতকাল কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল এ রায় ঘোষণা করেন। ঘটনার দেড় বছর পর দেশজুড়ে আলোচিত এ মামলার রায় দেয়া হলো।
রায়ে কক্সবাজার মডেল থানার বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও টেকনাফের বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা পেয়েছেন টেকনাফ থানার এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, এপিবিএনের কনস্টেবল রুবেল শর্মা, সাগর দেব এবং মারিশবুনিয়া গ্রামের মোহাম্মদ আইয়াজ আয়াছ, নুরুল আমিন ও নিজাম উদ্দিন। পাশাপাশি এ ছয়জনকে ৬০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
রায়ে মামলার সাত আসামিকে খালাস দেয়া হয়েছে। খালাসপ্রাপ্তরা হলেন এপিবিএনের এসআই মো. শাহজাহান আলী, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, কনস্টেবল রাজিব হোসেন, বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল ছাফানুল করিম, কনস্টেবল কামাল হোসাইন আজাদ ও কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন।
রায় ঘোষণা কেন্দ্র করে সকাল থেকেই কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও মোতায়েন ছিলেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কড়া নিরাপত্তার মধ্যে গতকাল বেলা ২টায় প্রিজন ভ্যানে করে ১৫ আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে নেয়া হয়। রায় ঘোষণার সময় ১৫ আসামিই এজলাসে উপস্থিত ছিলেন।
বেলা আড়াইটায় এজলাসে বসেন বিচারক। আসামিদের নাম ডাকার পর ৩০০ পৃষ্ঠার রায়ের সারসংক্ষেপ পড়তে শুরু করেন তিনি। প্রায় ১ ঘণ্টা সারসংক্ষেপ পড়ার পর ঘোষণা করেন আলোচিত এ মামলার রায়।
রায় ঘোষণার পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) ফরিদুল আলম জানান, তারা রায়ে সন্তুষ্ট। তবে রায়ের কপি হাতে পেলে যাদের খালাস দেয়া হয়েছে তাদের বিষয় বিবেচনা করে দেখা হবে। একই কথা বলেছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী মোহাম্মদ মোস্তফাও। তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী মহিউদ্দিন খান বলেছেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন তারা।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাত ৯টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফে মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ। এ হত্যাকাণ্ড দেশব্যাপী ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে। ঘটনার চারদিন পর ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করা হয়।
চার মাসের বেশি সময় তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীসহ অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-১৫-এর জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে এ হত্যাকাণ্ডকে পরিকল্পিত ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
রায় ঘোষণার পর আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মামলার বাদী ও সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়ার। তিনি বলেন, শুরু থেকেই আমরা বলে আসছি যে মামলার প্রধান দুই আসামি প্রদীপ ও লিয়াকতের সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করতে হবে। সেটাই হয়েছে। সেদিক থেকে প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে। এজন্য আদালতকে ধন্যবাদ জানাই।
তবে সাতজন বেকসুর খালাস পাওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এদের যে একদমই সংশ্লিষ্টতা নেই এমনটি না। এটা সম্ভবও না। কোনো না কোনোভাবে তো তারা সংশ্লিষ্ট ছিলই। দায়বদ্ধতা তো কেউ এড়াতে পারে না। সেক্ষেত্রে তাদের কিছু সাজা হতে পারত। তাহলে প্রত্যাশা আরো বেশি পূরণ হয়েছে বলা যেত। তবে আমরা সন্তুষ্ট সেই দিনই হব যেদিন মামলার রায় কার্যকর হবে। এ মামলার পেছনে যারা তদন্ত করেছেন, যারা আইনি সহায়তা দিয়েছেন, যারা সঙ্গে ছিলেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান শারমিন শাহরিয়ার।
এই বিভাগের আরও খবর
ট্রেন্ডিং
সর্বাধিক পঠিত
- সাতক্ষীরা জেলার দুজন সাংসদকে মন্ত্রী দাবি
- বড় চমক থাকছে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে
- চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করতে শুল্কের পরিমাণ বৃদ্ধি
- একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন বসছে ৩০ জানুয়ারি
- ওয়ালটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডোর হয়েছেন জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি
- ঘুরে আসুন সাদা পাথরের দেশে
- অ্যাশ-ম্যাশের স্বাগত খুনসুটি
- শেখ হাসিনার যত রেকর্ড
- ঘুরে আসুন সিকিম
- ভোটারদের সঙ্গে সালমানের শুভেচ্ছা বিনিময়